কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) শাখা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্তির সাত মাস পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে কর্মিসভা। আগামী ৯ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চে এ কর্মিসভা অনুষ্ঠিত হবে। সভা থেকেই শাখা ছাত্রলীগের নতুন কমিটির ঘোষণা আসতে পারে বলে জানা গেছে। এদিকে কর্মিসভা উপলক্ষে ছাত্রলীগ কর্মীদের মধ্যে আনন্দ বিরাজ করলেও অনেকেই নিরাপত্তাসহ ক্যাম্পাসের সুস্থ পরিবেশ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৭ সালের ২৭ মে ইলিয়াস হোসেন সবুজকে সভাপতি ও রেজাউল ইসলাম মাজেদকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটি বিলুপ্তি হয় চলতি বছরের ৬ মার্চ।
এরপর থেকেই নতুন কমিটিতে পদ পাওয়ার জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন নিয়মিত থেকে শুরু করে সাবেক শিক্ষার্থীরা। এদিকে নিজেদের জনপ্রিয়তা জানান দিতে বহিরাগতরা কর্মিসভার দিন ক্যাম্পাসে অবস্থান নিতে পারেন বলে জানা গেছে। এতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার আশঙ্কা করছে ছাত্রলীগের একটি পক্ষ।
শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘দীর্ঘ প্রায় সাড়ে ছয় বছর পরে কর্মিসভা হচ্ছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা উৎসব পরিবেশ বিরাজ করছে, সেই সঙ্গে কিছু শঙ্কাও রয়েছে। গত এক বছরে ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের বিচরণ বেড়েছে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তাদের প্রবেশে নিয়ন্ত্রণ আনা গেলে সুন্দর এবং সাফল্যমণ্ডিত একটা কর্মিসভা হবে বলে আমি বিশ্বাস করি। সেই সঙ্গে যারা গত ছয় সাত বছর ধরে ছাত্র রাজনীতি করেছে, জয় বাংলা ধ্বনিতে ক্যাম্পাসকে মুখরিত রেখেছে নতুন কমিটিতে তাদেরকে মূল্যায়িত করা হবে এই আশা ব্যক্ত করি।’
কাজী নজরুল ইসলাম হলের সভাপতি নাজমুল হাসান পলাশ বলেন, ‘বর্তমানে এখানে কোনো কমিটি নেই। তাই কর্মিসভার দায়িত্ব, নিরাপত্তা, বহিরাগতদের দ্বারা শিক্ষার্থী-হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আক্রমণের সম্ভাবনা রয়েছে। এসব বিষয়ে আমরা ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে তুলে ধরেছি।’
তিনি বলেন, ‘কমিটিতে পদপ্রত্যাশী এমন অনেক প্রার্থী আছেন যারা জীবনে কোনোদিন ছাত্রলীগ করেনি, এমনকি তাদের ছাত্রত্বও নেই। আবার কয়েকজন আছেন যারা গত ৬ বা ৭ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়েও আসেনি। তারা যদি বিশ্ববিদ্যালয়ে শোডাউন দিতে চায় স্বাভাবিকভাবে তাদের বহিরাগতদের সাহায্য নেওয়া ছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের কোনো কর্মী নেই।’
২০১৫-১৬ কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান সভাপতি পদপ্রার্থী রেজা-ই ইলাহী বলেন, ‘কর্মিসভা উপলক্ষে ছাত্রলীগের সবাই উচ্ছ্বসিত এবং সবাই একসঙ্গে কাজ করবে।’
কর্মীসভা নিয়ে কোনো নিরাপত্তা আশঙ্কা আছে কিনা এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কর্মিসভা নিয়ে আমাদের কোনো আশঙ্কা নেই। সবাই একসঙ্গে মিলে সুন্দরভাবে কর্মিসভা সফল করবে এটা আমাদের আশা।’
নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী হলের সভাপতি জেরিন বলেন, ‘কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বস্তরের শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই কর্মিসভা নিয়ে উত্তেজনাপূর্ণ মনোভাব বিরাজ করছে। বিশ্ববিদ্যালয় দীর্ঘ সময় পর নতুন নেতৃত্ব দেখতে পাবো বলে সবাই আশাবাদী । বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবিষ্যৎ কমিটির একজন পদপ্রত্যাশী হিসেবে আমি চাই বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত শিক্ষার্থীদের মধ্যে থেকে এবং যারা ২০১৭-এর কমিটির পরবর্তী সময়ে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছে, রাজপথে যাদের বিরামহীন পদচারণা ছিল তাদের মধ্য থেকে নেতৃত্ব উঠে আসুক।’
সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাদাত মো. সায়েম বলেন, ‘কর্মিসভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করবে। প্রত্যেক হল থেকেই প্রার্থী আছে। তাই বিশৃঙ্খলা এড়াতে প্রত্যেক প্রার্থী থেকে স্বেচ্ছাসেবকের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। কর্মিসভায় যাতে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সে লক্ষ্যে প্রশাসন সতর্ক থাকবে। বহিরাগত কেউ যদি কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা বা ঝামেলা করে পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন।’
সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী সজন বরণ বিশ্বাস বলেন, ‘ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে যেভাবে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সেভাবেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আর কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা যাতে না হয় সেদিকে সকল নেতাকর্মী সজাগ আছেন। তবুও যদি কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় তাহলে দোষীদের চিহ্নিত করে সরাসরি বহিষ্কারের করার জন্য নির্দেশনা আছে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক নিরাপত্তা বিষয়ে জানতে প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) কাজী ওমর সিদ্দিকী রানার সঙ্গে যোগাযোগ করতে মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি কোনো সাড়া দেয়নি।
মন্তব্য করুন