ভূরুঙ্গামারীর সোনাহাট স্থলবন্দর হতে কুড়িগ্রাম পর্যন্ত প্রায় ৫০ কিলোমিটার সড়কটি এখন মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। দিনে দিনে সড়কে মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। একের পর এক সড়ক দুর্ঘটনায় বহু মানুষ প্রাণ হারাচ্ছেন এমনকি আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করছেন অনেকে। নিরাপদ সড়ক চেয়ে মিছিল মিটিংসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে স্মারকলিপি দিয়েও কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না এলাকাবাসী।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ২১ জানুয়ারি সকালে ভূরুঙ্গামারী-সোনাহাট স্থলবন্দর সড়কের পাটেশ্বরী তালতলা ব্রিজের ওপর তিন চাকার ভটভটি ও মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে বাবা-ছেলের মৃত্যু হয়। গত ৮ ফেব্রুয়ারি বিকেলে ওই সড়কের পাইকেরছড়া ইউনিয়নের কোম্পানি মোড় এলাকায় অবৈধ ভটভটির ধাক্কায় দুইজন নিহত হয়। এর আগে একি সড়কে ডাম্প ট্রাকের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহীসহ একাধিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।
গত ১৩ ফেব্রুয়ারি সকালে ভূরুঙ্গামারী-কুড়িগ্রাম সড়কের পাথারি মসজিদ বাজার এলাকায় মাদ্রাসা পড়ুয়া ছেলেকে খাবার দিতে যাওয়ার সময় হানিফ পরিবহনের একটি বাসের চাপায় মহিজউদ্দিন নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। ২২ ফেব্রুয়ারি ভূরুঙ্গামারী-কুড়িগ্রাম সড়কের বাঁশেরতল এলাকায় মাইক্রো ও অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে শিশু ও নারীসহ ৯ জন আহত হয়েছেন। তার মধ্যে ৪ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তদেরকে রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে পাঠানো হয়। একই দিন ওই সড়কের মধ্য কুমারপুর বাজার তেলের পাম্পের মোড়ে অটোরিকশার সঙ্গে মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে লিটা নামের এক মোটরসাইকেল চালক গুরুতর আহত হন। পরে মুমূর্ষু অবস্থায় স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়। ২৩ ফেব্রুয়ারি ভূরুঙ্গামারী- কুড়িগ্রাম সড়কে ধরলা সেতুর পাশে ভূরুঙ্গামারী থেকে ছেড়ে আসা পাথরবোঝাই ট্রাকের সঙ্গে মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে কুড়িগ্রাম সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়। এর আগে ভূরুঙ্গামারী-কুড়িগ্রাম সড়কের আন্ধারিঝাড় বাজারের জাবের মন্ডলের চাতালের সামনে ঢাকাগামী নৈশকোচের ধাক্কায় ৩ মোটরসাইকেল আরোহী ঘটনাস্থলে মারা যান। এরও আগে ওই এলাকায় ট্রাকচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী শালী-দুলাভাই এর মৃত্যু হয়। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় ভূরুঙ্গামারী থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী একটি নৈশকোচের সাথে আন্ধারিঝাড় বাজারে প্রবেশের আগে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা একটি ট্রাকের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। ওই বাসের হেলপার আসাদুল হক ঘটনাস্থলেই মারা যান। গত ৭ ফেব্রুয়ারি দুপুরে ভূরুঙ্গামারীর সোনাহাট সেতুর ওপর ট্রাকের ধাক্কায় বাবার বাইসাইকেলের পেছন থেকে ছিটকে পড়ে সানজিদা খাতুন (১২) নামের এক কিশোরীর মৃত্যু হয়।
সর্বশেষ গত ৯ মার্চ রাতে কুড়িগ্রাম-ভূরুঙ্গামারী সড়কের পাটেশ্বরী বাজারে কুড়িগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা ভূরুঙ্গামারীগামী যাত্রীবাহী বাসের ধাক্কায় অজ্ঞাত এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়।
স্থানীয়রা বলছেন, ভূরুঙ্গামারী-কুড়িগ্রাম সড়ক যেন ক্রমশই মরদেহের ভাগাড়ে পরিণত হচ্ছে। রক্তের দাগ শুকাতে না শুকাতেই আরেকটি রক্তের দাগ এসে আরও লাল করে দিচ্ছে পিচঢালা পথ। এ ঘটনায় জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানান এলাকাবাসী।
এলাকাবাসী আমজাদ, রবিউল, শাহআলম ও এরশাদুল হক বলেন, রাস্তায় এতো পরিমাণ অটো রিকশা ও তিন চাক্কার ভটভটি বেড়েছে যার কারণে হাটা চলাই মুশকিল। এদেরকে প্রশিক্ষণ ও লাইসেন্সের আওতায় আনা উচিত। এদের বেপরোয়া গাড়ি চালানোই সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণ বলে মনে করেন তারা।
নিহতের স্বজনরা বলছেন, ফিটনেসবিহীন ও অবৈধ যান বৃদ্ধি, অপ্রাপ্ত বয়স্ক, অদক্ষ, প্রশিক্ষণ ও লাইসেন্সবিহীন চালক দিয়ে গাড়ি চালানোর কারণেই এই সড়ক এমন মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে। এতে প্রশাসনের দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ কামনা করেন তারা।
সোনাহাট ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ বাবুল আক্তার জানান, সড়কে প্রশাসনের কঠোর তদারকি ও যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া এবং চালক, যাত্রীসহ পথচারীদের সচেতনতার মাধ্যমে আমরা সড়কে শৃঙ্খলা আনতে পারি। একটি দুর্ঘটনা সারাজীবনের কান্না, তাই আসুন আমরা সবাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে সচেতন হই, সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করি।
কুড়িগ্রাম জেলা পুলিশের ট্রাফিক ইনসপেক্টর বদিউল আনাম বলেন, আমরা এই মহাসড়কে দুর্ঘটনা রোধে কাজ করছি। সড়কে ফিটনেসবিহীন গাড়ি ও চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকায় আমরা তাদের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত মামলা দিচ্ছি। এ ছাড়া আগামী সাত দিনের মধ্যে ভূরুঙ্গামারী টু রায়গঞ্জ সড়কের মধ্যবর্তী জায়গায় পাঁচটি দপ্তরের সমন্বয়ে ট্রাফিক বিষয়ে জনসাধারণকে সচেতন করতে একটি বড় ধরনের প্রোগ্রাম করব। এ জন্য সবার সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
মন্তব্য করুন