ঢাকার সাভারের আশুলিয়ায় মহাসড়কের পাশে পুলিশ বক্সের সামনেই দাপিয়ে বেড়াচ্ছিল অবৈধ অটোরিকশা। চালকরা বলছিলেন, ‘মাসিক টাকা দিয়ে মহাসড়কে অটোরিকশা চালান তারা।’
বিষয়টি নিয়ে বাইপাইল ট্রাফিক পুলিশের ইন্সট্রাক্টর খসরু পারভেজের কাছে প্রশ্ন করতেই ক্ষেপে যান তিনি। সোজা জানিয়ে দেন, ‘তিনি এ বিষয়ে বক্তব্য দিতে বাধ্য নন। এ জন্য এসপি ও হাইওয়ের ওসির সঙ্গে কথা বলেন।’
তথ্য বলছে, ২০২৩ সালেও একবার ট্রাফিক পুলিশ বক্সের ভেতরে শ্রমিককে মারধর ও অটোরিকশা থেকে সরকারি জরিমানার কথা বলে রসিদ ছাড়া টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছিল ট্রাফিকের পুলিশের এ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
রোববার (৫ মে) উপজেলার বাইপাইল ত্রি মোড় সড়কে গিয়ে দেখা যায়, অটোরিকশায় সয়লাব পুরো মহাসড়ক। স্বল্পপাল্লা ও দূরপাল্লার পরিবহনের সঙ্গে মহাসড়কে দাপটের সঙ্গে চলছে অটোরিকশা। এগুলোর যাত্রী ওঠানামা করানো হচ্ছে পুলিশ বক্সের সামনেই। পাশেই দুই পুলিশ সদস্যকে দায়িত্বরত দেখা যায়। ট্রাফিক পুলিশের ছাউনির নিচে দাঁড়িয়ে গল্পে ব্যস্ত তারা।
কয়েকজন অটোরিকশাচালকের সঙ্গে কথা হয়। তারা জানান, অটোরিকশা চালাতে গেলেই মামলা দেয় পুলিশ। তবে মাসিকভাবে টাকা দিলে সেগুলো ধরা হয় না।
বাইপাইল ট্রাফিক পুলিশ বক্সের সামনে অটোরিকশা নিয়ে যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করছিলেন মো. রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, পুলিশ ধরে। ধরলে ১ হাজার টাকা দিলে ছেড়ে দেয়।
জাকারুল ইসলাম নামে আরেক চালক বলেন, মহাসড়কে ওঠা নিষেধ। মাসে মাসে টাকা নেয়। গত ২৪ এপ্রিল ১ হাজার টাকা দিয়েছি। আবার আগামী মাসে দিতে হবে। তাহলে ধরবে না।
এদিকে এসব বিষয় নিয়ে কথা বলতে বাইপাইল পুলিশ বক্সের ভেতরে যান কালবেলা প্রতিবেদক। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, এসি করা পুলিশ বক্সের কক্ষে মোবাইল ফোনে ভিডিও দেখায় ব্যস্ত তিনি। তাকে ঘিরে বসা আরও ২ পুলিশ সদস্য।
তার কাছে অটোরিকশা চলাচল নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি চেয়ার থেকে উঠে ডাকতে থাকেন রেকার অপারেটরকে। রেকার অপারেটর এলে তার কাছ থেকে জরিমানার স্লিপের বই নিয়ে এ প্রতিবেদককে দেখান তাদের কাজের ফিরিস্তি। এরপর পুলিশ বক্সের সামনেই অটোরিকশার স্টপেজ করার বিষয়ে প্রশ্ন করতেই তিনি ক্ষেপে যান। এরপরই বক্তব্য দেবেন না বলে জানান তিনি। সেই স্লিপ দেখিয়ে বলেন, আমরা ধরি, রেকার করি, ডাম্পিং করি। এই যে তার প্রমাণ।
একপর্যায়ে নিজের মোবাইল ফোনের ক্যামেরা চালু করে এ প্রতিবেদকের ভিডিও ধারণ করতে থাকেন ও বলেন, ‘আপনাকে বক্তব্য নিতে হলে জেলার এসপিরটা নেন। আপনার কী অথরিটি আছে আমাকে ব্লেম দেবেন। হোয়াই ইউ আর ব্লেমিং মি। ইউ আর মাই অথরিটি?’
এ প্রতিবেদকের কাছে বক্তব্য রয়েছে এমন কথা বললে তিনি বলেন, ‘সেটা আপনি প্রমাণ করবেন। আমার অথরিটির কাছে যাবেন।’
এ ছাড়া টাকা নেওয়ার কথাও অস্বীকার করেন তিনি।
এ বিষয়ে ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার, মো. আসাদুজ্জামান বলেন, এসব বিষয়ে আমরা কাজ করছি। কীভাবে অটোরিকশা সমস্যা সমাধানে কাজ করা যায় তা নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। পুলিশ টাকা নিয়ে চালাতে দিচ্ছে এমন প্রশ্ন বিব্রতকর। এসবের প্রমাণ থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শুধু বাইপাইল না, অনেক জায়গায় কাজ করছি। কীভাবে এসব নিয়ন্ত্রণে নেওয়া যায় সে বিষয়ে জেলা ট্রাফিক কাজ করছে।
মন্তব্য করুন