ঈদের দীর্ঘ ছুটির কারণে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) ক্যাম্পাস যখন জনশূন্য, তখন কিছুটা প্রাণের সঞ্চার ঘটাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়েরই একদল শিক্ষার্থী। স্নেহটেইল নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী প্ল্যাটফর্মের ব্যানারে তারা কাজ করছেন অনাহারক্লিষ্ট কুকুর-বিড়ালগুলোর সেবায়।
ছুটির সময় শিক্ষার্থী ও দোকানপাট না থাকায় খাবারের সংকটে পড়ে এই প্রাণীরা। এ সংকটময় সময়ে এগিয়ে এসেছে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী। ক্যাম্পাসের প্রতিটি কোণে তারা খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন কুকুর ও বিড়ালগুলোর কাছে।
ঈদ উপলক্ষে ২ থেকে ১১ জুন পর্যন্ত চালু ছিল এই কার্যক্রম। প্রতিদিন রান্না করা খাবার বিতরণ করা হয়েছে। প্রতিদিন প্রায় ৩ দশমিক ৫ কেজি চাল দিয়ে তৈরি করা খাবার প্রাণীদের দেওয়া হয়। রান্নার দায়িত্ব পালন করেছেন সংগঠনের নবীন সদস্য জিহাদ কাজী শৈশবের মা, যিনি নিজের উদ্যোগে মাছের মাথা ও লেজ দিয়ে রান্না করে সেই খাবার প্রাণীদের উপযোগী করে প্রস্তুত করেন।
গণিত ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থী জিহাদ কাজী শৈশব বলেন, ‘২০২১ সাল থেকেই আমি নিজে কুকুরদের খাওয়াতাম। এবার আমি স্নেহটেইলের সদস্য হয়েছি। এতে করে সংগঠিতভাবে কাজটি করা সহজ হচ্ছে। আমি প্রতিদিন মোটরসাইকেল চালিয়ে ক্যাম্পাসে খাবার পৌঁছে দিচ্ছি।’
প্ল্যাটফর্মের সদস্য তাসমিয়া হাসান ও তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘ছুটির সময়ই প্রকৃত মানবিকতার পরীক্ষা হয়। আমরা বিশ্বাস করি, প্রাণীদের প্রতিও আমাদের সামাজিক দায়িত্ব রয়েছে, আর সেই অনুভব থেকেই আমরা এ কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।’
ইংরেজি ডিসিপ্লিনের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী তামান্না রহমান তন্নী জানান, ‘আমরা দুজন মিলে প্রথমে এই সংগঠনটি গঠন করি। উদ্দেশ্য ছিল কুকুরগুলোর জন্য ডগ শেড তৈরি করা, স্থায়ী খাবারের ব্যবস্থা এবং প্রজনন নিয়ন্ত্রণের জন্য স্পে ও নিউটার প্রক্রিয়া চালু করা।’
তিনি জানান, অধিকাংশ অর্থ সদস্যদের চাঁদা থেকে আসে, সংগঠনের পেজে ফান্ড রেইজিং পোস্টের মাধ্যমে কিছু বাইরের সাহায্যও পাওয়া যায়।
প্রাণীপ্রেম ও মানবিক দায়বদ্ধতার মেলবন্ধনে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিস্তব্ধ ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে এনেছেন সহানুভূতির স্পন্দন। ছুটির দিনেও দায়িত্বশীলতা ও ভালোবাসা দিয়ে তারা প্রাণীদের মুখে অন্ন তুলে দিচ্ছেন, যা নিঃসন্দেহে মানবিকতার এক উজ্জ্বল উদাহরণ।
মন্তব্য করুন