জলবায়ুর প্রভাবে আরও বেশি প্রলয়ংকরী হয়ে উঠছে শতাব্দীর ভয়াবহতম ঝড়। এ ঝড়ের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো ভারি বৃষ্টিপাত বা তুষারপাত, শক্তিশালী বাতাস এবং উপকূলীয় এলাকায় বন্যা। শীতকালে যখন ঠান্ডা বাতাস এবং উষ্ণ বাতাস মিলিত হয়, তখন এই ধরনের ঝড় সৃষ্টি হয়। এই ঝড় উপকূলীয় এলাকায় ভূমিধস, বাড়িঘরের ক্ষতি এবং সমুদ্রের ঢেউয়ের কারণে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির কারণ হতে পারে।
এই ভয়াবহ ঝড়কে বলা হয় নর’ইস্টার ঝড়। নতুন গবেষণা বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব উপকূলে ভয়াবহ তুষারপাত, বৃষ্টি ও বন্যা নিয়ে আছড়ে পড়া সবচেয়ে বিধ্বংসী নর’ইস্টার ঝড়গুলো আরও ভয়াবহ হয়ে উঠছে।
এ ঝড়টি সাধারণত সেপ্টেম্বর থেকে এপ্রিলের মধ্যে সৃষ্টি হয়। উত্তরের ঠান্ডা আর্কটিক বাতাস ও আটলান্টিক মহাসাগরের উষ্ণ ও আর্দ্র বাতাসের মধ্যে তাপমাত্রার পার্থক্যের ফলে এটির সৃষ্টি হয়। এ ধরনের ঝড়গুলো যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব উপকূলের ঘনবসতিপূর্ণ শহরগুলোর জন্য বিশাল হুমকি। মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএনের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
১৯৯৩ সালে ঘণ্টায় ১০০ মাইলের বেশি গতির ঝোড়ো বাতাস নিয়ে তাণ্ডব চালায় শতাব্দীর ভয়াবহতম ঝড় বা স্টর্ম অব দ্য সেঞ্চুরি। এতে কোথাও কোথাও ৬০ ইঞ্চি পর্যন্ত তুষারপাত হয় এবং দুই শতাধিক মানুষ প্রাণ হারান।
নতুন গবেষণার সহলেখক পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জলবায়ু বিজ্ঞানী মাইকেল মান বলেন, এ ঝড়ের সময় তিনি একটি হোটেল রুমে তিন দিন আটকে পড়েছিলেন। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই তার মনে প্রশ্ন জাগে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এই ঝড়গুলোর আচরণ কীভাবে পাল্টাচ্ছে?
গবেষকরা ১৯৪০ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত সময়কালে ৯০০টি নর’ইস্টার ঝড় বিশ্লেষণ করেছেন, যেখানে একটি বিশেষ সাইক্লোন ট্র্যাকিং অ্যালগরিদম ব্যবহার করা হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, ১৯৪০ সালের তুলনায় সবচেয়ে শক্তিশালী নর’ইস্টার ঝড়গুলোর গড় সর্বোচ্চ বাতাসের গতি প্রায় ৬ শতাংশ বেড়েছে, যা ঝড়ের ধ্বংসক্ষমতা প্রায় ২০ শতাংশ বাড়িয়ে দিয়েছে।
গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, উষ্ণ পৃথিবীতে নর’ইস্টার ঝড়ের সংখ্যা হয়তো কমে যাবে। কারণ আর্কটিক অঞ্চলের উষ্ণতা বেড়ে যাওয়ায় ঠান্ডা ও উষ্ণ বাতাসের মধ্যকার পার্থক্য কমে আসছে, যা এই ঝড় তৈরিতে মূল উপাদান ছিল। তবে ঝড়ের সংখ্যা কমলেও যেগুলো সৃষ্টি হবে, সেগুলো হবে আরও বেশি তীব্র ও বিধ্বংসী, যা জলবায়ু পরিবর্তনের এক স্পষ্ট ও ভয়ংকর প্রভাব।
মন্তব্য করুন