‘ওই যে নদীর ওপার দেখতেছেন না? ওই পারে আমাগো বাড়িঘর সব আছিলো, এখন আর কিছুই নাই। আমার এই জীবনে পাঁচবার আমাগো বাড়িঘর নদীর পেটে গেছে। জায়গা-জমি যা ছিল সব শেষ। কত যে না খাইয়া থাকছি হিসাব নাই। যাগো নদীতে সব লইয়া যায়, তাগো তো আর কোনো অস্তিত্ব থাহে না।’
কাঁপা কাঁপা গলায় কথাগুলো বলছিলেন মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার সাহেবরামপুর এলাকার নতুন আন্ডারচর লঞ্চঘাট এলাকার ৭০ বছর বয়সী চান মিয়া। এক সময় তার কয়েক বিঘা ফসলি জমি ও বসতভিটা ছিল। নদীভাঙনে সব কিছু হারিয়ে হয়েছেন একদম নিঃস্ব।
চান মিয়ার মতো একই অবস্থা প্রতিবেশী বজলু সরদার, আতিক আকন ও ওয়াজেদ ফকিরের। তাদের মধ্যে কেউ কেউ পাঁচ থেকে সাতবার নদীভাঙনের শিকার হয়েছেন জীবনে। যতবার নদী ভেঙেছে ততবারই নতুন নতুন জায়গায় গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন তারা।
যেখানেই ঘরবাড়ি তৈরি করে একটু সুখের নীড় গড়েছেন, কদিন যেতে না যেতে নদী সে নীড়টাকেই দখল করে নিয়েছে। চালচুলা হারিয়ে যেতে হয়েছে নতুন কোনো জায়গায়।
এই গল্প কেবল চান মিয়া, আতিক আর ওয়াজেদ ফকিরদেরই নয়, নদীর পাড়ে বসবাসরত অনেকেরই জীবনের সঙ্গে এর মিল রয়েছে।
ওয়াজেদ ফকির বলেন, ‘আমাগো বাড়িটা যেদিন প্রথম ভাইঙ্গা নিল নদীতে, সেদিন বাবা আর আমি হাটে গেছিলাম। আইয়া দেহি বাড়ির অর্ধেকটা শ্যাষ। বাবার লগে হেদিন ঘরের থালা বাসনগুলা খালি বস্তায় ভইরা সরাইয়া নিতে পারছিলাম। আমগাছ, জামগাছ যা আছিলো সব চোখের সামনে ভাইস্যা যাইতে দেখছি। তারপর একে একে নদীতে তিনবার বাড়ি ভাঙছে। এহন সরকারি জায়গায় থাহি।’
সরেজমিন দেখা যায়, উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল সাহেবরামপুর এলাকার নতুন আন্ডারচর লঞ্চঘাট ও উত্তর আন্ডারচর গ্রামের ওপর দিয়ে বয়ে গেছে আড়িয়াল খাঁ নদ। বছরের পর বছর আড়িয়াল খাঁর তাণ্ডবে বিলীন হয়ে গেছে হাজারো বাড়িঘর।
চলতি বছর নতুন করে আড়িয়াল খাঁ নদের ভাঙনে শেষ হয়েছে দুই শতাধিক বসতঘর। এ ছাড়াও একটি গ্রামীণ সড়কের ৫০০ মিটার অংশ নদীর ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। নতুন করে ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে লঞ্চঘাট এলাকার আরও শতাধিক পরিবার।
মাদারীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী শুভ সরকার বলেন, কালকিনি সাহেবরামপুর আড়িয়াল খাঁ নদ এলাকায় আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে ভাঙন কবলিত এলাকায় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সব প্রস্তুতি নিয়েছি। আমি সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখেছি।
কালকিনি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাইফ উল আরেফিন বলেন, লঞ্চঘাট এলাকায় ভাঙন কবলিত লোকজনের তালিকা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শিগগির তাদের সহযোগিতা করা হবে। এ ছাড়া চলতি অর্থবছরে পুরো ইউনিয়নে ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতা করা হবে।
মন্তব্য করুন