নাসিম পারভেজ
প্রকাশ : ২৭ জুন ২০২৩, ০৮:৫৬ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

কোরবানির সরঞ্জাম

ছবি : নাসির উদ্দিন
ছবি : নাসির উদ্দিন

ঈদ মানেই আনন্দের ফুলঝুরি। তবে কোরবানির ঈদের বিষয়টি আলাদা। বছর ঘুরে এ ঈদ ত্যাগের মহিমা নিয়ে হাজির হয় আমাদের মাঝে। আমরা সেই ত্যাগ স্বীকার করে থাকি পশু কোরবানির মাধ্যমে। এটাই আমাদের রীতি-রেওয়াজ। ঈদের দিন পশু জবাই থেকে শুরু করে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাসহ অনেক ধরনের ঝামেলা পোহাতে হয়। আর এ পশু কোরবানির রয়েছে অনেক ধাপ। যেমন পশু জবাই করা, মাংস রাখার উপকরণ ঠিক করা, তা পরিমাপ করা এবং জবাই করার স্থানটি পরিষ্কার করা।

আবার পশু কোরবানি দিতে প্রয়োজন হয় ছুরি, চাপাতি, দা, কুড়াল, কাঠের গুঁড়ির মতো যন্ত্রপাতি। পশু কোরবানিকে কেন্দ্র করে এ সময় রাজধানী ঢাকাসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলের কামারপল্লিগুলো অনেক ব্যস্ত সময় পার করে। দগদগে আগুনে গরম লোহায় বড় বড় হাতুড়ির পিটাপিটিতে মুখর হয়ে ওঠে কামারশালা। আবার কোরবানির সময় ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে এসব যন্ত্রপাতি শান দিতে শানের দোকানগুলোতেও ভিড় উপচে পড়তে থাকে। এ মৌসুমে ভ্রাম্যমাণ শানদানিদেরও সময় ভালোই ব্যস্ততায় কাটে। রাজধানীর অন্যতম বাজার কারওয়ান বাজারের কামারশালাগুলোর ব্যস্ততা এখন সবচেয়ে বেশি। কারণ কোরবানির পশু জবাই থেকে শুরু করে রান্না পর্যন্ত দা, বঁটি, ছুরি, চাপাতি ইত্যাদি হাতিয়ার প্রয়োজনীয় হয়ে ওঠে।

চাপাতি

কোরবানির পশু জবাইয়ের কাজে সবচেয়ে বেশি যে সরঞ্জামটি ব্যবহার করা হয় তা চাপাতি। গরুর চামড়া মোটা হলে সেই চামড়া ছাড়ানোর কাজেও এটি ব্যবহার করা যায়। এটি আকারে অনেকটা বড়, তাই নাড়াচাড়ার সময় সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। এ ছাড়া রেডিমেড বা অর্ডার দিয়েও বানিয়ে নিতে পারেন চাপাতি। হাতে বানানো দেশি চাপাতিগুলো কেজি হিসেবে বিক্রি হয়ে থাকে। প্রতি কেজি ওজনের চাপাতির দাম ৭০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত। এ ছাড়া বিদেশি চাপাতির দাম পড়বে ৯০০ থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত।

ছুরি-চাকু

পশুর চামড়া ছাড়ানোর জন্য ছুরি বা চাকু ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে, ব্যবহৃত ছুরি বা চাকু যেন অনেক ধারালো হয়। এ ছাড়া হাড় থেকে মাংস ছাড়াতেও ছুরি ব্যবহার করা হয়। বাজারে ছোট থেকে বড় অনেক সাইজের ছুরি-চাকু পাওয়া যায়। আপনার বাড়ির পাশের বাজারেই পেয়ে যাবেন ছোট-বড় বিভিন্ন সাইজের ছুরি-চাকু। বড় ছুরির দাম ১ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত। আর ছোট ছুরির দাম পড়বে ৩৫০ থেকে ৭৫০ টাকা পর্যন্ত।

দা ও বঁটি

পশু জবাইয়ের পর মাংস বানানোর জন্যই মূলত দা ও বঁটি ব্যবহার করা হয়। বাজারে দুই ধরনের দা পাওয়া যায়। যার একটি সাধারণ, অন্যটি রামদা। রামদা বড় হওয়ায় কিছুটা চাপাতির কাজ করে। এর সাইজ বা আকৃতি বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। এর হাতল কাঠ বা লোহার হতে পারে। সাইজের ভিন্নতার জন্য দামও আলাদা হয়ে থাকে। সাধারণত দা পাওয়া যাবে ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকার মধ্যে। আর বঁটি প্রতিটির দাম পড়বে ৩০০ থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত।

কুড়াল

মাংস বানানোর সময় মাংসের সঙ্গে বেশ কিছু মোটা হাড়ও থাকে, যেগুলো দা বা বঁটি দিয়ে পিস করা অত্যন্ত দুরূহ। সেসব মোটা হাড়কে পিস করতেই সাধারণত কুড়াল ব্যবহার করা হয়। বাজারে দুই ধরনের কুড়াল পাওয়া যায়। যার একটি দেশি কামারের তৈরি আর অন্যটি আকারে ছোট চায়নিজ কুড়াল। দেশি কামারের তৈরি কুড়াল সাধারণত গাছ কাটার কাজে ব্যবহার হয়। আর পশুর হাড় কাটার জন্য ছোট চায়নিজ কুড়াল ব্যবহার করা হয়। বাজারে এ ছোট চায়নিজ কুড়াল পাওয়া যাবে ৮০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকার মধ্যে।

