কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:১৯ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

স্বামীর মৃত্যুর পর চোখে অন্ধকার দেখছি : শহীদ জসিমের স্ত্রী

মো. জসিম। ছবি : সংগৃহীত
মো. জসিম। ছবি : সংগৃহীত

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালানোর মধ্য দিয়ে এদেশে ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসনের অবসান ঘটে। কিন্তু এই অভ্যুত্থানে যোগ দিয়ে বহু মানুষ যেমনি প্রাণ হারিয়েছেন, তেমনি অনেকেই হয়েছেন আহত। নিঃস্ব হয়ে পড়েছে বহু পরিবার। এমনই একজন আন্দোলনে শহীদ হওয়া রিকশাচালক মো. জসিম। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম স্বামীকে হারিয়ে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন তার স্ত্রী সুলতানা রাজিয়া।

ছাত্র নেতৃত্বাধীন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণে গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয়। আর এই সময়ে নগরীর যাত্রাবাড়ীর দনিয়া এলাকার গুয়ালবাড়ি মোড়ের স্থায়ী বাসিন্দা জসিম (৩৫) গত ২১ জুলাই গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন।

স্ত্রী রাজিয়া জানান, তার স্বামী ওইদিন মাগরিবের নামাজ পড়তে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে গুয়ালবাড়ি মোড়ের একটি মসজিদে যাচ্ছিলেন। কিন্তু ছাত্র আন্দোলনকে ঘিরে রাস্তার পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে পড়ায় তিনি মসজিদে না ঢুকে বাসায় ফিরে যাচ্ছিলেন। বাড়ি ফেরার পথেই একটি গুলি তার পিঠে লাগে। গুলিটি তার পিঠ দিয়ে ঢুকে বুক ভেদ করে বেরিয়ে আসে।

পরে সন্ধ্যা ৭টা ১০ মিনিটের দিকে কেউ তাকে ফোন করে জানায় তার স্বামী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।

রাজিয়া কাঁদতে কাঁদতে বলেন, খবরটি শুনে, আমি স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম এবং সঙ্গে সঙ্গে আমি বাসার নিচে নেমে দেখি আমার স্বামীকে আমাদের বাসার সামনের রাস্তায় শুইয়ে রাখা হয়েছে। যারা আমার স্বামীকে বাসার সামনে নিয়ে এসেছিল তাদের সহায়তায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

তিনি বলেন, সারা দেশে অস্থির পরিস্থিতি থাকায় পোস্টমর্টেম না করেই আমরা হাসপাতাল থেকে লাশ নিয়ে আসি এবং সে রাতেই তাকে দনিয়া কবরস্থানে দাফন করি।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে তিনি আরও বলেন, শনির আখড়া বাসস্টপ থেকে প্রায় ৪০০ মিটার ভেতরে আমেনা ভিলার সামনে ওই সময় ‘হেলমেট বাহিনী’ ও ইউনিফর্ম এবং সাদা পোশাকের পুলিশসহ প্রায় ৪০ জন লোক নির্বিচারে গুলি ছুড়ছিল।

স্থানীয় লোকজন জানান, ওই দিন গুয়ালবাড়ি মোড়ে ঘটনাস্থলেই জসিমসহ অন্তত ছয়জন নিহত হন এবং খুনিরা কয়েকজনের লাশ নিয়ে যায়।

রাজিয়া বলেন, খুনিরা আমার স্বামীর লাশ গুম করার চেষ্টা করছিল। কিন্তু লোকজন তার লাশ নিতে দেয়নি। তারা জসিমকে চিনতে পেরে খুনিদের প্রতি ইটপাটকেল মেরে তার লাশ রেখে দেয়।

খুনিদের বিচার দাবি করে তার স্ত্রী বলেন, ওরা আমার ছেলেকে এতিম করেছে। যারা আমার স্বামীকে হত্যা করেছে আমি তাদের বিচার চাই। সরকারের কাছে আমার বিনীত অনুরোধ, খুনিদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনুন।

রাজিয়া তার স্বামীর মৃত্যুর পর থেকে তার কষ্টের কথা বলতে গিয়ে বারবার কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, আমার স্বামী পরিবারের প্রধান উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন। তিনি রিকশা চালিয়ে সংসার চালাতেন। কিন্তু তার শাহাদাতের পর থেকে আমরা একটি কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি।

