সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা সাড়ম্বরে উদযাপিত হচ্ছে। দিনভর বাদ্য বাজনা, নানা আচার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পূজারিরা মণ্ডপে-মণ্ডপে শারদীয় দুর্গোৎসব উদযাপন করছেন। তবে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের আগে এই পূজা উদযাপন রাজনৈতিক অঙ্গনে ভিন্ন মাত্রা পেয়েছে।
মন্দির-মণ্ডপে সৌহার্দ ও সম্প্রীতির বার্তা পৌঁছে দিচ্ছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। পাশাপাশি আর্থিক অনুদান, মণ্ডপ পরিদর্শন, শুভেচ্ছা ও কুশলবিনিময়ের মধ্য দিয়ে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের আস্থা অর্জনে মরিয়া বিভিন্ন দলের নেতারা। লক্ষ্য নির্বাচনে হিন্দু সম্প্রদায়ের ভোট টানা। এরই মধ্যে বিএনপি, জামায়াত, জাতীয় নাগরিক পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা ও স্থানীয় সম্ভাব্য সংসদ সদস্য প্রার্থী ছাড়াও বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা পূজামণ্ডপে এসে কুশল বিনিময় করছেন, তুলে দিচ্ছেন উপহার ও অনুদান।
জানা গেছে, প্রতি বছরের ন্যায় এবারও গাজীপুরে ৪৫২টি পূজামণ্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপিত হচ্ছে। পুলিশ প্রশাসন, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা ও পূজা উদযাপন পরিষদ পূজা সুন্দর ও সার্থক করার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। অসাম্প্রদায়িক চেতনা ধারণ করে গাজীপুরে সুন্দরভাবে পূজা উদযাপিত হবে বলে আশা আয়োজকদের। সার্বজনীন পূজা উদযাপন সফল করতে জেলা ও মহানগর বিএনপির নেতারা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে মণ্ডপে-মণ্ডপে পূজারিদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করছেন। তুলে দিচ্ছেন উপহার ও অনুদান।
গত শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) গাজীপুরের কৃপাময়ী কালী মন্দিরে উপহার তুলে দেন গাজীপুর মহানগর বিএনপির সভাপতি শওকত হোসেন সরকার। গাজীপুর মহানগর পূজা উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক পাপ্পি দের সঞ্চালনায় শুভেচ্ছা উপহার অনুষ্ঠানে গাজীপুর মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাড. আব্দুস সালাম, গাজীপুর মহানগর বিএনপির সাবেক সহসভাপতি অ্যাড. সিদ্দিকুর রহমান, গাজীপুর কৃপাময়ী কালী মন্দিরের সভাপতি শ্যামল চন্দ্র পালসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
উপহার বিতরণ শেষে গাজীপুর মহানগর বিএনপির সভাপতি শওকত হোসেন সরকার বলেন, ‘বাংলাদেশ বহুধর্মের মানুষের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের দেশ। আমরা চাই প্রত্যেক উৎসব সবার জন্য আনন্দময় হয়ে উঠুক। দেশের চলমান সংকটে এই উৎসব মানুষের মাঝে ঐক্য, সাম্য ও সম্প্রীতির বার্তা ছড়িয়ে দিক।’
এর আগে নাওজোড় এলাকায় আলেকজান বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ মিলনায়তনে বাসন মেট্রো থানা পূজা উদযাপন কমিটির উদ্যোগে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। বাসন মেট্রো থানা বিএনপির সভাপতি মো. তানভীর সিরাজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার মো. রবিউল হাসান। অনুষ্ঠানে বাসন মেট্রো এলাকার ১৭টি পূজামণ্ডপের পূজা কমিটি সদস্য ও পূজারীরা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় বাসন থানা বিএনপির সভাপতি তানভীর সিরাজের পক্ষ থেকে থানা এলাকার প্রতিটি মণ্ডপে অনুদান দেওয়া হয়। সোমবার কৃপাময়ী কালী মন্দিরে মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এম মঞ্জুরুল করিম রনির পক্ষে অনুদান তুলে দেন বিএনপি নেতারা।
