কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ০২ মে ২০২৪, ০৭:৩২ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

মা-বাবার সম্পত্তি বোনদের না দিলে করণীয়

গ্রাফিক্স : কালবেলা
গ্রাফিক্স : কালবেলা

ইসলাম ধর্মে উত্তরাধিকার আইন অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এ ক্ষেত্রে নারীদের উত্তরাধিকারের বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা আছে। কোনো নারী যদি তার প্রাপ্ত সম্পদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হন তাহলে, তিনি আইন অনুযায়ী এর প্রতিকার পেতে পারেন।

মুসলিম আইন অনুযায়ী, মৃত ব্যক্তির (বাবা) শুধু একজন মেয়ে থাকলে সম্পদের অর্ধেক পাবেন। কিন্তু মৃত ব্যক্তির ছেলে কিংবা মেয়ে উভয়ই থাকলে সেক্ষেত্রে রেখে যাওয়া সম্পত্তিতে ছেলে যা পাবেন, তার অর্ধেক পাবেন মেয়ে।

অর্থাৎ ভাইয়েরা ইচ্ছা করলেই বোনদের সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করতে পারবেন না। এ ক্ষেত্রে বোনের বিয়ে হওয়া না হওয়া বিবেচ্য নয়। বোনদের যদি বাবা বা মায়ের সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করা হয়, তাহলে বঞ্চিত বোনরা বাটোয়ারা বা বণ্টনের মোকদ্দমা করতে পারেন।

মুসলিম আইনে বলা হয়েছে, মৃত ব্যক্তির শুধু একজন মেয়ে থাকলে অর্ধেক সম্পদ পাবেন। দুই বা ততধিক মেয়ে থাকলে সম্পদের দুই তৃতীয়াংশ (সম্মিলিত) পাবেন, যদি ছেলে না থাকে। আর যদি ‘ছেলে এবং মেয়ে’ উভয়ই থাকে সেক্ষেত্রে একজন ছেলের অর্ধেক সম্পদ পাবেন মেয়ে। অর্থাৎ মেয়ের দ্বিগুণ সম্পদ পাবেন ছেলে। শুধু একজন ছেলে থাকলে মৃত ব্যক্তির সম্পূর্ণ সম্পদ পাবেন তিনি।

দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী, মৃত ব্যক্তির রেখে যাওয়া সম্পত্তির ভাগ-বণ্টন নিয়ে উত্তরাধিকারীদের মধ্যে ঝামেলা সৃষ্টি হলে সেক্ষেত্রে বাটোয়ারা মামলা করে অধিকার ফিরে পাওয়া যায়। মোকদ্দমা চলাকালে যদি কেউ মারা যান তাহলে তাদের উত্তরাধিকারীরাও এই মোকদ্দমায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন এবং অংশ চাইতে পারেন। অর্থাৎ শুধু বোনরা নন, বোনরা মারা যাওয়ার পর তার উত্তরাধিকারীরাও এই মামলায় পক্ষ হতে পারেন।

তবে এর ব্যতিক্রম হচ্ছে, একজন নারী বিবাহ পর্যন্ত পৈতৃক ভিটার সহঅংশীদার হিসেবে বিবেচ্য হবেন। কিন্তু বিবাহের পর স্বামীর বাড়িতে বসবাস কালে তিনি আগন্তুক হিসেবে বিবেচিত হবেন। তাই তিনি উক্ত পৈতৃক ভিটায় অবস্থিত বসতগৃহ বা কুটিরের কোনো একচ্ছত্র অংশ দাবি করতে পারেন না। এ কারণে বাটোয়ারা মামলায় স্বামী গৃহে বসবাসরত বিবাহিত কন্যা পিতৃগৃহ বা কুটিরের অংশ বিশেষ প্রাপ্তির বিষয়টি বিবেচিত হয় না। কারণ ওই সম্পত্তিতে উত্তরাধিকারীদের (পুত্র সন্তান) মধ্যে বিবাদ বা বিরোধ বৃদ্ধি পাবে বলে উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত রয়েছে। (১৩ ডি.এল.আর, ২৩০ পৃষ্ঠা)।

এ মামলা করতে হলে সম্পত্তির মালিকানা সংশ্লিষ্ট সব কাগজপত্র যেমন- ভূমি জরিপ খতিয়ান, নামজারি খতিয়ান, মালিকানা দলিল, উত্তরাধিকার সনদ ইত্যাদির প্রয়োজন হয়। কারণ নালিশি আর্জিতে সম্পত্তির মালিকানা অর্জনের বিবরণ যেমন খরিদ, দানসূত্রে কিংবা ওয়ারেশ সূত্রে কি না, উত্তরাধিকার সূত্রে কি না, যৌথ মালিকানার মাধ্যমে কি না, দখলের পরিপ্রেক্ষিতে স্বত্ব অর্জন কি না, বন্ধক বা অন্য কোনোভাবে স্বত্ব অর্জন কি না ইত্যাদি বিষয়সমূহ ধারাবাহিকভাবে উল্লেখ করতে হয়।

