সুন্দর হাসি অনেক সময় জটিল বিষয়কে সহজ করে তোলে। শুধু তাই নয়, ব্যক্তির সৌন্দর্যও অনেকখানি নির্ভর করে সুন্দর হাসির ওপর। আর এই সুন্দর হাসি অনেকটাই নির্ভর করে সুস্থ ও সুন্দর দাঁতের ওপর।
সঠিক সময়ের সঠিক যত্ন ও পরিচর্যাই পারে সুস্থ দাঁতের নিশ্চয়তা দিতে। পরিচর্যার অভাবে দাঁতের সমস্যা প্রাথমিকভাবে হালকা ব্যথা থেকে শুরু করে ধীরে ধীরে তা তীব্র ব্যথায় রূপ নেয়। দাঁতের সমস্যার কোনো বয়স নেই। শিশু থেকে শুরু করে ৬০ বছরের বৃদ্ধেরও এ ব্যথা হতে পারে।
চিকিৎসকরা মনে করেন, বয়স বাড়ার সঙ্গে দাঁত নড়া বা পড়ার কোনো সম্পর্ক নেই। সম্পর্ক সঠিক পরিচর্যার সঙ্গে।
সাধারণত খাওয়ার পর দাঁতের ফাঁকে খাদ্যকণা জমে থাকে। বিশেষ করে আঠালো, শর্করা ও মিষ্টিজাতীয় খাবার হলে তো কথাই নেই। এসব খাদ্যকণা মুখের মধ্যে থাকা নানা ব্যাকটেরিয়া বা ওরাল ফ্লোরার আবাস ও বংশবৃদ্ধির জন্য উপযুক্ত স্থান। নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে এই খাদ্যকণায় পচন ধরে এবং লেকটিক অ্যাসিড নামে এক ধরনের অ্যাসিড নির্গত হয়। ওই সময় মুখে দুর্গন্ধ হয় এবং দীর্ঘমেয়াদি অ্যাসিড ধীরে ধীরে দাঁতের অ্যানামেল এবং আরও পরে ডেন্টিনকে ক্ষয় করে, যাকে আমরা বলি দাঁতক্ষয় বা ডেন্টালক্যারিজ। এভাবে দাঁত ক্ষয় হয়ে দাঁতের মধ্যে গর্ত বা ক্যাভিটি তৈরি হয়, যেখানে সহজেই ময়লা ও খাদ্যকণা জমে সংক্রমণ ও ক্ষয় আরও দ্রুত হয়।
এ ক্ষয় প্রক্রিয়া যখন দাঁতের মজ্জা বা পাল্প পর্যন্ত পৌঁছায়, তখন দাঁতের পাল্পে এক ধরনের প্রদাহ তৈরি হয় এবং তীব্র ব্যথা ও শিরশির অনুভূতি শুরু হয়।
এ বিষয়ে দন্ত চিকিৎসক আশরাফুল হক সাইফ কালবেলা অনলাইনকে বলেন, ইনফেকশন বা প্রদাহ বাড়তে থাকলে পেরিয়াপিক্যাল ইনফেকশন, পরবর্তীকালে পেরিয়াপিক্যাল অ্যাবসেস, পেরিয়াপিক্যাল গ্র্যানিওলোমা এবং পেরিয়াপিক্যাল সিস্ট তৈরি হয়। পেরিয়াপিক্যাল ইনফেকশন ও অ্যাবসেস একুইট কন্ডিশন হওয়ায় ব্যথা খুব তীব্র হয়। অন্যদিকে পেরিয়াপিক্যাল অ্যাবসেস ও সিস্ট মোটামুটি ক্রনিক বা দীর্ঘমেয়াদি হওয়ায় ব্যথা তত তীব্র না হলেও সারাক্ষণ একটা ব্যথা অনুভূত হয়। এ ইনফেকশন যদি কোনো একপর্যায়ে চোয়ালের হাড়ে পৌঁছায়, তখন অস্টিওমায়লাইটিস হয় এবং ব্যথা অনুভূত হয়।
তিনি আরও বলেন, অনেক সময় বাহ্যিক কোনো আঘাতের কারণে দাঁত ভেঙে গিয়ে কিংবা রুট ক্যানেল চিকিৎসার জন্যও গর্ত হতে পারে এবং সেখানে খাদ্যকণা জমে সংক্রমণ হয়ে তীব্র ব্যথা হতে পারে। আবার এসব কারণে যদি অ্যাপেক্স নার্ভ ইনজুরি বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাতেও তীব্র ব্যথা হতে পারে। তাই দাঁতে ব্যথা হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
সাধারণত দাঁত ও মাড়ির বিভিন্ন ধরনের সমস্যার কারণে দাঁতব্যথা হয়। তাই দাঁতের যত্ন নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং নিম্নোক্ত বিষয়গুলো মেনে চলা উচিত—
অনেকেই জোর দিয়ে এবং দীর্ঘ সময় দাঁত ব্রাশ করেন। জোর দিয়ে ব্রাশ করার ফলে দাঁতের অ্যানামেল স্তরটি মুছে গিয়ে সেনসিটিভিটি দেখা দিতে পারে। তাই সঠিক নিয়ম অনুসরণ করে দাঁত পরিষ্কার করতে হবে।
কোনো দুর্ঘটনা বা হঠাৎ পড়ে গিয়ে দাঁতে চাপ লাগতে পারে। এতে অনেক সময় দাঁতের সমস্যা সৃষ্টি হয়। এ থেকেও দাঁতে ব্যথা হতে পারে।
দাঁত ও মাড়িতে সংক্রমণ দাঁতব্যথার খুব সাধারণ কারণ। সংক্রমণ হলে মাড়ি ফুলে যায়, যার ফলে ব্যথা হয়। তাই সব সময় দাঁত পরিষ্কার রাখতে হবে।
অনেকের এই অভ্যাস থাকে। দীর্ঘ সময় দাঁত পিষলে দাঁতে ব্যথা হয়।
সুস্থ দাঁতের জন্য বা দাঁতের ব্যথা এড়ানোর জন্য নিয়মিত ব্রাশ করার পাশাপাশি ফ্লস বা সুতা দিয়ে প্রতিটি দাঁতের ফাঁকের খাদ্যকণাগুলো বের করে ফেলুন। এতে যেমন মুখে দুর্গন্ধ হবে না, তেমনি দাঁতের ক্ষয়ও এড়ানো যাবে। প্রতিদিন সকালে নাশতার পর ও রাতে খাবার খাওয়ার পর দুবার সঠিকভাবে দুই মিনিট ধরে দাঁত ব্রাশ করতে হবে।
এ ছাড়া প্রতিদিন অন্তত একবার জীবাণুনাশক মাউথওয়াশ দিয়ে অথবা এক গ্লাস কুসুম গরম পানিতে এক চিমটি লবণ মিশিয়ে মুখ কুলিকুচি করুন। এতে দাঁতের ক্ষয় ও মাড়ির রোগ বেশিরভাগই প্রতিরোধ করা যায়।
তবে দাঁতের সমস্যা ধরা পড়লে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
মন্তব্য করুন