সারাদিনের অফিসের কর্মব্যস্ততা শেষে নিজের একটু ইচ্ছা আর সামান্য শ্রম দিয়েই বাড়ির ছাদে শখের বাগান করে সবাইকে চমক লাগিয়ে দিয়েছেন হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও পৌর প্রশাসক মো.শফিকুল ইসলাম।
গ্রামের উর্বর মাটিতে যে ফুল, ফল কিংবা সবজি বাগান আমরা দেখে মুগ্ধ হই, সামান্য আগ্রহ থাকলে তাকে তুলে আনা সম্ভব বহুতল ভবনের ছাদেও। নিজেদের হাতে চাষ করতে পারেন বিষমুক্ত ফলমূল, শাক-সবজি। মেটানো যেতে পারে আমাদের দৈনন্দিন পুষ্টির চাহিদাও। সেই দৃষ্টান্তই স্থাপন করেছেন এসিল্যান্ড মো.শফিকুল ইসলাম।
সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার বাংলাবাজার ইউনিয়নের বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম পড়ালেখা শেষ করে কর্মজীবন শুরু করেন সিলেটের জালালাবাদ ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড হাইস্কুল এবং জালালাবাদ ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক হিসেবে। ৩৬ তম বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হবার পর ২০১৮ সালের ৩রা সেপ্টেম্বর সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে যোগদান করেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে। সেখান থেকে নোয়াখালী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ২ বছর ১০ মাস দায়িত্ব পালন শেষে ২০২১ সালের ২৬ জুলাই উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) হিসেবে আজমিরীগঞ্জ উপজেলায় যোগদান করেন।
চাকরিতে যোগদানের পর থেকে বসবাস শুরু করেন উপজেলা পরিষদের সরকারি কোয়ার্টারের একটি ফ্ল্যাটে। ছাত্রজীবন থেকে বাগান করার শৌখিন শফিকুল ইসলাম বাসার ছাদে কয়েকটি সবজি গাছের চারা দিয়ে শুরু করেন ছাদ বাগানের। সেই শখের ছাদ বাগান গত দুই বছরে এখন হরেক রকমের সবজি, ফলজ ও ঔষধি গাছে পরিপূর্ণ এক বাগানে পরিনত হয়েছে।
ছাদ বাগানে দেখতে চাইলে সানন্দে আমন্ত্রণ জানান তিনি। সরজমিনে দেখা যায়, ছাদ বাগানটিতে বেগুন, ঝিঙ্গা, শিম, বরবটি, পুঁইশাক, লাউ, কমলা, চাইনিজ লেমন, কুল বড়ই, পেয়ারা, আলু বখারা, ঘৃত কুমারী, গোলাপ, বনফুলসহ অন্তত চল্লিশ প্রজাতির সবজি, ফলজ, ঔষধি ও ফুলের গাছ রয়েছে।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শফিকুল ইসলাম জানান, সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি হবার পর বাড়ির সামনের উঠানের একপাশে ফুলের বাগান দিয়ে শখের বাগান করা শুরু করি আমি। আজমিরীগঞ্জ উপজেলায় যোগদানের পর নিজের বাসার ছাদে কয়েক জাতের সবজির চারা দিয়ে শুরু করি শখের এ ছাদ বাগানের কাজ। অফিস শেষে অবসর সময়ের পুরোটাই ব্যায় করি শখের এ ছাদ বাগানে। নিজ হাতে গাছে পানি দেওয়া, আগাছা পরিস্কারসহ গাছের সব পরিচর্যা করি।
শফিকুল ইসলাম আরও বলেন, নিজের বাড়ির উঠোনে, কিংবা বাসার ছাদে একটু শ্রম দিয়ে সবজি, ফল চাষ করে যে কেউই নিজের পরিবারের চাহিদা পূরণ করতে পারেন। ভবিষ্যতে আমার কৃষি অধিদপ্তরের পরামর্শক্রমে বেশ কয়েকটি সবজি গাছের কলম চারা তৈরি করে সরকারি কোয়ার্টারের খালি জায়গায় রোপন করার ইচ্ছেও রয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. লুৎফে আল মঈজ কালবেলাকে বলেন, এসিল্যান্ডের ছাদ বাগানটা আমি দেখেছি। এটি আসলেই প্রশংসনীয়। সারাদেশেই দিন দিন ছাদ বাগানের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে কৃষি জমি কমে আসছে, যে কেউ ছাদে কিংবা বাড়ির উঠোনে যতটুকু জায়গা আছে তাতে যদি সামান্য শ্রম দিয়ে সবজি, ফল চাষ করেন তবে নিজের পরিবারের চাহিদা পূরণ করতে পারেন। বাগান করা কিংবা এ সংক্রান্ত পরামর্শ ও সহযোগিতা যে কেউ চাইলেই উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর থেকে তা প্রদান করা হবে।
মন্তব্য করুন