কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৫ জানুয়ারি ২০২৫, ০৫:৫৫ পিএম
আপডেট : ০৫ জানুয়ারি ২০২৫, ০৭:১১ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

বাবাকে নিয়ে যা বললেন তাহসানের হবু স্ত্রী

বাবাকে নিয়ে যা বললেন তাহসানের হবু স্ত্রী। ছবি : সংগৃহীত
বাবাকে নিয়ে যা বললেন তাহসানের হবু স্ত্রী। ছবি : সংগৃহীত

মেকআপ আর্টিস্ট রোজা আহমেদ। একদিনেই দেশের মানুষের মাঝে ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছেন তিনি। যার কারণ সংগীতশিল্পী ও অভিনেতা তাহসান খান। যার সঙ্গে বিয়ের খবর প্রকাশের পরই আলোচনায় তিনি। এরপরই তাকে নিয়ে শুরু হয় দেশের গণমাধ্যমে চর্চা। তার মাঝেই রোজার পুরোনো একটি স্ট্যাটাস ভাইরাল হয়। যেটি তিনি ২০২৪ সালে ৪ জুন নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে শেয়ার করেছিলেন।

বাবাকে নিয়ে আবেগঘন স্ট্যাটাসের শুরুতে রোজা লিখেছেন, ‘সেলফিটা একটু আগেই তুলেছি। সাধারণত আমার অনেক ছবি তোলা হয়। কিন্তু আজ এই সেলফিটা তোলার সময় চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছিল। অনেক সময় ধরে কাঁদলাম। কিন্তু কী মনে করে কাঁদছি বা কেন কাঁদছি তা বুঝে উঠতে পারছিলাম না। আমি বাবা-মায়ের প্রথম সন্তান। তাই সব থেকে আদরের ছিলাম সবার। আর বাবা আমাকে সব সময় বলতেন ‘আমার ছোট্ট পরীটা কইরে’। সেই সময় বরিশাল শহরে আমাদের পরিবারের বেশ প্রভাব ছিল। ছোটবেলায় কখনো কমতি পাইনি। এর বাসায় দাওয়াত, তার বাসায় দাওয়াত আর যেতেই হবে কারণ আমাদের ছাড়া দাওয়াত অসম্পূর্ণ হবে। এমন দিন গিয়েছে দিনে ৪টা দাওয়াতেও অংশ নিয়েছি। শুধু দেখা করে আসার জন্য। ’

তিনি আরও লিখেছেন, ‘হঠাৎ বাবা আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন ওপারে। যতদিনের হায়াত তিনি নিয়ে এসেছেন ততদিন ছিলেন আমাদের সাথে। অভিযোগ তো অনেক জমা আছে, বাবার সেই ছোট্ট পরীটার, কিন্তু অভিযোগ কার কাছে করব? আর বাবা শুধু আমাদের ছেড়ে চলে যাননি, সাথে সাথে যে মানুষগুলো আমাদের এত সম্মান করতেন তাদের ভালোবাসাও চলে গেল আমাদের ওপর থেকে। আর সেই দিনটাতেই প্রথম বুঝতে পেরেছিলাম, যে ভালোবাসা আমরা পেয়েছি তা সবই বাবাকে ঘিরে আর সাথে অনেক অনেক স্বার্থ। বাবা চলে যাওয়ারি ঠিক ২ মাসের মাথায় আমার এক রিলেটিভের বিয়ে। আমরা অনেক ঘনিষ্ঠ ছিলাম একে ওপরের, কিন্তু বিয়েতে দাওয়াত পেলাম না। যে রিলেটিভরা সেই বিয়েতে অংশ নিয়েছে সবাই ফোন করতে শুরু করল মাকে। কেন আমরা গেলাম না, কোথায় আমরা? বরিশালে আছি কিনা এই সেই। সেদিন সারারাত বসে দেখেছি মায়ের সেই সরল মনের কান্না। আপনারা লেখাটা পড়ে ভাবতে পারেন, দাওয়াত পাইনি বলে কাঁদছি? কিন্তু দাওয়াতের জন্য নয়, একই দালানে সবাই আনন্দ করছে, আমি, মা আর ছোটো ভাই উৎস তখন বাসার এক কোণে। খুব চিৎকার দিয়ে বলতে ইচ্ছে হচ্ছিল, বাবা তুমি একটু দেখে যাও, যাদের জন্য এত করেছ তারা আমাদের সব ফিরিয়ে দিচ্ছে। ’ এরপর তাদের জীবনে তার বাবার অবদান নিয়ে আরও লিখেছেন, ‘বাবা আমাদের জন্য অনেক কিছুই রেখে গেছেন, দাদা ভাইয়ের অনেক আছে কিন্তু কিছুই গোছানো না, কে বুঝেছেন যে এত অকালে উনি চলে যাবেন আমাদের ছেড়ে! আর দাদার সব সম্পত্তিতেই চাচা-ফুফুদের ভাগ আছে। মায়ের খুব অল্প বয়সেই বিয়ে হয়েছে। পড়াশোনার সুযোগ পায়নি। আর আমি চলে আসি তাদের কোলে। আমার মা খুব সরল মনের, দিন-দুনিয়ার কিছুই বোঝে না। সে যে নিজের ভয়েস রেইজ করবে বা তার সেটা রেইজ করার অধিকার আছে সেটা তার ধারণার বাইরে। কখনো তার সেই সাহসটাই ছিল না যে তার শ্বশুরকে বলবে, বাবা আমাদের সম্পত্তিটুকু আমাদের বুঝিয়ে দিন। আর উৎস তো তখন অনেক ছোট। আমরা দুই ভাইবোন তখন পিচ্চি পিচ্চি। আমাদের পড়াশোনার খরচ তখন একদম হিসাব করে টায় টায় দেওয়া হতো মায়ের হাতে। তাই কিছু খেতে ইচ্ছে করলে বলতাম না যাতে উৎস যেটা চায় সেটা যাতে পায়। আমার দিক থেকে একটু কম হলেও সমস্যা নেই।’

