কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৪ জুন ২০২৫, ০৬:১২ পিএম
আপডেট : ২৪ জুন ২০২৫, ০৭:২০ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

কাঠগড়ায় স্ত্রীর হাত ছেড়ে দিতে বলায় পুলিশকে ধমক দিলেন নোবেল

আদালত প্রাঙ্গণে মাইনুল আহসান নোবেল ও তার স্ত্রী ইডেন মহিলা কলেজের ছাত্রী ইসরাত জাহান প্রিয়া। ছবি : কালবেলা
আদালত প্রাঙ্গণে মাইনুল আহসান নোবেল ও তার স্ত্রী ইডেন মহিলা কলেজের ছাত্রী ইসরাত জাহান প্রিয়া। ছবি : কালবেলা

স্ত্রী ইডেন মহিলা কলেজের ছাত্রী ইসরাত জাহান প্রিয়ার দায়ের করা ধর্ষণ মামলায় জামিন শুনানি চলছিল আলোচিত গায়ক মাইনুল আহসান নোবেলের। আদালতের কাঠগড়ায় স্ত্রীর হাত ধরে হাসিমুখে গল্প করছিলেন দুজনে। এ সময় পুলিশ সদস্য হাত ছেড়ে দিতে ও আসামি থেকে দূরে যেতে বলায় কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে ওই পুলিশ সদস্যকে ধমক দেন নোবেল।

মঙ্গলবার (২৪ জুন) বেলা ১২টা ২৩ মিনিটের দিকে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মেহেরা মাহবুবের আদালতে হাজির করা হয় নোবেলকে। এরপর বিচারক এজলাসে না থাকা অবস্থায় কাঠগড়ায় স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে থাকেন নোবেল। কখনো হাত ধরে, কখনো কানে কানে ফিস ফিস করে হেসে হেসে কথা বলতে থাকেন দুজনে।

এ সময় দুপুর ১২ টা ৫০ মিনিটের দিকে সাজ্জাদ নামে কোর্টের এক পুলিশ সদস্য নোবেলের স্ত্রী প্রিয়াকে জানান, ‘কোর্টে এভাবে আসামির হাত ধরে থাকা নিষেধ। আপনি কাঠগড়া থেকে একটু দূরে গিয়ে দাঁড়ান।’ এ ঘটনায় রীতিমতো বিগড়ে যান নোবেল। তিনি ওই পুলিশ সদস্যকে বলেন, ‘এই আপনার নাম কী?’ তবে পুলিশ সদস্য উত্তর না দেওয়ায় ফের নাম জানতে চান নোবেল। এরপরেও কোনো উত্তর না মিললে নোবেল পুলিশ সদস্যকে বলেন, ‘আপনার কোনো কিছু দরকার?’। তখন পুলিশ সদস্য ‘না’ উত্তর দেন।

ওই সময় রাগের সুরে ওই পুলিশ সদস্যকে বলেন, ‘তাহলে এখান থেকে সরে যান। দূরে যান বলছি। সে আমার স্ত্রী। আমার স্ত্রীর হাত ধরে কথা বলছি।’

এ সময় ওই পুলিশ সদস্য মলিন মুখে সরে আসেন। সাজ্জাদ নামে ওই পুলিশ সদস্যের সঙ্গে কথা হয় কালবেলার এ প্রতিবেদকের। সাজ্জাদ বলেন, আদালতের অনুমতি ব্যতিত আসামিদের সঙ্গে বাইরের মানুষদের কথা বলা ও কোনো কিছু আদান প্রদান করা নিষেধ। আমি এটা বলায় উল্টো আমার সঙ্গে আসামি খারাপ আচরণ করল।

এ দিকে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে স্ত্রী প্রিয়াকে পাঞ্জাবির পকেট থেকে ১৫-২০টি ছোট ছোট চিরকুটও দিতে দেখা যায় নোবেলকে। এর অধিকাংশই প্রেম নিবেদন বা ‘লাভ লেটার’। এগুলোর ভেতর সিগারেটের প্যাকেটের সাদা অংশে লেখা একটি লাভ লেটার স্ত্রীকে দেন নোবেল। এতে লেখা ছিল- ‘তুমি আমার প্রাণের প্রিয়া। তোমাকে ভালোবাসি। আই লাভ ইউ’। একেকটি চিঠি স্ত্রীর হাতে দেন নোবেল, তা দেখে হাসিতে আবেগে আপ্লুত হন স্ত্রী প্রিয়া।

এ দিকে কিছুক্ষণ পর এজলাসে আসেন বিচারক। এরপর আসামিপক্ষের আইনজীবী মো. মনির উদ্দিন ও আমিনুল ইসলাম মল্লিক নোবেলের জামিন চান। বাদী প্রিয়াও আদালতকে বলেন, ‘আসামি জামিন পেলে তার কোনো আপত্তি নেই।’ শুনানি শেষে একটু পর আদালত আসামি নোবেলকে ১ হাজার টাকা বন্ডে জামিন মঞ্জুর করেন। শুনানি শেষে আসামি নোবেল ও তার স্ত্রী হাসি মুখে একসঙ্গে হাতে হাত ধরে হাজতখানায় যান।

