আড়াই বছর আগে সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরোয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার সর্বশেষ অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছিল। এ নিয়ে তিন তদন্ত কর্মকর্তা মোট ১০ বারের মতো ‘তদন্তের অগ্রগতির’ কথা জানিয়েছিলেন আদালতে। তবে তদন্তের এসব অগ্রগতিতে হত্যারহস্য উদ্ঘাটন হয়নি। অবশ্য সাড়ে ১১ বছর ধরে তদন্ত চললেও চাঞ্চল্যকর ওই জোড়া খুনের রহস্য রয়েছে অন্ধকারেই। তদন্ত সংস্থা এ পর্যন্ত ৯৯ বার আদালত থেকে সময় নিয়েও মামলার তদন্ত শেষ করতে পারেনি। উচ্চ আদালতের নির্দেশে এলিট ফোর্স র্যাব ওই মামলাটি তদন্ত করছে।
আরও পড়ুন : ৪২ কোটি টাকার প্রকল্পে পরামর্শক ব্যয় ১৭ কোটি
জানা গেছে, আজ সোমবার আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার দিন ধার্য রয়েছে। তবে তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আজও তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ফের সময় চেয়ে আবেদন করতে পারেন তদন্ত কর্মকর্তা। আজ তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সময় চেয়ে আবেদন করলে তা শতবার পূর্ণ হতে যাচ্ছে।
গতকাল বোরবার আদালতের সংশ্লিষ্ট শাখায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ পর্যন্ত কোনো তদন্ত প্রতিবেদন জমা হয়নি। বর্তমানে র্যাবের অতিরিক্ত এসপি খন্দকার মো. শফিকুল আলম মামলাটি তদন্ত করছেন। বারবার তদন্ত কর্মকর্তা বদলের পর তিনি সপ্তম কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োজিত রয়েছেন। তার সঙ্গে এ মামলার তদন্তের বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলেও তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
অবশ্য র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন গতকাল কালবেলাকে বলেন, তারা মামলাটি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছেন। তদন্তে যা পাওয়া যাচ্ছে, তা সময়ে সময়ে আদালতকে অবহিত করা হচ্ছে। এখনো তদন্ত কাজ শেষ হয়নি।
আরও পড়ুন : দুদকের সঙ্গে যে কথা হলো মার্কিন প্রতিনিধিদলের
৯৯ বার সময় নিয়েও মামলার তদন্তে অগ্রগতি না থাকায় সাগরের মা সালেহা মনির ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি কালবেলাকে বলেন, ‘র্যাব প্রতিবেদন দেবে কি না সন্দেহ। প্রতিবেদন দিতে পারবে না, দিলে আগেই দিত। প্রতিবেদন না দেওয়ায় এখন সেঞ্চুরি পূর্ণ হচ্ছে। আল্লাহর কাছে সব ছেড়ে দিয়েছি। সাগর ও রুনিকে কেন মারল, কারা মারল, এটা জানতে চাই। বিচার একদিন হতেই হবে। জীবদ্দশায় বিচার দেখে যেতে চাই।’
আদালত ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এ মামলার মোট ছয় তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন হয়েছেন। বর্তমানে সপ্তম তদন্ত কর্মকর্তা দায়িত্বে রয়েছেন।
তাদের র্যাবের সহকারী পুলিশ সুপার মো. ওয়ারেছ আলী মিয়া ২০১৪ সালের ২০ মার্চ প্রথম অগ্রগতি প্রতিবেদন দেন। পরে তিনি আরও ছয়বার অগ্রগতি প্রতিবেদন জমা দেন। এরপর র্যাবের সহকারী পুলিশ সুপার মহিউদ্দিন আহম্মদ ২০১৬ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি ও ২০১৭ সালের ১৫ মার্চ দুবার অগ্রগতি প্রতিবেদন দেন। সর্বশেষ ২০২০ সালের ৫ অক্টোবর বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তা অগ্রগতি প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করেন। তবে দুই বছর ১০ মাস পার হলেও আর কোনো প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হয়নি। এ পর্যন্ত এ মামলায় ৯৯ বার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল পিছিয়েছে।
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরোয়ার ও এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনিকে হত্যা করা হয়। এরপর নিহত রুনির ভাই নওশের আলম রোমান শেরেবাংলা নগর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
প্রথমে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন শেরেবাংলা থানার তৎকালীন উপপরিদর্শক (এসআই) জহিরুল ইসলাম। চার দিন পর চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলার তদন্তভার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে হস্তান্তর করা হয়। দুই মাসেরও বেশি সময় তদন্ত করে রহস্য উদ্ঘাটনে ব্যর্থ হয় ডিবি। পরে হাইকোর্টের নির্দেশে একই বছরের ১৮ এপ্রিল হত্যা মামলাটির তদন্তভার র্যাবের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এ মামলায় মোট আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। আসামিরা হলেন রফিকুল ইসলাম, বকুল মিয়া, মাসুম মিন্টু, কামরুল ইসলাম ওরফে অরুন, আবু সাঈদ, সাগর-রুনির বাড়ির দুই নিরাপত্তারক্ষী পলাশ রুদ্র পাল ও এনায়েত আহমেদ এবং তাদের ‘বন্ধু’ তানভীর রহমান খান। তাদের মধ্যে তানভীর ও পলাশ জামিনে রয়েছেন। বাকিরা কারাগারে আটক।
ডিএমপির অপরাধ তথ্য ও প্রসিকিউশন বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ আনিসুর রহমান বলেন, ‘এখন পর্যন্ত এ মামলার কোনো তদন্ত প্রতিবেদন জমা হয়নি। আগামীকাল (আজ) ধার্য তারিখে প্রতিবেদন দাখিল না হলে নতুন তারিখ পড়বে।’
ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আব্দুল্লাহ আবু কালবেলাকে বলেন, ‘এ হত্যা মামলায় যদি কোনো সাক্ষ্যপ্রমাণ না পাওয়া যায়, তাহলে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হোক। এমন চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার তদন্ত এভাবে ঝুলিয়ে না রেখে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা উচিত।’
মন্তব্য করুন