বিকাশ চন্দ্র প্রাং, নওগাঁ
প্রকাশ : ২২ জানুয়ারি ২০২৪, ০৪:১৯ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

অযত্ম-অবহেলায় কুজাইল জয়কালীবাড়ি মন্দির, বেদখলের শঙ্কা

কুজাইল জয়কালীবাড়ি মন্দির সংস্কারের অভাবে জরাজীর্ণ। ছবি : কালবেলা
কুজাইল জয়কালীবাড়ি মন্দির সংস্কারের অভাবে জরাজীর্ণ। ছবি : কালবেলা

খড়ের পালার স্তূপ, কোথাও বালি, আবার মন্দির সংলগ্ন বসতঘর। এভাবেই যে যার মতো ব্যবহার করছে মন্দিরের জায়গা। বলছি প্রাচীন ঐতিহ্যপূর্ণ কুজাইল বারোয়ারি জয়কালীবাড়ি মন্দিরের কথা। যেখানে সারা বছর জয়কালী মাতার পূজার্চনা হয়ে থাকে। অথচ এখনও সেখানে লাগেনি উন্নয়নের বা আধুনিকতার ছোঁয়া। এ ছাড়া নেই কোনো সীমানা প্রাচীর। তারপরও প্রাচীন ঐতিহ্য ধরে রাখতে সনাতন ধর্মাবলম্বীসহ এলাকাবাসীর সহায়তায় কোনো মতে জয়কালী মাতার পূজার্চনা করে যাচ্ছে বর্তমান কমিটি।

প্রাচীন ওই মন্দিরটি নওগাঁ জেলার রাণীনগর উপজেলার কুজাইল বাজারে ছোট যমুনা নদীর পাশে অবস্থিত। এদিকে যে কোনো সময় ফাঁকা জায়গাগুলো বেদখলের আশঙ্কা করছেন মন্দির কমিটির লোকজন।

জানা যায়, উপজেলার কাশিমপুর ইউনিয়নের চক কুজাইল মৌজায় কুজাইল বাজারে ৬৩ শতক জমি নিয়ে দেবালয় স্থানটি। যা একটি ঐতিহ্যপূর্ণ হিন্দু সর্বজনীন কালিবাড়ি। দেবালয় স্থানে সাবেক হিন্দু রাজপুরুষরা যথানিয়মে জয়কালী মাতার পূজার্চনা, সেবাকার্যাদি ও দেবমূর্তির নিয়মিত ভোগরাগ প্রতিপালন করেছেন। সেই সুবাধে সাবেক হিন্দু রাজবাহাদুর শ্রীঅন্নদা প্রসন্ন লাহিড়ি সেবাইত হিসেবে ওই মৌজায় দেবমূর্তির নামে বেশ কিছু সম্পত্তি দান করেছিলেন। যার মধ্যে এখনও ৬৩ শতক দেবালয় হিসেবে কাগজে কলমে স্পষ্ট উল্লেখ আছে।

সাবেক হিন্দু রাজপুরুষরা পাকিস্তানি শাসনামলে প্রতিবেশী দেশ ভারতে চলে যান। পরে ওই দেবালয় স্থানটির সার্বিক দায়িত্ব ও মর্যাদা রক্ষায় তৎপর থেকে দীর্ঘ প্রায় অর্ধশত বছর ধরে কুজাইল বারোয়ারি জয়কালী বাড়ি মন্দির ও দেবোত্তর কমিটি নামে একটি কার্যকরী কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটি দেবালয় স্থানে জয়কালী মাতার পূজার্চনা ও ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানসহ নানাবিধ কর্মকাণ্ড প্রতিপালন করছেন। বিগত দিনে সেই কমিটির পক্ষে সম্পাদক প্রয়াত ব্রজেন্দ্র নাথ প্রামাণিক এবং সভাপতি প্রয়াত প্রভাস চন্দ্র চক্রবর্ত্তী দেবালয়ের সেবাইত হিসেবে সার্বিক দায়িত্ব পালন করেছেন এবং তাদের প্রচেষ্টায় সেই দেবালয় স্থানে একটি মন্দির নির্মিত হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, বর্তমানে কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিকাশ চন্দ্র প্রামাণিক এবং সভাপতি সদানন্দ ঘোষ সেবাইত হিসেবে দেবালয়ের সার্বিক দায়িত্ব পালন এবং উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন। কিন্তু সহযোগিতা ছাড়া ও অর্থের অভাবে প্রাচীন ওই দেবালয় স্থানে কোনো উন্নয়ন করতে পারছে না। এ ছাড়া প্রাচীন ওই দেবালয় স্থানের কোনো সীমানা নির্ধারণ বা সীমানা প্রাচীর না থাকায় দিন দিন বেদখল হয়ে যাচ্ছে এবং আরও বেদখলের আশঙ্কা করছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।

এদিকে সীমানা প্রাচীর না থাকার কারণে অনেকে ইতোমধ্যে দখল করে বসবাস করছেন। সেখানে ঘর তুলে বসবাস করার এক পর্যায়ে সেই ঘর বিক্রি করে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া কেউ কেউ দখল করে তালা-চাবি দিয়ে ঢাকায় চলে গেছেন। তাই দ্রুত সীমানা প্রাচীরের ব্যবস্থা করার জন্য সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতা কামনা করেছেন মন্দির কমিটি। তবে মন্দিরের জায়গায় অবস্থিতরা সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পেলে সেখানে যেতে রাজি আছেন।