অন্যান্য সরঞ্জাম

পশু কোরবানির সময় আরও কিছু সরঞ্জামের প্রয়োজন হয়। যেমন কাঠের গুঁড়ি পাওয়া যাবে ৫০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায়। মাংস রাখার পলি ও প্লাস্টিক ম্যাটের দাম পড়বে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা। বিভিন্ন ধরনের চপিং বোর্ড কেনা যাবে ৫০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায়। হ্যান্ড মিট কাটার পাওয়া যাবে ৫০০ থেকে ৮০০ টাকায়। জীবাণু ও দুর্গন্ধনাশক তরল ও ফ্লোরেক্স বোতল প্রতিটির দাম পড়বে ২০০ থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত। এ ছাড়া আরও লাগে চাটাই, মোটা পলিথিন, দাড়িপাল্লা ও দড়ি।

যেখানে পাওয়া যাবে

বাজারের অবস্থান ভেদে কোরবানির যন্ত্রপাতির দাম বিভিন্ন হতে পারে। তাই এসব সরঞ্জাম যেখান থেকেই কিনুন, একটু দরদাম করে কেনাই ভালো। ছুরি, বঁটি, চাপাতিসহ প্রয়োজনীয় সব জিনিসই পাবেন কারওয়ান বাজার, নিউমার্কেট, গুলশান-১ ডিএনসিসি মার্কেট, ডিএসসিসি মার্কেট, চকবাজার, বাবুবাজার, কাপ্তানবাজার, খিলগাঁও বাজার, মিরপুর-১, মিরপুর-১১-সহ সিটি করপোরেশনের সব মার্কেটেই। ঈদের দিনের বাড়তি ঝামেলা এড়াতে আগেভাগেই এসব প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সংগ্রহ করে রাখুন।

টিপস ১. ঈদের আগে আগে ধার দেওয়া কিংবা নতুন ছুরি কেনার কাজটি না করে বরং আগেভাগেই সেরে রাখুন। এতে করে শেষ মুহূর্তে তাড়াহুড়ো হবে না, আবার চড়া দামও গুনতে হবে না।

২. ঈদের আগের দিনই পশু জবাই করার চাপাতি, চামড়া ছাড়ানোর ছুরি, প্লাস্টিক ম্যাট, চাটাই, গাছের গুঁড়িসহ সবকিছু প্রস্তুত রাখতে হবে। ছুরি বা চাপাতি পাবেন আপনার আশপাশের কামারশালা বা হার্ডওয়্যারের দোকানগুলোতে। চাটাই ও গাছের গুঁড়ি পাবেন গরুর হাটেই। আবার অনেক ভ্রাম্যমাণ দোকানিরাও এ সবকিছু বিক্রি করে থাকেন।

৩. কোরবানির ঈদে অনেকেই খেয়াল করেন না, মাংস তৈরি হয়ে গেলে তা বাসায় নিয়ে আবার প্রক্রিয়াকরণ করতে হয়। এ সময়ও বেশ কিছু অনুষঙ্গের বেশ প্রয়োজনীয়তা লক্ষ করা যায়। এর মধ্যে অন্যতম চপিং বোর্ড, মিট হ্যামার, কিমা মেশিন ইত্যাদি। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ঈদের দিন মাংস নিয়ে খুব একটা ঝামেলা পোহাতে হয় না। তাই সুবিধামতো আগে থেকেই কাজগুলো ধীরে ধীরে গুছিয়ে রাখুন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

যুক্তরাষ্ট্রে ভয়াবহ বিস্ফোরণ, বহু হতাহত

বৃষ্টি আর কতদিন থাকবে, জানাল আবহাওয়া অফিস

ইলিয়াস কাঞ্চনের মৃত্যুর গুজব, যা বললেন ছেলে জয়

শান্তিতে নোবেলজয়ী মারিয়াকে প্রধান উপদেষ্টার অভিনন্দন

দলে দলে ঘরে ফিরছে হাজারো গাজাবাসী

সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা

রাজধানী থেকে বগুড়া শহর আ. লীগের সাধারণ সম্পাদক গ্রেপ্তার

হেফাজতে ইসলাম সবার জন্য পরামর্শকের দায়িত্ব পালন করছে :  এ্যানি

দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

রাবি প্রশাসনের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁসের অভিযোগ

১০

ট্রাম্পকে নোবেল শান্তি পুরস্কার উৎসর্গ করলেন মারিয়া

১১

দেশের ৪০ শতাংশ নারী থাইরয়েডে আক্রান্ত!

১২

‘এই পচা চালের ভাত কীভাবে খাব’

১৩

‘পুলিশ এখন বানরের মতো’ বললেন ওসি হাবিবুল্লাহ

১৪

ভেনেজুয়েলার বিপক্ষে যে একাদশ নিয়ে নামতে পারে আর্জেন্টিনা

১৫

গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরতে একমাত্র পথ সুষ্ঠু নির্বাচন : নীরব

১৬

যশোরের ৪ মহাসড়কে মহাদুর্ভোগ

১৭

সুদের টাকা না পেয়ে ঘরের টিন কাঠ খুঁটি খুলে নিলেন ইমাম

১৮

সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলামের মৃত্যুতে ঢাবি সাদা দলের শোক

১৯

কিউইদের কাছে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের শোচনীয় পরাজয়

২০
X