জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ও হল নির্বাচনের ভোট গণনা নিয়ে নানা গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন জায়গায় এ ধরনের তথ্য ছড়িয়ে পড়েছে। তবে এ তথ্য সঠিক নয় বলে জানা গেছে।
শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) পোলিং এজেন্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম হলের পোলিং অফিসার উজ্জল কুমার মণ্ডল জানান, বিকেল তিনটা থেকে কেন্দ্রীয় সংসদের ভোট গণনার জন্য তারা অপেক্ষায় রয়েছেন। কিন্তু এ সংক্রান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। ফলে তারা এখনো কেন্দ্রীয় সংসদের ভোট গণনা শুরু করতে পারেননি।
তিনি জানান, তাজউদ্দীন আহমেদ হলের ভোট গণনা বাকি রয়েছে। এ হলের ভোট গণনা চলছে। ফলে বাকিরা কেন্দ্রীয় সংসদের ভোট গণনার অপেক্ষায় রয়েছেন। এখন বাকি থাকা হলের ভোট গণনা চলছে।
এদিকে নওয়াব ফয়জুননেসা হলের রিটার্নিং কর্মকর্তা সুলতানা আক্তার বলেন, আমরা শিক্ষকরা তিন দিন ধরে অমানুষিক পরিশ্রম করে যাচ্ছি। পরশু রাত দুইটার দিকে বাসায় গিয়েছি। আবার পরের দিন সকাল সাতটা থেকে দায়িত্ব পালন করছি। মেশিনের মাধ্যমে ভোট গণনার কথা বলা হয়েছে। ভোট গণনার পর রিটার্নিং কর্মকর্তা এবং প্রভোস্টরা এসে স্বাক্ষর করে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল।
তিনি বলেন, যে অমানুষিক পরিশ্রম আমরা করেছি, তার প্রতিদান হলো আমার সহকর্মীর মৃত্যু। আর সম্মানী নিয়ে বলার কিছু নেই— এর চেয়ে ঘণ্টাপ্রতি শ্রমিক হিসেবে কাজ করলেও বেশি পারিশ্রমিক পেতাম।
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, হলে ভোট গ্রহণ হলেও গণনা যদি সেখানেই করা হতো, তাহলে রাত ১১টার মধ্যেই ফলাফল ঘোষণা করা যেত। ২১টি হলে যদি আলাদাভাবে গণনা হতো, সিনেট ভবনে এমন ভিড় হতো না। আমাদের কাউকে ভোট গণনার বিষয়ে আগে থেকে কিছু জানানো হয়নি। অনেকেই ভোট কাস্ট করেও রাতে সিনেট ভবনে অপেক্ষা করেছেন। আমিও অসুস্থবোধ করে বাসায় ফিরি, কিন্তু জানানো হয় রাত ৪টায় আবার ফিরতে হবে গণনার জন্য। এমন টেনশন ও স্ট্রেসে ঘুমাতে পারিনি— সবসময় ভাবছিলাম, কখন আবার যেতে হবে।
অধ্যাপক সুলতানা প্রশ্ন তোলেন, ২১টি হলে ২১টি টেবিলে একযোগে গণনা করা গেলে সময় বাঁচত। ইভিএম বা যন্ত্রের বদলে হঠাৎ করে ম্যানুয়াল গণনার সিদ্ধান্ত কেন নেওয়া হলো? কার স্বার্থে এমন সিদ্ধান্ত? জান্নাতুল ফেরদৌসের মৃত্যু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এই অব্যবস্থাপনার সরাসরি ফল।
এর আগে আরেক রিটার্নিং কর্মকর্তা অভিযোগ করেন, ওএমআর থাকার পরও ম্যানুয়ালি ভোট গণনা প্রশাসনের পরম অব্যবস্থাপনা। এভাবে ভোট গণনা করতে নারাজ বলে জানান তিনি। সহকর্মীর লাশের ওপরে এভাবে কাজ করায় মনোবল হারিয়েছেন বলেও জানান কর্মকর্তা।
এদিকে ভোট গণনা ও ফল প্রকাশে দেরি হওয়ায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে উদ্বেগ ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিলম্বের কারণ জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও নির্বাচন কমিশনের সদস্য সচিব একেএম রাশিদুল আলম।
তিনি বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে যেসব কারণে ভোট গণনায় দেরি হয়েছিল, সেগুলো আমরা কাটিয়ে উঠতে পেরেছি। আমরা আশা করছি যে, এই প্রস্তুতি নেওয়ার ফলে এবং আজ যে লোকবল আছে, তাতে আমরা হয়তো বিকেল নাগাদ হলের ভোট গণনার হিসাব শেষ করতে পারব এবং রাত ১০-১১টার মধ্যে আমরা সম্পূর্ণ গণনা সম্পন্ন করে বেসরকারিভাবে ফল প্রকাশ করতে পারব।’
মন্তব্য করুন