আমাদের দিনের শুরুটা যেমন ব্যস্ততায়, শেষটাও তেমনি দৌড়ঝাঁপে ভরা। সকালে ঘুম থেকে উঠতে দেরি, অফিসে পৌঁছতে দেরি, আর স্বাভাবিকভাবেই রাতে বাড়ি ফিরতেও দেরি। ফলে রাতের খাবার খাওয়ার সময়টাও পিছিয়ে যায় ঘড়ির কাঁটায়। কারও কারও ক্ষেত্রে রাত ১২টার পরও খাওয়া শেষ হয় না। কিন্তু চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদরা বলছেন, এই অভ্যাসই নীরবে বাড়িয়ে দিচ্ছে ওজন ও নানা জটিল রোগের ঝুঁকি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, নিয়ন্ত্রণহীন ওজন আজ এক নতুন ‘অতিমারী’হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমেরিকায় প্রায় প্রতি পাঁচজনের মধ্যে তিনজনই স্থূলতার শিকার। বাংলাদেশেও এর হার দ্রুত বাড়ছে।
চিকিৎসকরা সতর্ক করে বলছেন, এখনই সচেতন না হলে ২০৫০ সালের মধ্যে এই স্থূলতা ভয়াবহ রূপ নেবে। কারণ, অতিরিক্ত ওজন শুধু বাহ্যিক সৌন্দর্যের সমস্যা নয়, এটি ডায়াবেটিস, হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরল এমনকি ক্যানসারেরও কারণ হতে পারে।
‘ওজন ঝরাতে হলে সূর্যকে অনুসরণ করতে হবে’
আমেরিকার পুষ্টিবিদ ও চিকিৎসক অ্যাসলে লুকাস জানান, দেহের নিজস্ব ঘড়ির (সার্কাডিয়ান ক্লক নামে) সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে খাবার খেলে বিপাকহারে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। হরমোনের ভারসাম্যও বজায় থাকে।
তার মতে, ‘ওজন কমাতে চাইলে সূর্যকে অনুসরণ করুন। সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ের মধ্যে খাবার খাওয়ার রুটিন সাজান। রাতের খাবার খাওয়ার আদর্শ সময় সন্ধ্যা ৬টা থেকে ৭টার মধ্যে। এতে শরীরের মেটাবলিজম ভালো থাকে এবং রাতের খাবার ও পরদিনের নাশতার মধ্যে অন্তত ১২ ঘণ্টার ব্যবধান বজায় রাখা যায়।’
সন্ধ্যা ৭টার আগে রাতের খাবার শেষ করলে কী কী উপকার হয়
১. হজম শক্তি বৃদ্ধি
সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে রাতের খাবার খেয়ে নিলে শরীরের কাছে হজমের জন্য পর্যাপ্ত সময় থাকে। এতে অজীর্ণতা, গ্যাস, বুক জ্বালা ইত্যাদি সমস্যা কমে যায়।
২. রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ
রাতের খাবার তাড়াতাড়ি শেষ করলে ইনসুলিনের মাত্রা স্থিতিশীল থাকে। এতে রক্তে শর্করার ওঠানামা কম হয় এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে।
৩. বিপাক হার বৃদ্ধি
খাবার তাড়াতাড়ি গ্রহণ করলে শরীরের বিপাকহার উন্নত হয়, যা ওজন নিয়ন্ত্রণ ও ফ্যাট বার্নিংয়ের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলাদেশি পুষ্টিবিদদের মতেও সময়টাই মূল চাবিকাঠি
দেশের পুষ্টিবিদরাও বলছেন, রাতের খাবার দেরিতে খাওয়ার প্রবণতা এখন শহুরে জীবনের বড় সমস্যা। রাতে খাওয়ার পরপরই ঘুমিয়ে পড়লে শরীরের বিপাকক্রিয়া ধীর হয়ে যায়। ফলে বাড়তি ক্যালরি চর্বি হিসেবে জমে থেকে ওজন বাড়ায়।
তাই ব্যস্ত জীবনযাপনেও চেষ্টা করুন রাত ৭টার মধ্যেই খাবার শেষ করতে। এতে ওজন যেমন নিয়ন্ত্রণে থাকবে, তেমনি ঘুমও হবে গভীর ও প্রশান্তিময়।
সূত্র : এই সময় অনলাইন
মন্তব্য করুন