অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস ও দীর্ঘ সময় বসে কাজ করার কারণে দেখা দিতে পারে কোষ্ঠকাঠিন্য। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বংশগতভাবেই এ সমস্যা হতে পারে। এর কারণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা টয়লেটে বসে থেকেও পেট পরিষ্কার হয় না, যা যন্ত্রণাদায়ক ও বিরক্তিকর বটেও। কারও মলত্যাগ যদি সপ্তাহে দু-তিনবার হয় অথবা পরিমাণে খুব কম হয়, অনেকক্ষণ ধরে চেষ্টা করেও মলত্যাগ না হয়। মল অস্বাভাবিক রকমের শক্ত বা শুকনো হয়। এ অবস্থাকে কোষ্ঠকাঠিন্য হিসেবে বিবেচিত করা হয়। এ অবস্থা যদি তিন মাসের মতো হয়, তাহলে তাকে দীর্ঘমেয়াদি কোষ্ঠকাঠিন্য বলে।
যে কোনো বয়সেই এ সমস্যা হতে পারে। তাই রোগীকে বিচলিত হওয়া যাবে না। কারও ক্ষেত্রে যদি রক্তশূন্যতা দেখা দেয় অথবা মল কালো হয়, তাহলে বুঝতে হবে মারাত্মক কোনো সমস্যা হয়েছে। তখন বিলম্ব না করে দ্রুতই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
এ ছাড়া প্রাথমিক পর্যায়ে ঘরোয়া পদ্ধতি অনুসরণ করে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করা যেতে পারে। চলুন, একনজরে এসব পদ্ধতি দেখে নেওয়া যাক—
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে ইসবগুলের ভুসি দারুণ কার্যকর। কারণ, এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার বা আঁশ, যা অন্ত্রের মধ্যে গিয়ে পানি শোষণ করে খাবারের অবশিষ্ট অংশের সঙ্গে মিশে নরম মল তৈরি করে। প্রতিদিন সকালে ও রাতে খাবারের পর এক গ্লাস পানিতে ১-২ চামচ ইসবগুলের ভুসি গুলিয়ে খেতে হবে। তবে ইসবগুলের ভুসি বেশি সময় পানিতে ভিজিয়ে রাখা যাবে না।
সঠিক সময়ে মলত্যাগ না করার কারণে কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যা হতে পারে। তাই মলত্যাগের বেগ এলে তা কখনো চেপে রাখা যাবে না। এতে মল থেকে অন্ত্রের গায়ে পানি শোষণ হতে থাকে এবং মল শুকিয়ে যায়। ফলে কোষ্ঠাকাঠিন্যের সমস্যা বাড়তে থাকে। তাই প্রতিদিন সঠিক সময়ে মলত্যাগের চেষ্টা করুন।
মলত্যাগের সময় সঠিকভাবে বসা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্য হাইকমোডের থেকে লো কমোড ব্যবহার করা ভালো। এতে সঠিকভাবে বসা যায়। তবে কেউ যদি লো কমোড ব্যবহার না করতে পারেন, তাহলে হাইকমোড ব্যবহারের ক্ষেত্রে পায়ের নিচে একটি টুল দিয়ে নিতে পারেন। আর অবশ্যই টয়লেটে বসে খবরের কাগজ ও মোবাইল ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ, এতে মনোযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং দীর্ঘ সময় মলত্যাগের অভ্যাস গড়ে ওঠে।
অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন কোষ্ঠকাঠিন্যের অন্যতম কারণ। এ জন্য নিয়মিত ব্যায়ামের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। এতে করে খাবার হজম প্রক্রিয়া ভালোভাবে হবে এবং অন্ত্রের পেশির কার্যক্ষমতা বেড়ে যাবে। ফলে মল পায়ুপথের দিকে এগিয়ে যাওয়ার গতি বাড়ানোর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
শরীরে পানিশূন্যতার জন্য কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। ফাইবার গ্রহণের পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। কারণ, ফাইবার শরীর থেকে পানি শোষণ করে নরম মল তৈরি করে। তাই প্রতিদিন অন্তত ২-৩ লিটার পরিমাণ পানি পান করতে হবে।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে লেবুর শরবত খুব উপকারী পানীয়। লেবুতে থাকা সাইট্রিক এসিড পরিপাকতন্ত্রের কার্যক্ষমতা বাড়ানোসহ শরীর থেকে দূষিত উপাদান বের করতে সহায়তা করে। এ জন্য একটি লেবু কেটে রস বের করে এক গ্লাস পানির সঙ্গে মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে পান করতে হবে। তবে লেবুর সঙ্গে চিনি মেশানো যাবে না।
যেসব খাবারে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে, সেগুলো বেশি বেশি খেতে হবে। কারণ, ম্যাগনেসিয়াম অন্ত্র থেকে পানি শোষণ করার মাধ্যমে নরম মল তৈরি করে। ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ খাবারে রয়েছে—গাঢ় সবুজ রঙের শাকসবজি, অ্যাভোকাডো, কুমড়োর বিচি, বাদাম, তিসি, চিয়া বীজ, ডাল, মটরশুঁটি ইত্যাদি।
কোষ্ঠকাঠিন্যের প্রতিকার ও প্রতিরোধে যথেষ্ট সহায়ক ভূমিকা পালন করে কিশমিশ। কারণ, এটি খুব মজাদার ও পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ খাবার, যা হজমের সমস্যা দূর করে। কয়েকটি কিশমিশ রাতে পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে খালি পেটে খেলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমাধানসহ অ্যাসিডিটি দূর করে এবং শরীরে ক্যালরি সরবরাহ করে।
সূত্র : জন্স হপকিন্স মেডিসিন
মন্তব্য করুন