এ ছাড়া বাটোয়ারা মামলা করার আগে অবশ্যই নিশ্চিত হতে হবে যে, সম্পত্তি আগে থেকেই উইল বা হেবা করা হয়েছে কি না। যদি হয়ে থাকে তাহলে উইলের ক্ষেত্রে একতৃতীয়াংশ বাদ দিয়ে আর হেবা করা হলে হেবার দলিলে যে পরিমাণ মালিকানা আছে সেটা বাদ দিয়ে অন্য শরীকের অংশ বের করতে হবে। এ মামলায় দুবার ডিক্রি হয়।

প্রাথমিক ডিক্রির পর বণ্টন না করা হলে আদালত অ্যাডভোকেট কমিশনার নিয়োগ করে অংশ নির্ধারণ করে দেন এবং চূড়ান্ত ডিক্রি প্রদান করেন। মামলা চলাকালীন আদালতের মাধ্যমে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির সুযোগ রয়েছে। বণ্টন ডিক্রি পাওয়ার পরও দখল না পেলে কিংবা পক্ষরা দখল বুঝিয়ে না দিলে কিংবা হিস্যা বুঝিয়ে না দিলে ‘উচ্ছেদের মামলা’ করা যেতে পারে, স্বত্ব দখলের মামলা করা যেতে পারে।

যে এলাকায় বণ্টনযোগ্য সম্পত্তি থাকবে সেই এলাকার উপযুক্ত আদালতে এ মামলা দাখিল করতে হবে। দেওয়ানি কার্যবিধি আইনের ১৬ ধারা অনুযায়ী, নিম্নতম এখতিয়ার সম্পন্ন আদালতে এ ধরনের মামলা দাখিল করতে হয়। তবে সম্পত্তির মালিক যিনি, তার সম্পত্তি দুটি মৌজায় স্থিত হলে, দেওয়ানি কার্যবিধি আইনের ১৭ বিধি অনুযায়ী যেকোনো প্রকার মৌজার এখতিয়ার সম্পন্ন আদালতে মামলাটি দাখিল করা যাবে। যেক্ষেত্রে স্থানীয় অধিক্ষেত্র নির্দিষ্ট না হয়, সেক্ষেত্রে দেওয়ানি কার্যবিধি আইনের ১৮ বিধি অনুযায়ী যেকোনো আদালতে মোকদ্দমাটি দাখিল করা যাবে। কোর্ট ফি আইনের বিধান অনুযায়ী ৩০০ টাকা কোর্ট ফিস দিয়ে এ মোকদ্দমা করতে হয়।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

হ্যাক হওয়া ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ফিরিয়ে দেবে মেটা 

ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপ / ডাচ দলে চোটগ্রস্ত বার্সা তারকা

স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন

গাছ তলায় জায়েদ খান

নিরব-রিফাতের ‘অবুঝ মনের প্রেম’

ধানের দাম নিয়ে কৃষকের হাহাকার

কার বেশি আয়, রোনালদো নাকি মেসির?

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সন্ত্রাসী তৎপরতার তথ্য পেলেই অভিযান চালাবে র‍‍্যাব

স্বেচ্ছামৃত্যুর আগে তরুণীর ব্যতিক্রমী আয়োজন

গাইবান্ধায় আগুনে পুড়ল ১৪ দোকান 

১০

কুয়েতে নতুন রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল তারেক

১১

সৌদি পৌঁছেছেন ২৪ হাজারের বেশি হজযাত্রী

১২

গণতন্ত্র-উন্নয়নে শেখ হাসিনা বিশ্বে রোল মডেল : রাষ্ট্রপতি

১৩

ঢাকার যেসব এলাকায় শনিবার গ্যাস কম থাকবে

১৪

৬ তারিখে বাজেট দেব, বাস্তবায়নও করব : প্রধানমন্ত্রী

১৫

দেবরের হাতে ভাবি খুন

১৬

বীজতলা ফেটে চৌচির, কৃষকদের কপালে চিন্তার ভাঁজ

১৭

যারা একবেলা খেতে পারত না, তারা চারবেলা খায় : প্রধানমন্ত্রী

১৮

আ.লীগ সরকার টেলিযোগাযোগ খাতকে আধুনিক ও যুগোপযোগী করেছে : প্রধানমন্ত্রী

১৯

ডিএমপির মাদকবিরোধী অভিযানে গ্রেপ্তার ৩৪

২০
X