

ঘরের সাজসজ্জায় আসবাবের রং খুব গুরুত্বপূর্ণ। শুধু দেয়ালের রং বা ঘরের আকার নয়, আপনি ঘরে কেমন অনুভূতি চাইছেন, সেটাও রঙের মাধ্যমে তৈরি করা যায়। তাই আসবাবের রং ঠিক করার সময় কয়েকটি সহজ বিষয় মাথায় রাখলে ঘর অনেক বেশি সুন্দর, পরিমিত ও আরামদায়ক লাগে।
ঘরের সাজে আসবাবের রঙের ভূমিকা বড়। ঘর ছোট, মাঝারি বা বড় - যাই হোক না কেন, রঙের মিল-অমিল ঘরের সৌন্দর্যকে বদলে দেয়।
আরও পড়ুন : সময়মতো বিছানার চাদর ধুচ্ছেনতো?
আরও পড়ুন : যে কারণে যখনতখন হতে পারে স্ট্রোক
কোনো কোনো সময় একই রঙের হালকা-গাঢ় শেড ব্যবহার ভালো লাগে, আবার কখনো বৈপরীত্য বা কনট্রাস্টও ঘরকে প্রাণবন্ত করে তোলে। তাই আসবাব কিনতে গেলে ঘরের মোট রঙের পরিবেশটাও বিবেচনায় রাখা দরকার।
রেডিয়েন্ট ইনস্টিটিউট অব ডিজাইনের প্রধান অন্দরসজ্জাবিদ গুলশান নাসরীন চৌধুরীর মতে, ছোট বা মাঝারি ঘরকে একটু বড় দেখাতে চাইলে হালকা রংই সবচেয়ে ভালো। দেয়ালে থাকতে পারে নরম, চাপা সাদা-আর আসবাবে ব্যবহার করা যেতে পারে তুলনামূলক উজ্জ্বল রং।
কাঠের আসবাবে সাধারণ কাঠের রং বা তেঁতুলবীজের মতো শেড ভালো মানায়। মৌসুম বদলালে আপনি কুশন, চাদর, টেবিলক্লথ বা পর্দার রং বদলে ঘরে নতুনত্ব আনতে পারেন। উৎসব বা বিশেষ আয়োজনেও এভাবেই ঘরে অন্যরকম পরিবেশ তৈরি করা যায়।
একটি ঘরে যত আসবাব থাকবে - খাট, সোফা, টেবিল, শোকেস, কেবিনেট - সব কিছুর রঙের মাঝে যেন একটা মিল বা ছন্দ থাকে। প্রতিটি আসবাবের রং আলাদা হলে তা দেখতে বিশৃঙ্খল লাগে। তবে কোনো একটি আসবাব একটু ভিন্ন রঙের হলে পর্দা, কুশন বা অন্য অনুষঙ্গে সেই রং যোগ করে সামঞ্জস্য তৈরি করা যায়।
বাড়ির প্রতিটি ঘরেও রঙের ধারাবাহিকতা রাখা ভালো। তবে বাচ্চাদের ঘরে রঙিন আসবাব ব্যবহার করা যায় - লাল, নীল, গোলাপি - যে রঙই হোক, সেখানে উজ্জ্বলতা মানায়।
ঘরের ভেতর কতটা আলো আসে, তা রং নির্বাচন করার ক্ষেত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ। অনেক ফ্ল্যাটে আলো কম ঢোকে বা গোপনীয়তার জন্য সারাদিন পর্দা টানাই থাকে। এমন ঘরে দেয়াল ও আসবাব দুটোই হালকা রঙের হলে ঘর উজ্জ্বল দেখায়।
আর যদি ঘরে প্রচুর প্রাকৃতিক আলো আসে, তবে একটি দেয়াল উজ্জ্বল বা গাঢ় রঙে করতে পারেন। আসবাবেও থাকতে পারে সেই রঙের ছোঁয়া।
ঘরে কেমন অনুভূতি চাইছেন - সেটিও গুরুত্বপূর্ণ। ঘরকে আরামদায়ক, শান্ত বা উদ্দীপনাময় - যেভাবে দেখতে চান, রঙ সেই পরিবেশ তৈরি করে।
- কাঠের রঙের আসবাব বা চাপাসাদা দেয়াল ভালো মানায়।
- যদি দেয়াল সি-গ্রিন হয়, আসবাব হতে পারে সাদা।
- শান্তিময় ওয়ালপেপার থাকলে তার রং মিলিয়ে বিছানার চাদর নিতে পারেন।
- লাল রঙের উজ্জীবনী ভাব শোয়ার ঘরের জন্য তেমন উপযুক্ত নয়।
- কফি রঙ খুব বেশি ব্যবহার করলে ঘর ভারী বা অন্ধকার লাগে।
- আরামদায়ক ও মনোযোগী পরিবেশ জরুরি।
- দেয়াল হতে পারে সাদা বা হালকা রং।
- চেয়ার কম্পিউটারের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে নিলে পরিপাটি লাগে।
- টেবিল সাদা বা কাঠের রঙ হলে কাজ করার সময় জিনিসপত্র সাজানো সহজ হয়।
- ঘরের এক পাশে সাদা ডিভান রাখতে পারেন; ওপরের কাপড় হতে পারে হালকা সবুজ।
- সবুজ গাছ বা প্রকৃতির ছবি দেওয়া ওয়ালপেপার রাখলে মন ভালো থাকে।
বড় ঘর যদি সঠিকভাবে সাজানো না হয়, তবে ফাঁকা ও একঘেয়ে লাগে। তাই—
- আসবাবে গাঢ় রং ব্যবহার করতে পারেন।
- চার দেয়ালের মধ্যে তিনটি দেয়াল হালকা রঙে রাখুন, একটি দেয়াল গাঢ় করে নিন।
- নীল, হলুদ বা বাদামির বিভিন্ন শেড ভালো লাগে।
- বড় ঘরের মেঝে একেবারে ফাঁকা না রেখে কার্পেট বা রাগ বিছিয়ে দিলে ঘরটি ভারসাম্য পায়।
ঘরের সাজসজ্জায় আসবাবের রং নির্বাচন যতটা মজার, ততটাই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ একটি সঠিক রঙের ছোঁয়া ঘরকে শুধু সুন্দরই করে না, আরামদায়ক অনুভূতিও যোগ করে। ঘরের আকার, আলো, দেয়ালের রং এবং আপনি ঘরে কী ধরনের পরিবেশ চান, সব কিছু মিলিয়ে আসবাবের রং বেছে নেওয়াই হলো আদর্শ পদ্ধতি। রঙের মাঝে সামঞ্জস্য রাখলে এবং মাঝে মাঝে ছোটখাটো পরিবর্তন আনলে ঘরের পুরো চেহারাই বদলে যেতে পারে।
আরও পড়ুন : ছোট বাথরুমকে বড় দেখানোর সহজ কিছু উপায়
আরও পড়ুন : যেসব লক্ষণ বলে দেয় আপনার সঙ্গী আপনার জন্য সঠিক নয়
তাই তাড়াহুড়ো নয়, ধীরে-সুস্থে ঘরের চরিত্র এবং আপনার পছন্দ অনুযায়ী রং বেছে নিন - তাতেই তৈরি হবে আপনার নিজের মতো সুন্দর, সুশৃঙ্খল ও প্রশান্তিময় অন্দর।
মন্তব্য করুন