কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:২৮ পিএম
আপডেট : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:২৯ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

২৮ থেকে ৪২তম বিসিএসের বঞ্চিত সেই ক্যাডাররা ফের বঞ্চনার শিকার

গ্রাফিক্স : কালবেলা
গ্রাফিক্স : কালবেলা

দীর্ঘদিন বঞ্চিত থাকার পর সম্প্রতি নিয়োগপ্রাপ্ত ২৮তম থেকে ৪২তম বিসিএসের ২৬৪ জন ক্যাডার ফের বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন। এজন্য বৈষম্য ও বঞ্চনা মুক্তিতে প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা।

গত বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) প্রধান উপদেষ্টা বরাবর এক আবেদনে তারা এই অভিযোগ করেন।

প্রধান উপদেষ্টা বরাবর পাঠানো আবেদন তারা বলেন, বর্তমান সরকার ২৮তম থেকে ৪২তম বিসিএস-এর বিভিন্ন ক্যাডারে নিয়োগ বঞ্চিত ২৬৪ জনকে নিয়োগের প্রজ্ঞাপন দেওয়ায় সরকারের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা। দীর্ঘ ১৪ বছর কিংবা অনেক বছর পর নিয়োগ পেলেও নতুন করে বৈষম্যের শিকার হচ্ছে বলে জানান তারা।

তারা বলেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনে কিছু ধারা অস্পষ্ট রাখায় আমরা নতুন করে ভোগান্তির শিকার হচ্ছি। প্রজ্ঞাপনে অনুচ্ছেদ-ছ সংযুক্ত করে ভূতাপেক্ষিকভাবে নিয়োগ ও ধারণাগত জ্যেষ্ঠতা দেওয়া হলেও বেতন নির্ধারণের ক্ষেত্রে অস্পষ্টতার অজুহাতে সংশ্লিষ্ট হিসাব নিরীক্ষক অফিস ইনক্রিমেন্টসহ বেতন নির্ধারণ করছে না। ফলে নিজ ব্যাচের ১৪ বছর পর চাকরিতে প্রবেশ করে ১৫ বছরের জুনিয়রের সমান বেতন পাবে। যা কি না তাদের জন্য রীতিমতো পরিহাসের নামান্তর। এ ছাড়া প্রজ্ঞাপনে অস্পষ্টতার কারণে বিভাগীয় পরীক্ষা ও ঊর্ধ্বতন স্কেল পরীক্ষায় অংশ নেওয়া নিয়েও শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

তারা অভিযোগ করে বলেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কর্তৃক ভূতাপেক্ষিকভাবে নিয়োগসংক্রান্ত পূর্বেও প্রজ্ঞাপনগুলোতে চাকরির ধারাবাহিকতা, জেষ্ঠ্যতা ও বেতন নির্ধারণের ক্ষেত্রে গণনার বিষয়ে স্পষ্ট উল্লেখ থাকলেও আমাদের প্রজ্ঞাপনে তা স্পষ্ট করা হয়নি। এ ছাড়া সাম্প্রততিককালে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব, যুগ্মসচিব ও অতিরিক্ত সচিব পদোন্নতির ক্ষেত্রে আর্থিক সুবিধা প্রাপ্তির কথা উল্লেখ থাকলেও আমাদের প্রজ্ঞাপনে এমন কিছু উল্লেখ করা হয়নি। ফলে যোগদানের পর বেতন নির্ধারণের ক্ষেত্রে অস্পষ্টতার অজুহাতে হিসাব নিরীক্ষক অফিস ইনক্রিমেন্টসহ বেতন নির্ধারণ নিয়ে জটিলতা তৈরি করছে। একইসঙ্গে অস্পষ্টতার কারণে বিভাগীয় পরীক্ষা ও ঊর্ধ্বতন স্কেল পরীক্ষায় অংশ নেওয়া নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