একমাত্র ছেলের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন রাজিয়া আরও বলেন, আমি দুবার স্ট্রোক করেছি, জানি না আমি কতদিন বাঁচব। আমি চলে গেলে আমার ছেলেটার কি হবে! সে তো একা হয়ে যাবে।

তিনি বলেন, আমরা ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার। স্বামীর মৃত্যুর পর থেকে আমি চোখে অন্ধকার দেখছি।

শোকাহত রাজিয়া আরও বলেন, কয়েক বছর আগে আমার বাবা ও শ্বশুর দুজনই ইন্তেকাল করেছেন। এ কারণে আমাদের দেখারও কেউ নেই। আমার একমাত্র ছেলে জীবন আহমেদ (২১) এখন আমার অবলম্বন। সে একটি কুরিয়ার সার্ভিস অফিসে কাজ করে মাসে ১০ হাজার টাকা আয় করে। তাই দিয়ে কোনোমতে আমাদের সংসার চলে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রাজিয়া সুলতানা তার একমাত্র ছেলে নিয়ে গুয়ালবাড়ি মোড় এলাকায় দুই কক্ষের একটি ফ্ল্যাটে বসবাস করছেন। যার মাসিক ভাড়া ৭ হাজার টাকা। তিনি বলেন, বাসা ভাড়া মিটিয়ে ছেলের সামান্য আয় দিয়ে সংসার চালানো খুবই কঠিন।

‘কোভিড-১৯’ এর আগে জীবন এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘অর্থনৈতিক সংকটের কারণে আমরা তার পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারিনি। আমি সরকারের কাছে আমার ছেলের জন্য একটি উপযুক্ত চাকরির আবেদন জানাই, যাতে সে ভালোভাবে জীবনযাপন করতে পারে।

স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানান, জসিম খুবই ভালো মানুষ ছিলেন। নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী অন্যদের সাহায্য করতেন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী ঘোষণা, দুটিতে লড়বেন ফয়জুল করীম

দুই সন্তানসহ গৃহবধূকে গলা কেটে হত্যা, দেবর নিখোঁজ

ওয়ার্ডপ্রেস কন্ট্রিবিউশনের গর্বিত মুখ বাংলাদেশের নাসিম

বরিশালে এনসিপির পদযাত্র‍ায় ২০ সহস্রাধিক জনতার জমায়াতের প্রস্তুতি

১৪৮ বছরের টেস্ট ইতিহাসে নতুন করে লেখালেন স্টার্ক

মালয়েশিয়ায় প্রবেশের সময় ৯৬ বাংলাদেশি আটক

চেয়ারে শহীদদের স্বজনেরা, মেঝেতে বসেন ৫ উপদেষ্টা

শ্যামলীতে ছিনতাইকারীদের একজন গ্রেপ্তার, মোটরসাইকেল জব্দ

নারীদের বীরত্বপূর্ণ অবদানে জুলাই উইমেন্স ডে উদযাপন

এসএসসি-এইচএসসিতে ভালো ফল করা শিক্ষার্থীদের জন্য সুখবর

১০

মাকে জীবনের জন্য হুমকি দাবি, বাড়িতে ঢুকতে দেয়নি ছেলে 

১১

চরমোনাইর দরবারে এনসিপির কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল

১২

মিটফোর্ডে ব্যবসায়ী হত্যার প্রতিবাদে এনসিপির বিক্ষোভ মিছিল 

১৩

বাড়ির পেছনে পড়ে ছিল শিশুর বস্তাবন্দি মরদেহ

১৪

আশুলিয়া কলেজ প্রশাসনের ভুলে বিপাকে ১৮৬ এইচএসসি পরীক্ষার্থী

১৫

উপদেষ্টা শারমিন মুরশিদ পশ্চিমা এজেন্ডা বাস্তবায়নে লিপ্ত : হেফাজতে ইসলাম

১৬

নির্বাচন নিয়ে কোনো ষড়যন্ত্র বরদাশত করা হবে না : মোস্তফা জামান

১৭

‘মব’ সৃষ্টি করে শিক্ষার্থীদের বিভ্রান্ত করছে ছাত্রশিবির, অভিযোগ ছাত্রদলের 

১৮

লর্ডসে ব্যর্থ জাদেজার বীরত্ব, ইংল্যান্ডের নাটকীয় জয়

১৯

গমের ব্লাস্ট রোগ দমনে গাকৃবিতে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত

২০
X