এর আগে গত ১৯ জুন কারা কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে নোবেল ও প্রিয়ার বিয়ে হয়। তার আগে গত ১৮ জুন তাদের কাবিনমূলে বিয়ের ব্যবস্থা করার জন্য কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন আদালত।

গত ১৯ মে নোবেলের বিরুদ্ধে ধর্ষণ, নির্যাতন ও পর্নোগ্রাফি আইনে মামলা করেছিলেন ইডেন মহিলা কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী ইসরাত জাহান প্রিয়া। মামলা দায়েরের পরই নোবেলকে ডেমরা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ওই দিনই জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।

এ দিকে মামলার অভিযোগে বলা হয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুক্তভোগী ইডেন কলেজের ছাত্রী প্রিয়ার সঙ্গে নোবেলের পরিচয় হয়। এরপর তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। গত বছরের ১২ নভেম্বর গায়ক নোবেল তার স্টুডিও দেখানোর কথা বলে ভুক্তভোগীকে ডেমরা থানাধীন তার বাসায় নিয়ে যায় আসামি নোবেল। এরপর কয়েকজন আসামির সহায়তায় ওই ছাত্রীকে আটকে রাখে।

এরপর ১২ নভেম্বর রাত ৮টার সময় ভুক্তভোগীকে আটক করে রাখে এবং তার মোবাইল নিয়ে নেয়। বাদী তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলার জন্য আসামিকে মোবাইল ফোন ফেরত দেওয়ার জন্য বললে নোবেল ওই ছাত্রীর ২৬ হাজার টাকার রেডমি ১০ প্রো মোবাইল ফোন ভেঙে ফেলে।

এরপর আসামি নোবেল তার বসতঘরে আটক রেখে ওই ছাত্রীকে ধর্ষণ করে এবং ধর্ষণের ভিডিও তার মোবাইল ফোনে ধারণ করে রাখে। নোবেলের কথামতো বাসায় না থাকলে তার মোবাইল ফোনে ধারণকৃত ধর্ষণের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেবে বলে জানায়। তাই বাদী আসামির ভয়ে কাউকে কোনো কিছু বলার সাহস পাননি।

অভিযোগে আরও বলা হয়, এরপর আসামি নেশাগ্রস্ত অবস্থায় বিভিন্ন তারিখ ও সময়ে বাদীকে মারধর করত। আসামি তার সহযোগী অজ্ঞাতনামা আরও ২/৩ জনের সহায়তায় বাদীকে নির্যাতন করে একটি কক্ষে আটক করে রাখে।

ওই ঘটনার একটি ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বাদীর বাবা-মা তাকে চিনতে পারে। এরপর তারা জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কল দিলে গত ১৯ মে রাত সাড়ে ৯টায় নোবেলকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং ভুক্তভোগী ছাত্রীকে উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় ডেমরা থানায় অপহরণের পর ধর্ষণের অভিযোগে নোবেলের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। যদিও পরে নোবেলের সঙ্গে মামলার বাদী প্রিয়ার প্রেম ও ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

চীনের প্রশংসায় বিএনপি

দুঃখ প্রকাশ করে ইরানের প্রেসিডেন্টের কাতারের প্রতি বার্তা

ঢাবিতে ককটেল বিস্ফোরণ

হাসনাতের পোস্টে দুদকে তোলপাড় / তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ দুর্নীতি দমন কমিশনের

সংঘাত থামছে না, উল্টো আরও জটিল রূপ নিচ্ছে

যেসব লক্ষ্য পূরণ হওয়ায় যুদ্ধবিরতিতে রাজি হন নেতানিয়াহু

‘দাঁড়িপাল্লায় ভোট দিন’ স্লোগান দিয়ে বিপাকে বিএনপির ১৩ নেতা

অধ্যক্ষের ‘ভুয়া’ সনদ তদন্তে দুদকের অভিযান

ভাঙনে ছোট হয়ে আসছে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত

কাজ না করেই বিল উত্তোলন, প্রতিবেদন জমা হয়নি ৫ কর্মদিবসেও

১০

দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আবারও বজ্রসহ ভারী বর্ষণের আভাস

১১

চট্টগ্রাম প্রতিদিন সম্পাদক আয়ান শর্মার বাবার পরলোকগমন

১২

জাতিসংঘ পানি কনভেনশনে যুক্ত হলো বাংলাদেশ

১৩

জনগণের ভেতরে বিএনপির শেকড় : প্রিন্স

১৪

ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলি সেনা নিহত

১৫

ইরানের জালে আটক মোসাদের ৬ এজেন্ট

১৬

প্রতীকসহ নিবন্ধন ফেরত পাওয়ায় খুশি জামায়াত

১৭

স্কুল ভবন নির্মাণ / কাজ শেষ না করেই বিল ভাউচারে সই নেওয়ার অভিযোগ

১৮

ঢাবির পুকুরে মাছের পোনা ছাড়লেন ছাত্রদল নেতা

১৯

বাংলাদেশে পুশইন, ক্ষোভ ঝাড়লেন মমতা

২০
X