আওয়ামী সরকারের আমলে স্বাস্থ্য খাতে ‘দুর্নীতির হোতা’ আলোচিত ঠিকাদার মোতাজ্জেরুল ইসলাম মিঠুকে দুদকের করা মামলায় কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) বিকেলে শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক ইব্রাহিম মিয়ার আদালত এই আদেশ দেন। একই সঙ্গে রিমান্ড ও জামিন বিষয়ে শুনানির জন্য আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর তারিখ ধার্য করেন।
আসামি পক্ষের আইনজীবী মো. শফিকুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আসামিকে আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন৷ আমরা আসামির রিমান্ড বাতিলপূর্বক জামিনের আবেদন করি। আংশিক শুনানি শেষে আদালত তাকে কারাগারে পাঠিয়ে আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর রিমান্ড ও জামিন শুনানির জন্য তারিখ ধার্য করেন।
রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, আসামি অসৎ উদ্দেশ্যে নিজ স্বার্থে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য অবৈধ উপায়ে জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ ৭৫ কোটি ৮০ লাখ ৭৭ হাজার টাকা মূল্যের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জন করে ভোগদখলে রেখে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭(১) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছে। এজন্য তার বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করা হয়। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে সিন্ডিকেট করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে স্বাস্থ্য খাতে বিভিন্ন মালামাল সরবরাহ ও উন্নয়ন কাজের নামে প্রভাব বিস্তার করার অভিযোগসহ দেশে এবং দেশের বাইরে আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া তার নিজ এবং পরিবারের সদস্যদের নামে অর্থ পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধানাধীন রয়েছে। এ বিষয়ে তাকে নিবিড় জিজ্ঞাসাবাদ প্রয়োজন। সুষ্ঠ অনুসন্ধান ও মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তথ্য উদ্ঘাটনের জন্য আসামির ১০ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা একান্ত প্রয়োজন।
এর আগে, গত ১০ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাতে নিউমার্কেট থানাধীন এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এরপর তাকে দুদকে হস্তান্তর করা হবে।
দুদকের অনুসন্ধান প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, লেক্সিকোন মার্চেন্ডাইস ও টেকনোক্রেট নামের দুটি প্রতিষ্ঠানের মালিক মিঠু কৃষিজমি ক্রয়, জমি লিজ, প্লট, ফ্ল্যাট ও বাড়ি নির্মাণে মোট ১৮ কোটি ৪০ লাখ ৫১ হাজার টাকার স্থাবর সম্পদ অর্জন করেছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন কোম্পানিতে শেয়ার ও বিনিয়োগ, গাড়ি ক্রয়, ব্যাংক হিসাবের স্থিতি, স্বর্ণালংকার, আসবাবপত্র ও ইলেকট্রনিক সামগ্রী মিলিয়ে আরও ৫৭ কোটি ৪৪ লাখ টাকার অস্থাবর সম্পদ তার নামে পাওয়া গেছে। স্থাবর ও অস্থাবর মিলিয়ে সম্পদের মোট মূল্য দাঁড়িয়েছে প্রায় ৭৫ কোটি ৮৫ লাখ টাকা।
এ ছাড়া মিঠুর নামে পারিবারিক ব্যয় ধরা হয়েছে ৭১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। অর্থাৎ সম্পদ ও ব্যয়সহ তার মোট সম্পদের হিসাব দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৪৭ কোটি ৩০ লাখ টাকা। অন্যদিকে অনুসন্ধানে বৈধ উৎস পাওয়া গেছে ৭১ কোটি ৪৯ লাখ টাকার। অর্থাৎ বৈধ আয়ের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণভাবে ৭৫ কোটি ৮০টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের প্রমাণ মিলেছে।
মন্তব্য করুন