কক্সবাজারের উপকূলীয় এলাকার মৎস্যজীবীদের আর্থসামাজিক এবং জীবন-জীবিকার মান উন্নয়নের উদ্যোগ নিয়েছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। এ জন্য পরিকল্পনা কমিশনে একটি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে। মৎস্যজীবীদের জন্য নেওয়া উন্নয়ন প্রকল্পে মোট ব্যয়ের অধিকাংশই খরচ হবে পরামর্শকদের পেছনে। পরামর্শক খাতে এমন অত্যধিক ব্যয় প্রস্তাব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ফিশারিজ লাইভলিহুড ইনহ্যান্সমেন্ট প্রজেক্ট ইন দ্য কোস্টাল এরিয়া অব দ্য বে অব বেঙ্গল (এফআইএলইপি) শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়নে খরচ ধরা হয়েছে ৪২ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। যার অধিকাংশই ব্যয় হবে পরামর্শক খাতে। এ প্রকল্পে পরামর্শক খাতে ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে ১৭ কোটি ৩৩ লাখ টাকা, যা প্রকল্পের প্রায় ৪০ দশমিক ৮৪ শতাংশ। আলোচ্য প্রকল্পের ওপর বিশেষ প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (এসপিইসি) সভার কার্যপত্র সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা যায়, আজ সোমবার আলোচ্য প্রকল্প প্রস্তাবের ওপর বিশেষ প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (এসপিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় সভাপতিত্ব করবেন কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লি প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য (সচিব) এ কে এম ফজলুল হক। ওই সভায় পরামর্শক খাতে অতিরিক্ত এই ব্যয় প্রস্তাব নিয়ে আপত্তি তোলা হবে। একই সঙ্গে একই এলাকায় একই ধরনের প্রকল্প কেন দরকার, সে বিষয়ে সভায় জানতে চাওয়া হবে। এ ছাড়া প্রস্তাবিত প্রকল্পে অধিকাংশ খাতের ব্যয় প্রস্তাব নিয়েও প্রশ্ন তোলা হতে পারে।
কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, ৪২ কোটি ৪৫ লাখ টাকার প্রকল্পে শুধু পরামর্শক খাতে ১৭ কোটি ৩৩ লাখ টাকা ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে, যা অত্যধিক মনে হয়েছে। এ জন্য এসপিইসি সভায় এর ব্যাখ্যা জানতে চাওয়া হবে। এ ছাড়া প্রকল্পটি কক্সবাজার জেলার পাঁচটি উপজেলায় বাস্তবায়িত হবে। কিন্তু এরই মধ্যে ওই এলাকায় মৎস্যজীবীদের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নের জন্য টেকসই মেরিন ফিশারিজ প্রকল্পের আওতায় ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (এনবিএফ) কাজ করছে। এ অবস্থায় একই এলাকায় একই উদ্দেশ্যে দুটি প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে কাজে দ্বৈততা এবং প্রকল্পের বাস্তবায়নোত্তর পর্যায়ে প্রকল্পগুলোর ফলাফল নিরূপণে জটিলতার সৃষ্টি হবে কি না, সে বিষয়েও মৎস্য অধিদপ্তরের কাছে ব্যাখ্যা জানতে চাওয়া হবে। কর্মকর্তারা বলেন, প্রস্তাবিত প্রকল্পে বিস্তারিত ব্যয় বিভাজন না করে অধিকাংশ খাতের ব্যয় ‘থোক’ হিসেবে ধরা হয়েছে।
প্রকল্প প্রস্তাব সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে অনুদান দিচ্ছে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা)। বাস্তবায়ন করবে মৎস্য অধিদপ্তর এবং জাইকা। মোট ব্যয়ের মধ্যে ৪১ কোটি ৪২ লাখ টাকা দেবে জাইকা এবং সরকারি অর্থায়নে খরচ হবে বাকি ১ কোটি ৩ লাখ টাকা। বাস্তবায়ন মেয়াদ ধরা হয়েছে চলতি বছর থেকে ২০২৭ সালের মে মাস পর্যন্ত।
কক্সবাজার সদর, টেকনাফ, উখিয়া, মহেশখালী ও কুতুবদিয়া উপজেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। প্রকল্পের উদ্দেশ্য হিসেবে বলা হয়েছে, টার্গেট এলাকায় ছোট আকারে উপকূলীয় মৎস্য চাষের প্রধান আয়ের উৎসসহ পরিবারের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করা।
প্রকল্প প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, টেকসই প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে জীবিকার উন্নতি, বিকল্প আয় সৃষ্টিকারী উদ্যোগের দ্বারা সমর্থিত হওয়া প্রয়োজন। উপকূলীয় মাছ ধরার সম্প্রদায়ের বর্তমানে সংগঠন, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক শক্তি এবং স্থিতিস্থাপকতা তৈরি করার ক্ষমতার অভাব রয়েছে। চ্যালেঞ্জগুলো জটিল এবং বহুমাত্রিক।
দরিদ্র মৎস্যজীবীদের টেকসই জীবিকা নির্বাহের জন্য যে কোনো সহায়তার জন্য তাদের বর্তমান প্রতিকূল অবস্থা থেকে বের করে আনতে সামগ্রিকভাবে মনোনিবেশ করতে হবে। প্রকল্প চলাকালীন সহায়তা কার্যক্রম বাস্তবায়নের মাধ্যমে ছোট আকারের মাছ ধরা পরিবারের অন্তর্ভুক্তিমূলক জীবিকা ও পুষ্টির অবস্থা এবং স্থিতিস্থাপকতা উন্নত বলে আশা করা হচ্ছে।
মন্তব্য করুন