দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভীর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর লোকজনকে দেওয়া হত্যার হুমকির একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। শনিবার (৬ জানুয়ারি) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ওই ভিডিওতে তাকে বলতে শোনা যায়, কালকে থেকে আমরাও কি মাঠে নেমে যাব মারামারিতে। আমাদের সঙ্গে পারবে না, কিন্তু ২০-৩০ জন মার্ডার হয়ে যাবে।
নেজামুদ্দিন নদভীর এমন বক্তব্যের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে রীতিমতো এখন ভাইরাল।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভিডিওটি গত ২১ ডিসেম্বর রাতের। সেদিন চরতী ইউনিয়নের দক্ষিণ চরতীর কাটাখালী ব্রিজ এলাকায় নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভীর পক্ষে তার স্ত্রী রিজিয়া রেজা চৌধুরী, শ্যালক স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মুহাম্মদ রুহুল্লাহ চৌধুরীসহ সমর্থকেরা গণসংযোগ করছিলেন। এ সময় স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল মোতালেবের (ঈগল) সমর্থকেরা রিজিয়া রেজার গণসংযোগে হামলা করেন। এতে ইউপি চেয়ারম্যান রুহুল্লাহ চৌধুরী, সাতকানিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মান্নানসহ অন্তত ১৮ জন আহত হন।
এ ঘটনার কিছু সময় পর সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিল্টন বিশ্বাস, সাতকানিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শিবলী নোমানসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তখন সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী এ হুমকি দেন।
৫৭ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভীকে বলতে শোনা যায়, ‘এখন কথা হলো যে আপনারা সরকার (ওসি প্রিটন সরকার) সাহেব, শিবলী নোমান (অতিরিক্ত পুলিশ সুপার), ইউএনও (মিল্টন বিশ্বাস) সাহেব, আপনারা আমাকে মোটের মধ্যে একটা কথা বলেন, কালকে থেকে আমরাও কি মাঠে নেমে যাব মারামারিতে। মাঠে নেমে যাব কিনা? আমাদের সঙ্গে পারবে না, কিন্তু ২০-৩০ জন মার্ডার হয়ে যাবে। করব, না আপনারা ব্যবস্থা করবেন?’
এ বিষয়ে আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভীর মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
তার ব্যক্তিগত সহকারী ইসলামুল হক আজাদ বলেন, ‘ওই সময় এমপি সাহেবের স্ত্রীর গণসংযোগে হামলা করা হয়েছিল। প্রশাসন যদি সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার না করে, তাহলে ভোটের দিন স্বতন্ত্র প্রার্থীর লোকজন ২০-৩০টি মার্ডার করতে পারেন। এ কথাই মূলত এমপি সাহেব প্রশাসনের লোকজনকে বোঝাতে চেয়েছিলেন।’
অন্যদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল মোতালেবের প্রধান নির্বাচনী সমন্বয়ক আ ম ম মিনহাজুর রহমান জানান, নদভীর বক্তব্যই প্রমাণ করে ওনি ২০-৩০টি লাশ ফেলার ক্ষমতা রাখেন। যা তিনি ইতোমধ্যে স্বীকারও করেছেন। অর্থাৎ সন্ত্রাসী বা নাশকতা করার সব পরিকল্পনা আছে তার। তাই প্রশাসনকে অনুরোধ করব প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে।
সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিল্টন বিশ্বাস জানান, যেখানেই সমস্যা হয়, সেখানে প্রশাসনের লোক হিসেবে আমাদের যেতে হয়। আমাদের কাজই হলো শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার্থে কাজ করা। সেদিন রাতের ঘটনার পর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে আমরা সেখানে গিয়েছিলাম। এরপর থেকে এলাকায় আর কোনো ঘটনা ঘটেনি। এর চেয়ে বেশি বলার আর কিছু নেই।
মন্তব্য করুন