ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়াকে কেন্দ্র করে ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলায় এক ছাত্রলীগ নেতাকে তুলে নিয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্যের বাসায় নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে।
নির্যাতনের শিকার ছাত্রলীগ নেতার নাম ফয়সাল আহমেদ। তিনি ত্রিশালের কবি নজরুল কলেজের মানবিক শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।
মঙ্গলবার (১২ মার্চ) বিকেলে নির্যাতনের ঘটনায় ছাত্রলীগ নেতার বাবা আবদুর রহিম বাদী হয়ে ত্রিশাল থানায় সংসদ সদস্যের ছেলেসহ পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, সংসদ সদস্য এ বি এম আনিছুজ্জামানের ছেলে সাদমান সামিনের নির্দেশে কয়েকজন মিলে ফয়সালকে তাদের বাড়িতে তুলে নিয়ে মারধর করে।
জানা গেছে, ত্রিশাল পৌরসভার উপনির্বাচনে এমপির স্ত্রী মেয়র পদে পরাজিত হওয়ায় ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন ফয়সাল আহমেদ। পোস্টকে কেন্দ্র করে রোববার (১০ মার্চ) তুলে নিয়ে নির্যাতনের পর পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয় তাকে। নির্যাতন শেষে পুলিশ হেফাজতে দেওয়ার খবর পেয়ে উত্তেজনা তৈরি হলে পুলিশ স্থানীয় আওয়ামী লীগ সভাপতির জিম্মায় ফয়সালকে ছেড়ে দেয়।
ফয়সালকে তুলে নিয়ে এমপির বাসায় আটকে মারধর ও পুলিশ হেফাজতে দেওয়ার খবর পেয়ে ওই দিন রাত ৯টার দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভকালে এমপি আনিছের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন তারা। রাত সোয়া ১০টার দিকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা প্রতিবাদ মিছিল নিয়ে থানার গেটের সামনে গেলে এমপির সমর্থকরা তাদের লাঠি নিয়ে ধাওয়া দেয়।
এ সময় দুই গ্রুপের সংঘর্ষে উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন, উপজেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুম মিয়া, রিয়াদ আরেফিন লিয়ান, আওয়ামী লীগ নেতা আবদুস সাত্তার আহত হন।
ছাত্রলীগ নেতা ফয়সাল আহমেদ বলেন, উপজেলা পরিষদের সামনে থেকে ডেকে নিয়ে এমপির বাসার তিনতলায় রাব্বি, আবদুল্লাহ, অজ্ঞাত একজন ও এমপি আনিছের ছোট ছেলে সাদমান সামিন আমাকে হকিস্টিক, লোহার পাইপ, লাঠি ও কাঠ দিয়ে মারধর করে। বেলা ১২টার দিকে ধরে নেওয়ার পর মারধর শুরু করে কিছু সময়ের জন্য বন্ধ রাখে। পরে এমপির বড় ছেলে তার লোকজন নিয়ে আরেক দফা আমাকে মারধর করে।
তিনি বলেন, একপর্যায়ে পলিথিনে মোড়ানো ককটেল সামনে দিয়ে বলা হয়, তোকে যা বলব তাই করবি, নয়তো তোর আঙুল ভেঙে দেব। এ সময় সাবেক এমপির ছেলে হাসান আমাকে ককটেল দিয়ে এমপিকে মারার জন্য পাঠিয়েছে বলে মোবাইলে স্বীকারোক্তি রাখে। এরপর এমপির কাছে নিয়ে গেলে আমি ক্ষমা চাইলেও তিনি শোনেননি। আমাকে বিভিন্ন মামলায় জেলে ঢুকিয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে আমার হাত কেটে নেওয়ার হুমকি দেন। পরে পুলিশ ডেকে থানায় দিয়ে দেন।
ছাত্রলীগ নেতাকে মারধর ও সংঘর্ষের এ ঘটনায় সোমবার (১১ মার্চ) দুপুরে ময়মনসিংহ প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করা হয়। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোমিনুল হাসান সোহান। আরও উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আশরাফুল ইসলাম মন্ডল, সাবেক পৌর কমিশনার ও আহত ছাত্রলীগ নেতা ইমরান হোসেনের বাবা দুলাল মন্ডল ও উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হাসান মাহমুদ।
ত্রিশাল থানার ওসি মো. কামাল হোসেন বলেন, এমপির ফোন পেয়ে বাসা থেকে ফয়সালকে আনা হয়। ফেসবুকে পোস্ট দেওয়াকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটেছে। ফয়সালের শরীরজুড়ে মারধরের আঘাত ছিল। তাকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ না থাকায় রাতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে ত্রিশালের সংসদ সদস্য এবিএম আনিছুজ্জামান বলেন, ছেলেটিকে মারধর করা হয়নি। সে গত সংসদ নির্বাচন থেকে আমার বিরুদ্ধে কুৎসা রটাচ্ছে। সে এখন আমার স্ত্রীর সম্পর্কে বিভিন্ন অশ্লীল কথাবার্তা লিখছে। সে এগুলো লেখার কারণে এক ছেলে তাকে ধরে আমার কাছে নিয়ে আসে। পরে আমি ওসিকে ফোন দিয়ে ওই ছেলেকে থানায় দিয়ে দেই।
লিখিত অভিযোগ করা হলেও এখনো মামলা নেয়নি পুলিশ। এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মাছুম আহাম্মদ ভুঁঞা বলেন, বিষয়টি নিয়ে পর্যালোচনা চলছে।
মন্তব্য করুন