১৬ জুলাই সাতক্ষীরায় পালিত হয়েছে ‘জুলাই শহীদ দিবস’। বুধবার (১৬ জুলাই) সকাল ১০টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় পুলিশি নির্যাতনে আহত এবং নিহতদের স্মরণে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা।
তবে সাতক্ষীরায় আন্দোলনের সূচনা করা ও নেতৃত্বদানকারী মূল সংগঠকরা এই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণই পাননি।
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ। উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিষ্ণুপদ পাল, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মুকিত হাসান খান, জেলা জামায়াতের আমির উপাধ্যক্ষ শহিদুল ইসলাম মুকুল, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম, জেলা তথ্য অফিসার জাহারুল ইসলাম টুটুল, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাতক্ষীরা জেলা আহ্বায়ক আরাফাত হোসেনসহ আহত ও শহীদ পরিবারের সদস্যরা।
এই আয়োজনে বাদ পড়েছেন আন্দোলনের সূতিকারক ও সাতক্ষীরার প্রধান সংগঠক ইমরান হোসেনসহ তার সহযোগী কয়েকজন প্রথম সারির নেতা। ২০২৪ সালের ৫ জুন সাতক্ষীরায় কোটা সংস্কার আন্দোলনের সূচনা হয় ইমরানের নেতৃত্বেই। তিনি ছিলেন জেলার প্রধান সমন্বয়কারী। পরে ১৩ জুলাই ছাত্র-জনতা একত্রিত হয়ে রাজপথে নামে। ওই দিন থেকে শুরু হয় সাতক্ষীরার রাজপথের ইতিহাস। এরপর ১৮ জুলাই ইমরানসহ ৩৫ জন আন্দোলনকারীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ আন্দোলনের রক্তাক্ত মুহূর্তগুলোই পরবর্তীতে ‘জুলাই শহীদ দিবস’ হিসেবে স্মরণীয় হয়ে ওঠে।
জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম ছাত্রনেতা বখতিয়ার হোসেন বলেন, ইমরান ভাইয়ের হাত ধরেই আমরা আন্দোলনের সাহস পেয়েছিলাম। রাজপথে প্রথম নেমে পুলিশের বেষ্টনী ভেঙে সামনে যাওয়ার ডাক তিনিই দিয়েছিলেন। অথচ আজ তাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি, এমনকি তার অবদানটির কথাও উচ্চারিত হলো না সভায়। এটা শুধু অন্যায় নয়, আমাদের ইতিহাস বিকৃতির একটি চিত্র। শহীদদের স্মরণ করতে গিয়ে যদি ইতিহাস ভুলে যাই, তাহলে সেই স্মরণ কতটা অর্থবহ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) মো. নাভিল হোসেন তামীম বলেন, সাতক্ষীরায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি কমিটি রয়েছে। সেই কমিটি অনুযায়ী জুলাই দিবসের কর্মসূচিতে ছাত্র প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
আমন্ত্রণ না পাওয়ার বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সাতক্ষীরা জেলার প্রধান সমন্বয়কারী ইমরান হোসেন বলেন, সাতক্ষীরায় কোটা সংস্কার আন্দোলনের শুরুটা আমরা কয়েকজন সাধারণ ছাত্র মিলে করি। তখন কেউ পাশে ছিল না। রাজনৈতিক দলগুলো তখন বিষয়টি এড়িয়ে গিয়েছিল। পরে যখন আন্দোলন বড় হয়, তখন তারা এগিয়ে আসে। কিন্তু আজ যে কর্মসূচি হচ্ছে, সেখানে আমন্ত্রণ না পেয়ে মনে হচ্ছে ইতিহাস থেকে আমাদের মুছে ফেলার চেষ্টা চলছে। এটা কেবল আমাদের অপমান নয়, আন্দোলনের চেতনারও অসম্মান। আমরা চাই, ইতিহাসের প্রতি শ্রদ্ধা থাকুক। যারা শুরু করেছিলেন, যারা রক্ত দিয়েছেন, তাদের স্থান যেন মঞ্চে না হলেও অন্তত স্মরণে থাকে।
আন্দোলনের অন্য অনেক নেতাকর্মীও এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, ‘জুলাই শহীদ দিবস’ শুধু একটি স্মরণ অনুষ্ঠান নয়, এটি একটি প্রতিরোধের ইতিহাস— যা বিকৃত হলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সামনে ভুল বার্তা পৌঁছাবে।
এ বিষয়ে সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদের মোবাইলে একাধিকবার কল ও খুদে বার্তা (এসএমএস) দিলেও তার কোনো বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
মন্তব্য করুন