রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় বিএনপি ও তার অঙ্গ-সংগঠনের ১৬ নেতাকে দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করেছে দলটি।
বৃহস্পতিবার (৮ জুন) রাজশাহী মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ আলী ঈশা কালবেলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে বুধবার (৭ জুন) রাতে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত আলাদা চিঠিতে ওই ১৬ নেতাকে বহিষ্কার করা হয়।
বহিষ্কারাদেশের ওই চিঠিতে বলা হয়েছে ‘আগামী ২১ জুন অনুষ্ঠিতব্য রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আপনি প্রার্থী হয়েছেন। দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার কারণে ৫ জুন আপনাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আপনি জবাব দেননি, যা গুরুতর অসদাচরণ।’
এতে আরও লেখা হয়, ‘নির্বাচনে প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করে আপনি গত ১৫ বছর ধরে চলমান আন্দোলনে যারা নিপীড়নের শিকার হয়েছেন তাদের আকাঙ্ক্ষা প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। তাই, আপনাকে দলের প্রাথমিক সদস্য পদসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হলো। গণতন্ত্র উদ্ধারের ইতিহাসে আপনার নাম–একজন বেইমান, বিশ্বাসঘাতক ও মীরজাফর হিসেবে উচ্চারিত হবে।’
এর আগে রোববার এই ১৬ জনের নামের তালিকা কেন্দ্রে পাঠায় মহানগর বিএনপি। পর দিন সোমবার তাদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। গত বুধবার সন্ধ্যার পর তাদের আজীবনের জন্য দল থেকে বহিষ্কার করল বিএনপি।
বহিষ্কারাদেশ পাওয়া নেতারা হলেন : নগরীর রাজপাড়া থানা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী বদিউজ্জামান বদি, ১১ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সভাপতি ও কাউন্সিলর প্রার্থী আবু বকর কিনু, শাহমখদুম থানা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি ও ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী মো. টুটুল, শাহমখদুম থানার সাবেক সহসম্পাদক আবদুস সোবহান লিটন, নগর যুবদলের সাবেক সহসভাপতি ও ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী বেলাল হোসেন, একই ওয়ার্ডের প্রার্থী ও নগর যুবদলের সাবেক শ্রমবিষয়ক সম্পাদক রনি হোসেন রুহুল।
এ ছাড়া নগর যুবদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী নুরুজ্জামান টিটু, ২২ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাউন্সিলর প্রার্থী মির্জা রিপন, ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী বোয়ালিয়া থানা (পূর্ব) যুবদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আলিফ আল মাহমুদ লুকেন, মহানগর বিএনপির সাবেক সহসভাপতি ও ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী আনোয়ারুল আমিন আজব, মতিহার থানা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি ও ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী আশরাফুল হাসান বাচ্চু, মহানগর মহিলা দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ৭, ৮ ও ১০ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ড কমিশনার প্রার্থী মুসলিমা বেগম বেলী, বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক ও ৯, ১১ ও ১২ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী আলতাফুন নেসা পুতুল, যুগ্ম সম্পাদক ও ১৩, ১৪ ও ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী সামসুন নাহার, সহসভাপতি ২২, ২৩ ও ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী শাহানাজ বেগম শিখা এবং যুগ্ম সম্পাদক ও ২৫, ২৮ ও ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী আয়েশা খাতুন মুক্তি।
বিএনপির এসব নেতার মধ্যে আবদুস সোবহান লিটন, বেলাল হোসেন, আনোয়ারুল আমিন আজব ও আশরাফুল হাসান বাচ্চু বর্তমান কাউন্সিলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এ ছাড়া অপর দুই নেত্রী মুসলিমা বেগম বেলী ও সামসুন নাহারও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর।
এ বিষয়ে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ আলী ঈশা বলেন, ‘দলের গঠনতন্ত্র ও নির্দেশনা উপেক্ষা করে তারা সিটি নির্বাচনে কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে নির্বাচনে অংশ নেয়ায় তাদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছিল। শুধু একজন নারী কাউন্সিলর নোটিশের জবাব দিয়েছিল যা সন্তোষজনক ছিল না। বাকিরা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নোটিশের জবাব দেয়নি। দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে আসন্ন প্রহসনের সিটি নির্বাচনে অংশ নেয়ায় দলের কেন্দ্রীয় কমিটি তাদের দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করেছে।’
মন্তব্য করুন