

দেশে-বিদেশে চাহিদা বাড়লেও কাঁচা মাছের অভাবে এ বছর পাবনায় শুঁটকি উৎপাদন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। চলনবিল ও গাজনার বিলের পানি শুকানোর আগেই এবার খামারিরা শুঁটকি উৎপাদন শুরু করেছে।
তবে চায়না দুয়ারি ও কারেন্ট জালের কারণে খাল-বিলে দেশি মাছের প্রজনন ব্যাহত ও পর্যাপ্ত মাছ না পাওয়ায় শুঁটকি উৎপাদন হুমকির মুখে পড়েছে। এ বছর পাবনায় শুঁটকি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫০ টন, যা গত বছর ছিল ২০০ টন।
জানা যায়, চলনবিল ও গাজনার বিল পাড়ে গড়ে উঠেছে দুই শতাধিক অস্থায়ী শুঁটকির চাতাল। চাটমোহর, সুজানগর, সাঁথিয়া, বেড়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এ শুঁটকি উৎপাদন করা হয়। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এ শুঁটকি সৈয়দপুর ও ভাঙ্গার মতো বড় বাজার হয়ে বিশ্বের অন্তত ২০টি দেশে রপ্তানি হয়।
যুক্তরাষ্ট্র, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছে এ শুঁটকির বিশেষ কদর রয়েছে। শুঁটকি মানভেদে ‘এ’, ‘বি’ ও ‘সি’ গ্রেডে বাছাই করা হয়, যার মধ্যে ‘এ’ গ্রেডের শুঁটকিই রপ্তানি হয়। এ ছাড়া এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত রয়েছে জেলার প্রায় তিন হাজার নারী-পুরুষ শ্রমিকের জীবন-জীবিকা।
চলতি মৌসুমে পাবনা, নাটোর ও সিরাজগঞ্জের চলনবিল-অধ্যুষিত এলাকার অধিকাংশ শুঁটকির চাতালই বন্ধ রয়েছে। পানি শুকিয়ে যাওয়ায় এবং কাঁচা মাছের সংকটের কারণে অনেক ব্যবসায়ী এবার চাতালই স্থাপন করেননি। যারা চাতাল স্থাপন করেছেন, তারাও মাছের অভাবে কার্যক্রম বন্ধ রাখতে বাধ্য হচ্ছেন। আগে এ সময়ে চলনবিলের মহিষলুটি-দিলপাশার-সিংড়া-উল্লাপাড়ার এলাকাগুলোয় সড়ক দিয়ে যাওয়ার সময় শুঁটকির গন্ধ ভেসে আসত, এ বছর সে এলাকাগুলোয় নেমে এসেছে স্তব্ধতা।
স্থানীয় শুঁটকি ব্যবসায়ীরা জানান, পানি কমতে শুরু করলে সাধারণত জেলেদের জালে ধরা পড়ে পুঁটি, খলসে, ট্যাংরা, শিং, মাগুর, চিংড়ি, শোল, গজারসহ নানা জাতের মাছ। সেই মাছ শুকিয়ে সরবরাহ করা হতো দেশের সৈয়দপুর, ভাঙ্গা, নীলফামারীসহ বড় বাজারে, এমনকি রপ্তানি হতো অন্তত ২০টি দেশে। কিন্তু এবার বিলগুলো প্রায় শুকিয়ে পর্যাপ্ত মাছ মিলছে না। মৌসুমের শুরুতে চায়না দুয়ারি জালে মা মাছ নিধনে সংকট আরও প্রকট হয়েছে। যে যৎসামান্য মাছ পাওয়া যাচ্ছে, তার দাম এত বেশি যে, ব্যবসায়ীরা লোকসানের আশঙ্কায় উৎপাদন কমাচ্ছেন।
মহিষলুটি এলাকার শুঁটকি ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম জানান, আগে দিনে প্রচুর মাছ শুকানো যেত, কিন্তু এ মৌসুমে অনেকেই টানা দুই সপ্তাহেও কোনো মাছ পাননি। অনেকের চাতাল পুরোপুরি বন্ধ। চলনবিল এলাকার অপরিকল্পিত পুকুর খনন, অবৈধ জাল স্থাপন এবং অবাধ শিকার— সব মিলিয়ে অঞ্চলটি দ্রুত মাছশূন্য হয়ে পড়ছে।
চাটমোহর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আব্দুল মতিন কালবেলাকে জানান, চায়না দুয়ারির প্রভাবে মাছ কমছে, আর নদ-খালের স্বাভাবিক প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করায় ধরা পড়া মাছ দ্রুত বাইরে চলে যাচ্ছে। শুঁটকি ব্যবসায়ীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হলেও কোনো প্রণোদনা না থাকায় শিল্পটি রক্ষা করাও কঠিন হয়ে পড়ছে।
পাবনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা দিপক কুমার পাল কালবেলাকে বলেন, এ বছর জেলায় শুঁটকি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ১৫০ টন নির্ধারণ করা হয়েছে। গত মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২০০ টন, যা শেষ পর্যন্ত অর্জিত হয়েছিল। কিন্তু এবার চাটমোহরের চলনবিল এলাকায় সুতি জাল বসাতে না দেওয়ায় মাছের আরোহণ কমেছে। ফলে উৎপাদন কমার আশঙ্কায় লক্ষ্যমাত্রা নামিয়ে আনা হয়েছে ১৫০ টনে। যদিও পুরোপুরি অর্জন কঠিন, তবুও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি পৌঁছাবে আশা করছি।
মন্তব্য করুন