গৃহকর্মীদের বিশেষ করে নারী শ্রমিকদের কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত ও বৈষম্য দূর করতে প্রয়োজন সুস্পষ্ট আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন। এ আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন হলে দেশ-বিদেশের গৃহকর্মীরা কর্মক্ষেত্রে নিরাপদে কাজ করতে পারবে। দেশ-বিদেশে গৃহকর্মীরা প্রতিনয়ত মজুরি বৈষম্য, শোষণ-নিপীড়ন ও নির্যাতনের শিকার হয়ে আসছে। এ নির্যাতন বন্ধে আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংস্থা (আইএলও) সুস্পষ্ট আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করার প্রস্তাব দিয়ে আসছে। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।
সোমবার (৩১ জুলাই) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে দেশে ও প্রবাসে কর্মরত নারী গৃহকর্মীদের প্রতি নির্যাতন ও নিপীড়ন এবং মজুরি চুরি প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক আইনি কাঠামোতে সুরক্ষা নিশ্চিতের দাবিতে বাংলাদেশি অভিবাসী মহিলা শ্রমিক অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন বক্তারা।
আরও পড়ুন: বগুড়ায় মাকে হত্যার অভিযোগে ছেলে ও ছেলের বউ গ্রেপ্তার
সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন, সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক শেখ রুমান, শ্রমিক নেতা আবুল হোসেন, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ইসরাত জাহান ইসা প্রমুখ।
এ সময় বক্তারা বলেন, সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও ধারণা করা হয়, নগরকেন্দ্রিক গৃহকর্মীর সংখ্যা ১৪ লাখের অধিক। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর জরিপ অনুযায়ী, দেশে গৃহকর্মে নিয়োজিত শিশুর সংখ্যা আনুমানিক এক লাখ ২০ হাজার। অন্যদিকে, বাংলাদেশ থেকে গৃহকর্মী হিসেবে অভিবাসন করা নারী কর্মীদের সংখ্যাও কম নয়। বিএমইটির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৩ এর জুন পর্যন্ত ৪২ হাজারেরও অধিক নারী বিদেশে অভিবাসন করেছেন। যাদের প্রায় ৮০ শতাংশই অদক্ষ বা স্বল্প দক্ষ ।
বক্তারা আরও বলেন, দুর্ভাগ্যবশত এই শ্রম জাতীয় পর্যায়ে মূল শ্রমধারা ও মানদণ্ডে স্বীকৃত নয়। ফলে দেশের সংবিধান অনুসারে রাষ্ট্র গৃহকর্মীসহ কর্মক্ষম সব নাগরিককে সুরক্ষা দিতে বাধ্য। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ও বর্তমান সরকারের আন্তরিকতায় প্রণয়ন করা হয়েছে গৃহ শ্রমিক সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতি-২০১৫। কিন্তু গৃহকর্মীদের অধিকার নিশ্চিতে ও সুরক্ষা প্রদানে এই নীতি সম্পূর্ণরূপে কার্যকর নয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনটির উপদেষ্টা আমিনুল হক তুষার। এ সময় তিনি বলেন, করোনা মহামারির সময়ে বিপুলসংখ্যক অভিবাসীকর্মী চাকরি হারিয়েছে। যাদের অনেকেই আর বিদেশে যেতে পারেননি। যারাই ফেরত এসেছেন তাদের অনেকেই তাদের প্রাপ্য মজুরি পাননি। এ ছাড়া বিভিন্নভাবে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এমনকি তাদের পর্যাপ্ত খাবার, চিকিৎসাসেবা ও সুরক্ষা টিকাও দেওয়া হয়নি।
তিনি আরও বলেন, ২০২১-২২ সালে ভারত, ফিলিপাইন, নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশে অভিবাসী কর্মীদের মজুরি চুরি ও নির্যাতনের কারণ বিশ্লেষণের ওপরে বেশ কয়েকটি গবেষণা হয়েছে। এসব গবেষণায় দেখা যায়, অভিবাসীদের মজুরি বকেয়া রেখে জোরপূর্বক দেশে পাঠানো, চুক্তিপত্র অনুসারে মজুরি না দেওয়া, ওভারটাইম না দেওয়া, অধিক কাজ করানো, মজুরি বকেয়া রাখা ও মানসিক নির্যাতন করা হয়েছে। নারী শ্রমিকদের ক্ষেত্রে আরও দেখা যায়, একাধিক বাসায় কাজ করানো হচ্ছে, কোনো প্রকার ছুটি দিচ্ছে না, মারধর করছে, চিকিৎসা করে না, খাবার দিচ্ছে না এমনকি তাদের চাকরির যে শর্ত রয়েছে তার বেশিরভাগই মানা হচ্ছে না।
সংবাদ সম্মেলনে সৌদি আরব কাজ করতে যাওয়া তিনজন অভিবাসী নারী ও ১ দেশে গৃহকর্মীর কাজ করা একজন নারী তাদের সঙ্গে হওয়া নির্যাতনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।
সংবাদ সম্মেলনে সভাপতির বক্তব্যে সংগঠনটির চেয়ারম্যান লিলি জাহান বলেন, অভিবাসী শ্রমিকের মজুরি চুরি ও অভিবাসীদের ওপর শারীরিক নির্যাতন প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কাজ করতে হবে। এর জন্য সিভিল সোসাইটি অর্গানাইজেশনের প্রস্তাবিত আন্তর্জাতিক বিচার প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এর মাধ্যমে বিদেশে নিয়োগকারী কর্মকর্তাদের কাছ থেকে অভিবাসী শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি আদায়, নির্যাতিত কর্মীদের জন্য ক্ষতিপূরণ আদায় ও নির্যাতনকারীদের আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে।
মন্তব্য করুন