তারা আরও বলেন, বিষয়টি নিয়ে মহাহিসাব নিরীক্ষক অফিস, অর্থ মন্ত্রণালয় ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করলেও কোনো সুরাহা পায়নি। এমতাবস্থায় তারা প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ চেয়ে তিনটি দাবি জানান। দাবিগুলো হচ্ছে - ভূতাপেক্ষিকভাবে নিয়োগের আলোকে ইনক্রিমেন্টসহ ব্যাচভিত্তিক বেতন নির্ধারণে নির্দেশনা জারি করা; ভূতাপেক্ষিকভাবে নিয়োগের আলোকে জেষ্ঠ্যতা নির্ধারণে বিভাগীয় ও ঊর্ধ্বতন স্কেল পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ দিয়ে নির্দেশনা জারি করা এবং মহামান্য হাইকোর্টের রায়ের আলোকে ও সাম্প্রতিক জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কর্তৃক পদোন্নতিপ্রাপ্তদের আর্থিক সুবিধা দেওয়ার সূত্র বিবেচনা করে বকেয়া বেতনাদি সুবিধা প্রদানের বিষয় বিবেচনা করা।

তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দীর্ঘদিন গত স্বৈরাচারী সরকারের বৈষম্যের শিকার হয়ে নিয়োগ বঞ্চিত থাকায় বিভিন্ন চাকরিতে যোগদান করি। যার মধ্যে অনেকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতায় পদোন্নতি লাভ, ব্যাংকিং পেশায় সিনিয়র প্রিন্সিপ্যাল অফিসার, সরকারি সংস্থায় পদোন্নতি লাভ এবং ঢাকার নামকরা বেসরকারি হাসপাতালে সিনিয়র কনসালটেন্ট হিসেবেও পদোন্নতি পেয়েছিলাম। বর্তমান সরকারের প্রজ্ঞাপনের পর আমরা পূর্বের চাকরি থেকে অব্যাহতি নিয়ে সংশ্লিষ্ট ক্যাডার পদে যোগদান করেছি। প্রজ্ঞাপনে বকেয়া বেতন প্রাপ্তি উল্লেখ না থাকলেও, ভূতাপেক্ষিকভাবে নিয়োগ থাকায় ইনক্রিমেন্টসহ বেতন নির্ধারণ এবং সংশ্লিষ্ট ব্যাচের সঙ্গে যোগদান গণ্য হবে- জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এমন আশ্বাসে চাকরিতে যোগদান করি। কিন্তু এখন শুনতেছি একেবারে নতুন ব্যাচ হিসেবে আমাদের বেতন নির্ধারণ হবে। এটা ভূতাপেক্ষ নিয়োগের নামে প্রহসন। এটা সুস্পষ্ট বঞ্চনা। আমরা এই বঞ্চনা ও বৈষম্য থেকে মুক্তি চাই।

এদিকে ১২ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার দুপুরে ২৮তম থেকে ৪২তম বিসিএসের ক্যাডারদের পক্ষে একটি প্রতিনিধি দল জনপ্রশাসন সচিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সেই সাক্ষাতে অনতিবিলম্বে প্রজ্ঞাপন সুস্পষ্টকরণ করে বৈষম্য দূরীকরণে জনপ্রশাসন সচিব পদক্ষেপ নিবে বলে আশ্বাস প্রদান করেন।

বঞ্চনার শিকার ক্যাডারদের মূল পয়েন্টগুলো হলো-

১। ২৮তম বিসিএস আর ৪২তম বিসিএস একই বেতন হয় কীভাবে?

২। যদি সংশ্লিষ্ট ব্যাচ অনুযায়ী পে-ফিক্সশন না হয় তাহলে ভূতাপেক্ষ হয় কীভাবে?

৩। ধারণাগত জ্যেষ্ঠতা হলে সিনিয়রিটি স্কেল পরীক্ষায় অংশ নিতে, বিভাগীয় পরীক্ষায় অংশ নিতে কেন সমস্যা থাকবে?

৪। যেখানে চাকরিরতরা ভূতাপেক্ষ নিয়োগ নিয়ে আর্থিক সুবিধাও পেল সেখানে আমরা ব্যাচভিত্তিক পে-ফিক্সেশন পাব না কেন?