জয়কালী বাড়ি মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিকাশ চন্দ্র প্রামাণিক বলেন, এক সময় এখানে জাঁকজমকপূর্ণভাবে পূজা হতো। এই মন্দিরটি অনেক প্রাচীন হওয়া সত্ত্বেও মন্দিরটির নেই কোনো উন্নয়ন। জরাজীর্ণ অবস্থায় আছে। তা ছাড়া এখানে নেই কোনো সীমানা নির্ধারণ, নেই কোনো সীমানা প্রাচীর। যার ফলে অরক্ষিত অবস্থায় আছে প্রাচীন এই মন্দিরটি। আর ফাঁকা থাকার কারণে দখল হয়ে যাচ্ছে মন্দিরটির জায়গা। এ ছাড়া যেকোনো সময় বেদখল হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছি। তাই সরকারি সহযোগিতায় মন্দিরটির উন্নয়নের পাশাপাশি সীমানা প্রাচীর নির্মাণের জন্য জোর দাবি করছি।

মন্দির কমিটির সভাপতি সদানন্দ ঘোষ বলেন, আমার দেখা প্রয়াত শিক্ষক ব্রজেন্দ্র নাথ প্রামাণিক মন্দিরটির সেবাইত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। সেই সময় দেখেছি দেবালয় স্থানে অবস্থিত আটচালা ভাড়া দিয়ে মন্দিরটির আয়ের উৎস ছিল। তখন তিনি এলাকার সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সহযোগিতায় ধুমধাম করে কালীমাতার পূজা করতো। এখন আর আটচালা ভাড়া দেওয়া যায় না। কারণ কোনো সংস্কার নেই। জরাজীর্ণ অবস্থায় আছে। তাই আটচালাটি যদি সংস্কার করা যেত, তাহলে এখান থেকে একটা আয় হতো। তাছাড়া কয়েকটি দোকানঘর নির্মাণ করেও আয়ের উৎস করা যেতে পারে। তাই সংশ্লিষ্টদের কাছে দাবি, মন্দিরটির সংস্কারসহ একটা আয়ের উৎস করে দিবে এমনটাই আমরা প্রত্যাশা করছি।

বেদখল থেকে রক্ষা ও সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা যায় কি না এ বিষয়ে জানতে চাইলে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ হাফিজুর রহমান মুঠোফোনে কালবেলাকে বলেন, বিষয়টি আমি দেখছি।

সংস্কার করার বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার উম্মে তাবাসসুম মুঠোফোনে কালবেলাকে বলেন, আপনারা পিআইও অথবা আমার বরাবর একটা আবেদন দিন। আমি পরবর্তীতে বিষয়টি দেখব।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আরও ৭৭ উপজেলায় নতুন ইউএনও

টেকনাফে ৬ শিশুকে অপহরণ, কৌশলে পালাল দুজন

তরুণ ভোটারদের ভোটদানের আহ্বান আমিনুল হকের

ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের যে সমাধান দিলেন পোপ লিও

কন্যাসন্তানের বাবা হলেন সংগীতশিল্পী ইমরান

বাবার মরদেহ আটকে রাখলেন ছেলে, ২৩ ঘণ্টা পর দাফন

খালেদা জিয়ার আরোগ্য কামনায় দোয়া চাইলেন তামিম ইকবাল

গরম দুধে মধু মিশিয়ে খাওয়া ভালো নাকি ক্ষতিকর? জেনে নিন

যে কারণে হোয়াটসঅ্যাপ আনইনস্টল করতে হয়েছিল ভারতের বিশ্বকাপ জয়ের নায়িকার

আইনজীবী আলিফ হত্যা : দুই আসামির বিরুদ্ধে ক্রোকি পরোয়ানা জারি

১০

হবিগঞ্জ-৪ আসনে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থিতায় চমক, নয়া প্রার্থী অলিউল্লাহ নোমান

১১

জীবনসঙ্গীকে অযথা সন্দেহ? হতে পারে ওথেলো সিনড্রোম

১২

খালেদা জিয়ার সুস্থতা চেয়ে সিরাজদীখানে বিএনপির দোয়া মাহফিল

১৩

সারা দেশে বৃষ্টির পূর্বাভাস

১৪

সাগরে নিখোঁজ ১৩ জেলের সন্ধান মিলেছে

১৫

শয়তানের পূজা করতে শিশুদের যৌন নির্যাতন, গ্রেপ্তার ৪

১৬

ভাইরাল ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ স্লোগানের ভিডিও নিয়ে যা জানা গেল

১৭

৯ আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধের সিদ্ধান্ত নিল বাংলাদেশ ব্যাংক

১৮

খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় অসহায় মানুষের মাঝে খাবার বিতরণ

১৯

বিসিবিএল ও ‘এফসিডি-সিএবি’র সমঝোতা স্মারক

২০
X