এ ছাড়া গত রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী গাজীপুর মহানগরের আমির ও কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য অধ্যাপক জামাল উদ্দীনের নেতৃত্বে পূজা মণ্ডপগুলোতে সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে খোঁজখবর নেওয়া হয়। এ সময় মাধববাড়ি শ্রীশ্রী গৌরাঙ্গ মন্দির, মধ্য ছায়াবিথী পূজামণ্ডপ, কৃপাময়ী কালীবাড়ি পূজা মণ্ডপ ও শিববাড়ি পূজামণ্ডপসহ বিভিন্ন ঘুরে দেখেন এবং প্রতিটি মণ্ডপ পরিচালনা কমিটির নেতাদের সঙ্গে পূজার সার্বিক প্রস্তুতি ও নিরাপত্তা বিষয়ে খোঁজখবর নেন। এ সময় কেন্দ্রীয় কৃপাময়ী কালি মন্দিরের সভাপতি শ্যামল চন্দ্র পাল, সাধারণ সম্পাদক বাপ্পি দেসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দরা উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় মহানগর আমির অধ্যাপক জামাল উদ্দীন বলেন, ‘ইসলাম শান্তি, সহনশীলতা ও মানবকল্যাণের শিক্ষা দেয়। ভিন্ন ধর্মের মানুষও আমাদের ভাই। তাদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান শান্তিপূর্ণভাবে পালিত হওয়া আমাদেরও দায়িত্ব। আমরা চাই দুর্গাপূজার মতো বড় উৎসব যেন নির্বিঘ্নে ও উৎসবমুখর পরিবেশে সম্পন্ন হয়।’
শুধু মহানগর নয়, জেলার বিভিন্ন পূজামণ্ডপেও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
স্থানীয় নেতাকর্মীরা বলছেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর আগামী সংসদ নির্বাচন দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আর নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ, সব সম্প্রদায়ের ভোটাধিকার প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য রাজনৈতিক দলগুলো সব সম্প্রদায়ের লোকজনের সমর্থন আদায়ে নানা কৌশল অবলম্বন করেছেন।
স্থানীয়রা জানান, শারদীয় দুর্গোৎসব ঘিরে প্রতিটি পূজামণ্ডপে সাজ সাজ রব পড়েছে। এতে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পাশাপাশি বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীদের উপস্থিতি উৎসবকে সার্বজনীন করে তুলেছে। অনেক দলের নেতাদের বড়বড় ব্যানার, ফেস্টুনে শারদীয় দুর্গোৎসবের শুভেচ্ছা বিনিময় করতে দেখা গেছে যা বিগত বছরগুলোতে দেখা যায়নি। এটা হিন্দু সম্প্রদায়ের ভোট নেওয়ার কৌশল হতে পারে। তবে শুধু ভোটের মাঠে নয়, হিন্দু-মুসলমান সম্প্রীতি যেন সারা বছর বিদ্যমান থাকে এমন দাবি করেন স্থানীয় লোকজন।
এ বিষয়ে গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপকমিশনার মহিউল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, ‘আসন্ন দুর্গোৎসব উপলক্ষে আমরা প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা পরিকল্পনা সাজিয়েছি। মন্দিরে আমরা নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছি যাতে কোন দুষ্কৃতকারী প্রতিমা ভাঙচুর বা অন্য কোনো অঘটন ঘটাতে না পারে। প্রতিটি মণ্ডপে সিসি ক্যামেরার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়া পূজা উদযাপন পরিষদের নেতা, সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলে করণীয় ও বর্জনীয় ঠিক করেছি।
তিনি আরও বলেন, নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার জন্য আলাদা কন্ট্রোল রুম থাকছে। পুরুষ ও নারীদের আলাদাভাবে প্রবেশ ও বহির্গমনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সার্বক্ষণিক আনসার সদস্য ও টহল পুলিশ দায়িত্ব পালন করবেন। আশা করি এবার শান্তিপূর্ণভাবে পূজা উদযাপিত হবে।
মন্তব্য করুন