৫। প্রধান উপদেষ্টার সর্বশেষ ভাষণেও আমাদের বিষয়টি জনপ্রশাসনের মূল সফলতা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। জনপ্রশাসনের এক মাসের অর্জনে সবার ওপরে ২৮-৪২তম বিসিএসের কথা বলা হলেও আবার আমাদের সঙ্গে বৈষম্য কেন?

৬। গেজেটের আগে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে বকেয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। ব্যাচভিত্তিক পে-ফিক্সেশন নিয়ে কোনো কথা হয়নি। এখন উল্টা বা ভুল ব্যাখ্যা কেন?

৭। শেখ হাসিনার আমলে যে বৈষম্য হয়েছিল তার চেয়ে বড় বৈষম্য এখন ২৮-৪২তম বঞ্চিতদের একই বেতন দেওয়া। এটার অনেক নেগেটিভ প্রভাব পড়বে।

৮। বিধি বিশেষজ্ঞ ফিরোজ মিয়া স্যার, সাবেক অতিরিক্ত সচিব বলেছেন, এরকম ব্যাচের সঙ্গে পে ফিক্সেশনের রেকর্ড অহরহ। ভূতাপেক্ষ মানেই ব্যাচ অনুযায়ী পে ফিক্সেশন। এরকম এক্সামপল অনেক। বকেয়া আর্থিক সুবিধাসহ পেয়েছে এমন এক্সাম্পলও আছে একটি (রায়ের মাধ্যমে)। ওনার ঝিগাতলার বাসায় গিয়ে নিজেরা জেনে এসেছি।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

‘আল্লাহর আইন, আল্লাহর বিধান কিয়ামত পর্যন্ত জারি থাকবে’

যাত্রাবাড়ী থানায় মৃত্যুর ৭০ দিন পর আনসার সদস্যের পরিচয় শনাক্ত 

দুই ডজন মামলার আসামি গলাকাটা শহিদ গ্রেপ্তার

‘বাংলাদেশে অর্থনীতির চলমান ধীরগতি মন্দা ডেকে আনতে পারে’

প্রতিমা বিসর্জনে গিয়ে সৈকতে প্রবালের মৃত্যু

শাপলা তুলতে গিয়ে দুই শিশুর মৃত্যু

প্রধান শিক্ষক হত্যায় পেকুয়া যুবলীগ সভাপতি পাঁচ দিনের রিমান্ডে

‘হাসিনার ট্রাভেল ডকুমেন্ট ইস্যু অভ্যুত্থানের চেতনার পরিপন্থি’

মামলা তুলে নিতে বাদীকে হুমকি, থানায় জিডি

৩ কোটি টাকার ভারতীয় কাপড়সহ কুরিয়ার সার্ভিসের গাড়ি আটক

১০

তিন কার্যদিবসের মধ্যে বয়স বাড়ানোর প্রজ্ঞাপন চান চাকরিপ্রত্যাশীরা

১১

শ্বশুরবাড়িতে স্বামীর ঝুলন্ত লাশ, স্ত্রী গ্রেপ্তার

১২

মৌলভীবাজারে বিষপানে গৃহবধূর আত্মহত্যা

১৩

বিনোদিনীর কবিতা ‘স্বপ্নভেলা...’

১৪

সারা দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারে ভোক্তা অধিকারের অভিযান 

১৫

সড়কে স্বপ্নভঙ্গের আর্তনাদ থামাতে হবে : লায়ন হাকিম আলী

১৬

দৌলতদিয়ায় ছাত্রদল কর্মী হত্যায় গ্রেপ্তার ২

১৭

নৌকাস্কুল উদ্ভাবন, ‘নোবেল লাইফ প্রাইজ’ পেলেন স্থপতি রেজোয়ান 

১৮

চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিএনপির বিক্ষোভ মিছিল

১৯

বাংলাদেশে তুর্কি বিনিয়োগ বাড়ানোর আহ্বান অধ্যাপক ইউনূসের

২০
X