

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে শ্রদ্ধা নিবেদনকে কেন্দ্র করে বরিশালে বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে চরম উত্তেজনা এবং হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। রোববার (১৪ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে বরিশাল জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে ৭১-এর শহীদ বেদিতে এই ঘটনা ঘটে। এ সময় শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য আনা ফুলের তোড়া ভেঙে ফেলার অভিযোগ ওঠে।
এ ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন মহানগর বিএনপির একাংশের নেতৃত্ব দেওয়া মহানগর বিএনপির ১ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক আফরোজা খানম নাসরিনসহ ৬ জন। তাদের উদ্ধার করে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এ ঘটনায় আহত অন্যরা হলেন- আফরোজা খানম নাসরিনের অনুসারী মরিয়ম বেগম, রিনা আক্তার, নুরুল ইসলাম, মো. আলাউদ্দিন ও মো. ইউনুস।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এবং আহতরা জানান, বরিশাল-৫ (সদর) আসনে ধানের শীষের মনোনীত প্রার্থী ও বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার মহানগর বিএনপির ব্যানারে দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে শহীদ বেদিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির বরিশাল বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস আক্তার জাহান শিরিন, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান খান ফারুক, সদস্য সচিব জিয়াউদ্দিন সিকদারসহ মহানগর বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের বর্তমান এবং সাবেক নেতাকর্মীরা। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তারা শহীদ বেদি ত্যাগ করছিলেন।
একই সময় মহানগর বিএনপির ব্যানারে নিজের অনুসারীদের নিয়ে আলাদাভাবে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য শহীদ বেদিতে র্যালি নিয়ে প্রবেশ করছিলেন মহানগর বিএনপির ১ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক আফরোজা খানম নাসরিন। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে ধাক্কাধাক্কিকে কেন্দ্র করে বাগবিতণ্ডা শুরু হয়। এ নিয়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
একপর্যায় মজিবর রহমান সরোয়ার অনুসারীরা অপর গ্রুপের নেত্রী নাসরিনের ওপর চড়াও হয়ে তাকে হেনস্তা করে। তিনি সাথে নিয়ে আসা ব্যানার ছিঁড়ে ফেলে এবং শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য আনা ফুলের তোড়াও ভেঙে ফেলা হয়। পরে ভাঙা ফুলের তোড়া দিয়েই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি বেদিতে শ্রদ্ধা জানান নাসরিনসহ তার অনুসারীরা।
মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আফরোজা খানম নাসরিন বলেন, ‘গত ১৭ বছর ধরে আমি রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম করেছি। অথচ গত দেড় বছর ধরে মহানগর বিএনপি কোনো কর্মসূচিতে আমাকে ডাকে না। আমি কেন্দ্রে পর্যন্ত বিষয়টি জানিয়েছি।’
তিনি বলেন, রোববার শহীদ বুদ্ধিজীবি দিবসের কর্মসূচিতেও আমাকে ডাকা হয়নি। এ কারণে আমি পূর্বের ন্যায় আলাদাভাবে র্যালি নিয়ে শহীদ বেদিতে শ্রদ্ধা জানাতে যাই। শহীদ বেদির গেটে প্রবেশের সময় আমিসহ আমার লোকজনের ওপর অতর্কিত হামলা করা হয়। এ সময় হামলাকারীদের পেছনে মজিবর রহমান সরোয়ার সাহেবও ছিলেন। হামলায় অসংখ্য নেতাকর্মী আহত হয়েছে। এদের মধ্যে গুরুতর অবস্থায় আমিসহ ছয়জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। এ ঘটনায় আইনি এবং সাংগঠনিক প্রক্রিয়ায় যাবেন বলে জানান নাসরীন।
তবে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও সদর আসনে ধানের শীষের মনোনীত প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ার। তিনি বলেন, প্রথমত শহীদ বেদি যেখানে অবস্থিত সেখানে জায়গাটা খুব ছোট। তার মধ্যে আমরা শ্রদ্ধা জানিয়ে ফেরার সময় নাসরিন মিছিল নিয়ে ঢুকে পড়েছে। সে একটু পরেও যেতে পারত। তা না করে ঠেলাঠেলি করে ঢুকতে গিয়ে একটু ধাক্কাধাক্কি হয়েছে।
তিনি বলেন, আমাদের সঙ্গে মহানগর বিএনপির সব পর্যায়ের নেতারা ছিলেন। সেখানে নাসরিন একজন যুগ্ম আহ্বায়ক হয়ে একা একটা প্রোগ্রাম করতে পারে। আগেও সে এভাবে করেছে। আমি মনোনয়ন পাওয়ার পর মহানগর বিএনপির সবাইকে নিয়ে বসেছি। কিন্তু ডাকা হলেও একমাত্র নাসরিন আসেনি। সে কেন এমনটা করছে সেটা বুঝতে পারছি না।
ঘটনাস্থলে থাকা কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস আক্তার জাহান শিরিন বলেন, ‘কর্মীদের মধ্যে তুচ্ছ একটি বিষয় নিয়ে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে, যা অনাকাঙ্ক্ষিত। পরে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।’
মন্তব্য করুন