সঞ্চয়ের অভ্যাসই মানুষকে লাখপতি বা কোটিপতি হতে সহায়তা করে। তবে, সেই অভ্যাসের ক্ষেত্রে আপনাকে কিছু সাধারণ নিয়ম মেনে চলতে হবে। আর ধৈর্য ধারণ করতে হবে। আপনার লক্ষ্য যদি অবিচল থাকে, তাহলে নির্ধারিত সময় পর ১০ লাখ টাকার মালিক হওয়া অসম্ভব কিছু নয়।
আপনি কীভাবে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ সঞ্চয় করে ভবিষ্যতে লাখপতি হতে পারবেন, সে সম্পর্কে অনেক পদ্ধতি গুগলে সার্চ করলে সহজেই পেয়ে যাবেন। সেখান থেকে আপনি সঞ্চয় ও বিনিয়োগের ভালো একটা ধারণা পেতে পারেন।
২০১৬ সালে সিএনএনে একটি নিবন্ধ প্রকাশ করা হয়েছিল যে, একজন সঞ্চয়কারী প্রতি মাসে কত টাকা জমালে মিলিয়নিয়ার বা লাখপতি হতে পারবেন। সেখানে বলা হয়, কেউ যদি মাসে ১৭৫ ডলার করে নিয়মিত সঞ্চয় করেন, তাহলে চল্লিশ বছর পর তিনি লাখপতি হতে পারবেন। টাকার বদলে ডলারের হিসাব পড়েছেন তো! ভাবছেন ভুল হলো কি না? না, ঠিকই পড়েছেন, সিএনএনের নিবন্ধে ডলারের হিসাবেই সঞ্চয়ের কথা বলা হয়েছিল। তবে এ জন্য সঞ্চয়কারীকে এমন খাতে বিনিয়োগ করতে হবে, যেখান থেকে ১০ শতাংশ হারে মুনাফা পাওয়া যাবে। ঠিক একইভাবে আপনি যদি ১৭৫ ডলারের পরিবর্তে প্রতি মাসে ১৭৫ টাকা জমান, তাহলে বাংলাদেশে আপনিও ৪০ বছর পর ১০ লাখ টাকার মালিক হতে পারেন।
আপনি যত সঞ্চয় ও বিনিয়োগ কর্মসূচি সম্পর্কে খোঁজ নেবেন, তাতে দেখবেন, সবই দীর্ঘমেয়াদি হয়। জীবন বিমা করতে গেলে ১৮ বছর মেয়াদি, ডিপিএস করতে গেলে ১০ বছর মেয়াদি ইত্যাদি। তাই আপনি যেকোনো সঞ্চয় ও বিনিয়োগ পরিকল্পনাই করুন না কেন, সব সময় মাথায় দীর্ঘ সময়ের বিষয়টি বিবেচনায় রাখতে হবে। এতে দুইটা সুবিধা হবে। প্রথমত, অল্প অল্প সঞ্চয় সহজসাধ্য হবে। দ্বিতীয়ত, দীর্ঘ সময় পর বড় একটা অঙ্ক জমবে।
এখন আপনার কাছে যদি ১৭৫ টাকা অতি নগণ্য মনে হয়, তাহলে সামর্থ্য অনুযায়ী আপনি সেটা বাড়িয়ে নিন। এতে আপনার রিটার্নের পরিমাণ বাড়বে। আমরা প্রায়ই শুনে থাকি, মাসে যে টাকা আয় করি, তা দিয়ে সংসার খরচের পর হাতে কিছুই থাকে না। সঞ্চয় করব কীভাবে? এই মনোভাবের কারণে বছরের পর বছর চলে যায়, কিন্তু টাকা জমানো আর হয় না। এ জন্য বিনিয়োগ বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়ে থাকেন, আপনি এখন যে বয়সে এবং যে অবস্থায়ই থাকেন না কেন, যা পারেন তা-ই সঞ্চয় করুন। সময়ের সঙ্গে আপনার আয় যখন বাড়তে থাকবে, তখন আপনি সঞ্চয়ের পরিমাণও বাড়িয়ে দিন।
আপনার মনে এখন প্রশ্ন আসতে পারে, মাসে এই ১৭৫ টাকা জমিয়ে কোথায় রাখবো? এই টাকা থেকে কীভাবে ১০ শতাংশ মুনাফা পাবো, যার মাধ্যমে ৪০ বছরে ১০ লাখ টাকার মালিক হওয়া যাবে? এর সহজ একটি সমাধান হলো, আপনার আশপাশে যে ডাকঘর আছে, সেখানে গিয়ে একটা সাধারণ হিসাব খুলবেন। সাধারণ হিসাবে আপনি যত টাকা রাখবেন, তার ওপর ৭.৫% মুনাফা দেওয়া হয়। প্রতি মাসে আপনার যত টাকাই থাকুক, তার ওপর আপনি এই হারে মুনাফা পাবেন।
এভাবে জমিয়ে যখন পাঁচ হাজার টাকা হবে, তখন আপনি ডাকঘরেই মেয়াদি হিসাবে সেই টাকা বিনিয়োগ করুন। মেয়াদি হিসাবে ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ মুনাফা প্রদান করা হয়। সাধারণ হিসাবে যদিও কিছু কম হারে মুনাফা পাওয়া যায়, কিন্তু মেয়াদি হিসাবে আপনি বেশি মুনাফা পাচ্ছেন। তাই আপনার লক্ষ্য হওয়া উচিত, যত দ্রুত সম্ভব সাধারণ হিসাব থেকে আপনার সঞ্চয় মেয়াদি হিসাবে বিনিয়োগ করা। এভাবেই ৪০ বছর পর আপনি হয়ে যাবেন লাখপতি।
মন্তব্য করুন