মিরসরাইয়ে বখাটেদের ভয়ে চার মাস পর রোববার সকালে মায়ের সঙ্গে স্কুলে যায় সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী। তবে মেয়েকে স্কুলে দিয়ে বাড়ি ফেরার পথে মায়ের গতিরোধ করায় মঘাদিয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের তিন নেতাসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, এ ঘটনায় ওই ছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে ৫ জনকে আসামি করে মিরসরাই থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। পরে রোববার (১৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে অভিযান চালিয়ে মামলার ৪ আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তাররা হলেন মঘাদিয়া ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের গজারিয়া এলাকার এতিম উল্লাহ হাজী বাড়ির মৃত মোশারফ হোসেনের ছেলে এমরান হোসেন বাদশাহ প্রকাশ শুভ (২০), মুরাদ আলী মিয়া বাড়ির ওসমান গণির ছেলে ও মঘাদিয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগে সহসম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন সাগর (২১), মহসিন আলী মেম্বার বাড়ির মো. দুদু মিয়ার ছেলে ইউনিয়ন ছাত্রলীগের গণশিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক মো. শামছুদ্দিন প্রকাশ সালমান (২০), নসরত আলী হাজি বাড়ির নুজরুল ইসলামের ছেলে ও ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সহসম্পাদক রিফাত হোসেন (২০)। আসামিদের মধ্যে এতিম উল্ল্যাহ হাজী বাড়ির ওমর ফারুকের পুত্র মো. সবুজ (২৩) পলাতক রয়েছে।
জানা গেছে, চলতি বছরের ১২ মে বিদ্যালয় থেকে বাড়ি ফেরার পথে সাধুরবাজার এলাকায় সবুজ (২১) ও শুভ (১৯) নামের দুই বখাটে মলিয়াইশ উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির তানিয়া (ছদ্মনাম) ছাত্রীকে জোর করে গাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় চুল ধরে টানাটানির একপর্যায়ে ওই ছাত্রীর মাথার স্কাফ খুলে ফেলে তারা। গাড়িতে তুলতে ব্যর্থ হওয়ার পর গাড়ি দিয়ে চাপা দেওয়ারও চেষ্টা করে তারা। পরে শিক্ষার্থীদের চিৎকারে স্থানীয়রা এগিয়ে এলে বখাটেরা গাড়ি নিয়ে পালিয়ে যায়। তখন সহপাঠীরা ওই শিক্ষার্থীকে বাড়ি নিয়ে যায়।
এ ঘটনায় ওই দিন বিকালে মিরসরাই থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেন ভুক্তভোগী কিশোরীর বাবা বেলায়েত হোসেন। অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ সবুজ নামের একজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠায়। এ ছাড়া অন্যজন আদালতে আত্মসমর্পণ করে। পরে জামিনে বের হয়ে সবুজ ও শুভ দলবল নিয়ে বাড়ির আশপাশে এসে ঘরের চালে ঢিল ছোড়ে এমনকি মেয়েকে তুলে নেওয়ারও হুমকি দেয়। বখাটেদেরে এমন উৎপাতের কারণে ভয়ে দীর্ঘ ৪ মাস স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেয় ওই কিশোরী। এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর উপজেলা প্রশাসন স্কুলে যাওয়ার জন্য মেয়ের বাড়িতে গিয়ে আশ্বাস দেয়। পরে রোববার মায়ের সঙ্গে স্কুলে যায়।
কিশোরীর বাবা বেলায়েত হোসেন বলেন, প্রশাসনের আশ্বাসে আমার স্ত্রী (কিশোরীর মা) রোববার সকালে মেয়েকে নিয়ে স্কুলে যায়। মেয়েকে স্কুলে দিয়ে বাড়ি ফেরার পথে সকাল সাড়ে ১০টায় মঘাদিয়া ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের সাধুর বাজার পুরাতন সিএনজি স্ট্যান্ডে মামলার ১নং ও ৫নং আসামিসহ অজ্ঞাত ৪ থেকে ৫ জন পূর্বপরিকল্পিতভাবে আমার স্ত্রীর গতিরোধ করে। এ সময় তারা ১ ও ৫ নং আসামির বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন মামলা তুলে নেওয়ার জন্য ভয়ভীতি ও প্রাণনাশের হুমকি প্রদর্শন এবং মার্ডার (খুন) করলে এক মাসের মধ্যে জামিন পাওয়া যায় বলে তারা বলাবলি শুরু করে। তাদের বিরুদ্ধে থানায় কিংবা আদালতে মামলা করলে আমার স্ত্রীসহ আমার মেয়ে ও আমাদেরকে হত্যার করার হুমকি দেয়। বিষয়টি আমার স্ত্রী আমাকে জানালে তাৎক্ষণিক আমি স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের অবহিত করি।
এই বিষয়ে মলিয়াইশ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বলেন, কিছু বখাটে স্কুলের সপ্তম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে দীর্ঘদিন ধরে উত্ত্যক্ত করে আসছে। এ ঘটনায় পুলিশ দুজনকে আটক করে আদালতে প্রেরণ করলেও তারা আবার জামিনে এসে ওই শিক্ষার্থীর পরিবারকে হুমকি দিয়ে আসছে। এই ভয়ে মেয়েটি দীর্ঘ ৪ মাস যাবৎ স্কুলে আসা বন্ধ করে দেয়। এরপর গত বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলা প্রশাসনকে নিয়ে ওই শিক্ষার্থীর বাড়িতে গিয়ে তাকে আবার স্কুলে আসার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। প্রশাসনের আশ্বাসে বোববার আবার যথারীতি স্কুলে আসে মাকে নিয়ে। ওই শিক্ষার্থীর মা স্কুলে মেয়েকে দিয়ে বাড়ি যাওয়ার পথে ওরা আবার তার গতিরোধ করে। খবর পেয়ে পুলিশ ৪ জনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।
মিরসরাই উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক একরামুল হক সোহেল বলেন, ‘আমি থানা প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি, এমন ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত আছে তাদের আটক করার জন্য। যারা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের দায়িত্বে আছে তাদের বিষয়ে উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মঘাদিয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি আবু নছর রিপন বলেন, গ্রেপ্তারকৃত চারজনের মধ্যে তিনজন ইউনিয়ন ছাত্রলীগের কমিটিতে রয়েছে। যদি অপকর্ম করে এটা তাদের ব্যক্তিগত বিষয়। এটির দায় সংগঠন বহন করবে না। বিষয়টি তদন্ত করে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মিরসরাই থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. কবির হোসেন বলেন, বখাটেদের ভয়ে দীর্ঘ ৪ মাস পরে মলিয়াইশ স্কুলের এক শিক্ষার্থী প্রশাসনের আশ্বাসে রোববার সকালে তার মায়ের সাথে স্কুলে যায়। মেয়েকে স্কুল দিয়ে বাড়ি ফেরার পথে মামলার ১নং ৫নং আসামি শিক্ষার্থীর মায়ের গতিরোধ করে হুমকি দেয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে ৪ জনকে আটক করে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।
মন্তব্য করুন