প্রথমবারের মতো সমুদ্রযাত্রায় নেমেছে চীনের সবচেয়ে আধুনিক ও বৃহৎ বিমানবাহী রণতরী ‘দ্য ফুজিয়ান’। এই রণতরীটি চীনের নৌশক্তি বৃদ্ধির সর্বশেষ উদাহরণ। বুধবার সাংহাই থেকে পূর্ব চীন সাগরের উদ্দেশে পরীক্ষামূলক অভিযান শুরু করেছে এটি। চীনের উচ্চভিলাসী সামরিক পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এই বিমানবাহী রণতরী নির্মাণ করেছে দেশটি।
‘দ্য ফুজিয়ান’ চীনের নিজস্ব প্রযুক্তিতে নির্মিত তৃতীয় বিমানবাহী রণতরী। এটি নির্মাণ করতে ছয় বছর সময় লেগেছে দেশটির। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চীনা নৌ বাহিনীর পরিসর বাড়ানোর চেষ্টার মধ্যেই নতুন এই রণতরী সাগরে ভাসালো বেইজিং।
চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম শিনহুয়া বুধবার জানিয়েছে, সমুদ্রে মহড়ার সময় রণতরীর প্রোপালশন ও ইলেকট্রিক সিস্টেমের নির্ভরযোগ্যতা ও স্থিতিশীলতা পরীক্ষা করা হবে। ২০২২ সালে এই রণতরীর উদ্বোধন হলেও এবারই প্রথম সমুদ্রে পাঠানো হয়েছে ফুজিয়ানকে।
বিমানবাহী রণতরীটির সমুদ্রযাত্রার পর এর শক্তি ও সক্ষমতা জানতে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা যাচ্ছে নানা মহলে। শুধু যুক্তরাষ্ট্রের কাছেই ফুজিয়ানের চেয়ে বড় রণতরী রয়েছে। তাই যুক্তরাষ্ট্রের রণতরীগুলোর সঙ্গে এটি কতটা পাল্লা দেবে তা নিয়ে চলছে বিশ্লেষণ।
ফুজিয়ান ছাড়াও আরও দুটি রণতরী রয়েছে চীনের। তবে সেগুলোর সক্ষমতা নতুন এই রণতরীর মতো এত বিশাল নয়। ফুজিয়ানের গুরুত্বপূর্ণ একটি ফিচার হলো এর তড়িৎ-চুম্বকীয় ক্যাটাপাল্ট সিস্টেম, যার মাধ্যমে অপর দুই রণতরীর তুলনায় অপেক্ষাকৃত ভারী যুদ্ধবিমান এই রণতরী থেকে উড়ে যেতে পারবে। পুরোনো দুই রণতরীতে ব্যবহৃত হয় স্কি-জাম্প প্রক্রিয়া।
বিশ্লেষকদের মতে, নতুন এই ফিচারের কারণে চীন আরও বড় বড় যুদ্ধবিমানকে আরও বেশি দূরত্বে পাঠাতে পারবে এবং একইসঙ্গে এই বিমানগুলো আগের তুলনায় আরও বেশি গোলাবারুদ বহন করতে পারবে। সার্বিকভাবে, এই রণতরী চীনের নৌযুদ্ধ সক্ষমতাকে অনেকাংশ বাড়িয়ে তুলবে বলেও মনে করছেন তারা।
চীনের নতুন এই রণতরী সর্বাধুনিক হলেও তা যুক্তরাষ্ট্রের সর্ববৃহৎ ও নতুন রণতরি ইউএসএস জেরাল্ড ফোর্ড থেকে কতটা এগিয়ে বা পিছিয়ে তা নিয়ে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন।
ফুজিয়ানে ব্যবহৃত তড়িৎ-চুম্বকীয় ক্যাটাপাল্ট ব্যবস্থা যুক্তরাষ্ট্রের একটিমাত্র রণতরীতে ব্যবহার হয়েছে, আর সেটি হলো ইউএএস জেরাল্ড আর ফোর্ড। মার্কিন নৌবাহিনীর বাকি ১০টি পুরোনো রণতরীতেই বাষ্প-চালিত ক্যাটাপাল্ট ব্যবহার করে যুদ্ধবিমান উৎক্ষেপণ করা হয়।
তবে মার্কিন রণতরীগুলোর বিশেষ একটি সুবিধা রয়েছে, যা চীনের তিন রণতরীর নেই।
যুক্তরাষ্ট্রের জাহাজগুলো পারমাণবিক শক্তিতে পরিচালিত। যার ফলে এগুলো দীর্ঘসময় সমুদ্রে থাকতে পারে। অপরদিকে, ফুজিয়ানে প্রথাগত জ্বালানি ব্যবহৃত হচ্ছে। যার ফলে, এই রণতরীকে নিয়মিত বিরতিতে কোনো বন্দর থেকে অথবা অন্য তেলের ট্যাংকার থেকে জ্বালানি সংগ্রহ করতে হয়।
মার্কিন নৌবাহিনীর ফোর্ড রণতরীর বহন ক্ষমতা প্রায় এক লাখ টন। অপর ১০টি মিনিৎজ ক্লাস রণতরী ৮৭ হাজার টন ভার বইতে পারে। এই বড় আকারের মার্কিন জাহাজগুলো অন্তত ৭৫টি যুদ্ধবিমান বহন করতে পারে। ধারণা করা হচ্ছে চীনের সর্বাধুনিক রণতরী ফুজিয়ান ৬০টি যুদ্ধবিমান বহন করবে।
মন্তব্য করুন