এরপর স্ট্যাটাসের শেষভাগে তিনি আরও লিখছেন ‘বাবা মারা যাওয়ার পর থেকেই প্রস্তাব আসা শুরু করে। এই রিলেটিভ একে আনে ওই রিলেটিভ ওকে আনে। সেই সময় আমি প্রথম ভয়েস রেইজ করেছি, আমার বয়স কম আর বাবা মারা গেছেন তো কি হয়েছে! বাবার আর আমার স্বপ্ন তো মারা যায়নি! ওই দিন কথাটায় খুব মাইন্ড করেছিল আমার কাছের লোকজন। বড়দের মুখে মুখে কথা, আমি আর মানুষ হব না। আর সেই থেকেই রটানো হয় কতো কথা। সারাদিন নাকি ছেলেদের সাথে ঘুরি, আমার বন্ধু-বান্ধব সার্কেল ভালো না, পর্দা করি না আরও কতো কি! মেয়ে তো নিশ্চয়ই প্রেম করে আর না হলে এতো ভালো প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয়? আর প্রতিদিন এভাবেই বাসায় অভিযোগ আসা শুরু করে। কিন্তু আমার ভয়েস রেইজে সবাই এভাবে রিঅ্যাক্ট করবে বুঝতে পারিনি। আমার মা এত অভিযোগ শুনতে শুনতে বললেন, তুই আমাকে ছুঁয়ে বল এসব অভিযোগ কি সত্যি? আমি মাকে ছুঁয়ে বললাম, না মা সব মিথ্যে। আমি তো স্কুল আর বাসা বাদে কোথাও যাই না। এই বলে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করলাম মায়ের সাথে। ওইদিনের পর থেকে মা আমার সাথে নিয়মিত কোচিং-এ যেতেন আবার এসে বাসার সবার জন্য রান্না করতে হতো, খুব কষ্ট হয়ে যেত তার। তখন নিজের কাছে মনে হত আমি সবার জন্য একটা বোঝা, সব ক্ষেত্রেই আমার দোষ। দিনের পর দিন এভাবেই চলতে থাকে। হঠাৎ দাদাভাই অসুস্থ হয়ে পড়েন, আর সেই থেকে আমার সাথে কোচিং-এ যাওয়া বন্ধ করে দেন মা। কারণ তাদের সেবা যত্ন করতে হতো মাকেই। তখন থেকেই একা একা চলা শুরু করলাম।’

জানা গেছে, রোজার বাবার নাম ফারুক আহম্মেদ ওরফে পানামা ফারুক। যিনি ২০১৪ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি র‍্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে মারা গিয়েছিলেন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ইসরায়েলের হামলায় ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর গোয়েন্দাপ্রধান নিহত

দাউ দাউ করে জ্বলছে ইসরায়েল

ইসরায়েলের বিমানবন্দরে আঘাত হানল ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র

নেতানিয়াহুর বাসভবন এলাকায় ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা

এবার ইসরায়েলিদের ফিলিস্তিনের অধিকৃত অঞ্চল ছাড়তে বলল ইরান

মুসিয়ালা ম্যাজিক! অকল্যান্ডকে ১০-০তে গুঁড়িয়ে দিল বায়ার্ন

ইসরায়েলিদের পালাতে বলল সেনাবাহিনী

ইরানের হাইপারসনিক ইসরায়েলের হাইফা তেল আবিব ও নেগেভ বিমানঘাঁটিতে আঘাত করেছে

কী কথা বললেন এরদোয়ান-ট্রাম্প?

ঘাড় ধাক্কা দিয়ে ছাত্রের হাত ভেঙে দিলেন মাদ্রাসা শিক্ষক

১০

কোল্ড স্টোরেজে ভাড়া বৃদ্ধি প্রতিবাদে আলু চাষিদের বিক্ষোভ

১১

নরসিংদীতে বিএনপির দুগ্রুপের সংঘর্ষ, ওসিসহ আহত ৪

১২

জনগণই বিএনপির মূল শক্তি : খোকন

১৩

পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত হবে আন্তর্জাতিক টুরিস্ট স্পট : চসিক মেয়র

১৪

দুই উপদেষ্টার গাড়ি আটকে বিক্ষোভ, যুবদল নেতাকে বহিষ্কার

১৫

সিলেট ওসমানী মেডিকেলে কর্মবিরতিতে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা

১৬

‘৫ আগস্ট স্বৈরাচার হাসিনার পলায়ন বাংলাদেশের বিপ্লবের ইতিহাসের স্বর্ণালী দিন’

১৭

খামেনির ওপর হামলার বিষয়ে যে অবস্থান নিলেন ট্রাম্প

১৮

এবার এইচএসসি পরীক্ষায় আসনের দূরত্ব বাড়ছে

১৯

ইসরায়েলের হামলা নিয়ে আসল সত্য বললেন ইরানের প্রেসিডেন্ট

২০
X