নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলায় ১৩টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার বিভিন্ন গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে গরুর লাম্পি স্কিন রোগ। এ রোগের লক্ষণ ও সংক্রমণ দেখা দেওয়ার পর ভ্যাক্সিন না থাকায় খামারি ও কৃষকদের মধ্যে দুশ্চিন্তা ও আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
মূলত, এক প্রকার পক্স ভাইরাস বা এলএসডি ভাইরাসের সংক্রমণে গবাদিপশুতে এই রোগ দেখা দেয় এবং এক গরু থেকে আরেক গরুতে ছড়িয়ে পড়ে। রোগের সময় প্রধানত বর্ষার শেষে, শরতের শুরুতে অথবা বসন্তের শুরুতে। যে সময়ে মশা-মাছি অধিক বংশবিস্তার সেই সময়ে প্রাণঘাতী এই রোগটি ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়তে দেখা যায়।
সম্প্রতি খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার চিরাং ইউনিয়নের ছিলিমপুর গ্রামের আব্দুল মোমেনের ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা মূল্যের একটি গরু কয়েকদিন আগে লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে।
এ ছাড়া ওই গ্রামের রেজাউল করিম, রুবেল মিয়া, কাজল মিয়া জানান, বিভিন্ন গ্রামের শতাধিক গরু এই রোগে আক্রান্ত হওয়ায় গরুর মালিকগণ দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। তাছাড়া লাম্পি রোগের ভ্যাক্সিন হাসপাতাল ও বাজারে কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না।
তারা জানান, প্রাণি সম্পদ দপ্তরের উচিত জনসচেতনতার জন্য এলাকায় মিটিং ও মাইকিং করে রোগ প্রতিরোধ কল্পে কাজ করা এবং ভ্যাক্সিন নিশ্চিত করা।
গত বুধবার (১৯ জুলাই) কেন্দুয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরে খোঁজ নিতে গেলে পাইকুড়া ইউপির খালিজুড়া গ্রামের আক্রান্ত গরুর মালিক সোহেল মিয়া জানান, তার ৩ লাখ টাকা মূল্যের গরুটি ৩দিন ধরে এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে। তবে এই রোগের ভ্যাক্সিন কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না। পেলে হয়ত গরু ভাল হয়ে যেতো। গরুটির শরীরে জ্বর, কাঁপুনি এবং চামড়ায় গুটি গুটি কি যেনো দেখা দিয়েছে। তাদের এলাকায় আরও বেশ কিছু গরুর এ রোগ দেখা দিয়েছে বলেও তিনি জানান।
এ বিষয়ে কেন্দুয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. ভাস্কর চন্দ্র তালুকদার বলেন, লাম্পি স্কিন ডিজিজ নামের এই রোগটি আফ্রিকার জাম্বিয়ায় দেখা দেয় ১৯২৯ সালে। ১৯৪৩ থেকে ১৯৪৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশে সব জায়গায় গবাদি পশুর শরীরে এই রোগ ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে কেন্দুয়া উপজেলায় এই লাম্পি রোগের প্রকোপ থাকলেও আগের চেয়ে কম। আমার এখানে প্রতিদিন গড়ে ৫-৬ টি লাম্পি স্কিন ডিজেজ নিয়ে আসা গরুর চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছি ও পরামর্শ দিচ্ছি। তবে ভ্যাক্সিনের স্বল্পতা রয়েছে। এমনকি ফার্মেসিতেও লাম্পি রোগের ভ্যাক্সিন পাওয়া যাচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, লাম্পি স্কিন ডিজিজ (এলএসডি) একটি ভাইরাসজনিত রোগ। এলএসডি আক্রান্ত গরুর প্রথমে জ্বর হয় এবং খাওয়ার রুচি কমে যায়। পশুর শরীরের বিভিন্ন জায়গায় চামড়ায় গুটি গুটি আকৃতি ধারণ করে, লোম উঠে যায় এবং ক্ষতের সৃষ্টি হয়। এ রোগটি মূলত মশা-মাছির মাধ্যমে রোগাক্রান্ত গরু থেকে সুস্থ গরুতে ছড়ায়। এতে আতঙ্ক হওয়ার কিছু নেই। একটু সচেতন হলেই এই রোগ নিরাময় সম্ভব। লাম্পি স্কিন রোগ (এলএসডি) মূলত শঙ্কর জাতের গরু বেশি আক্রান্ত হয়। উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের পক্ষ থেকে খামারি ও কৃষক পর্যায়ে সচেতন করতে মাঠ পর্যায়ে লিফলেট বিতরণ, সভা, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেম্বারদের করণীয় বিষয়ে কাজ করছে। খামার ও গোয়াল ঘরের আশপাশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও মশা-মাছি মুক্ত রাখা এবং মশারি টানানোর পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। আতঙ্কিত না হয়ে চিকিৎসা করলে ১৪ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে আক্রান্ত গরু সুস্থ হয়ে যায়।
মন্তব্য করুন