শুক্রবার, ০২ মে ২০২৫, ১৯ বৈশাখ ১৪৩২
কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৪:৪৮ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

‘এবার হোঁচট খেলে দেশের মানুষ আর উঠে দাঁড়াতে পারবে না’

উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। ছবি : সংগৃহীত
উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। ছবি : সংগৃহীত

দেশের মানুষ এবার হোঁচট খেলে আর উঠে দাঁড়াতে পারবে না মন্তব্য করে উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেছেন, ‘দেশের মানুষ বারবার আশাহত হয়েছে। তারা যেন আর আশাহত না হয়।’ তিনি বলেন, ‘জুলাই-আগস্টের গণহত্যার বিচার এবং রাষ্ট্রের সংস্কারকাজ এগিয়ে চলছে। আমরা যে সময় পাব, এর মধ্যে যেন এই কাজগুলোকে এগিয়ে নিতে পারি।’

মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি) মিলনায়তনে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আয়োজিত তারুণ্যের উৎসব-২০২৫ উপলক্ষে প্রামাণ্য চিত্র ও চিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

তথ্য ও সম্প্রচার সচিব মাহবুবা ফারজানার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ও শহীদ শাকিলের মা বিবি আয়েশা।

পিআইবির মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফের পরিচালনায় সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম আব্দুল্লাহ ও বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক মাহবুব মোর্শেদ।

মাহফুজ আলম বলেন, ‘এক দল, এক দেশ, এক নেতা, এক রাষ্ট্র౼ এই নীতি ধরে শেখ হাসিনা তার পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করতে গিয়ে যে ধরনের বাধার সম্মুখীন হয়েছেন, তিনি তা দূর করেছেন। তিনি তার পিতার প্রক্রিয়া অনুসরণ করেছেন।’

সমালোচনা করে তিনি আরও বলেন, ‘১৯৭২ থেকে ’৭৫ পর্যন্ত বিরোধী দলের ওপর নির্যাতন-নিপীড়নের মতো তিনিও একই পথ বেছে নিয়েছিলেন। শেখ মুজিব মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে বিভাজন তৈরি করেছেন। দেশের এক দশকের ইতিহাস মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যার ইতিহাস। শেখ মুজিবের আমলে গুম, হত্যা ও নির্বিচারে মানুষ হত্যা করা হয়েছে।’

মাহফুজ বলেন, ‘শেখ হাসিনা পুলিশ বাহিনী ও বিজিবিকে রক্ষীবাহিনীতে পরিণত করেছিলেন। পিলখানা হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে সেনাবাহিনীর নৈতিক মনোবল ভেঙে দিয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে গড়ে ওঠা সেনাবাহিনীকে কনটামিনেটেড (দূষিত) করে গেছেন। শেখ হাসিনা শুধু প্রতিষ্ঠান নয়, ব্যক্তি মানুষকেও দূষিত করে রেখে গেছেন। তাই কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে সংস্কার করে ফ্যাসিবাদ দূর করা সম্ভব নয়।’

শেখ হাসিনা ইতিহাস থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেছিলেন মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘তিনি (শেখ হাসিনা) জুলাই থেকে আগস্টে তার প্রমাণ রেখে গেছেন। আর এ জন্যই তাকে বাকশাল গঠন করতে হয়নি। প্রশাসনকেই তিনি বাকশাল হিসেবে গড়ে তুলেছিলেন।’

তিনি বলেন, ‘তার (শেখ হাসিনা) পরিকল্পনা ছিল মুজিব আদর্শের ট্যাবলেট (গুলি) খাইয়ে কয়েক প্রজন্মকে পঙ্গু করে রাখা। রাষ্ট্রের টাকা খরচ করে শেখ হাসিনা আদর্শিক গুন্ডাদের পুষত। সেখানে সাংবাদিকরাও ছিল। তারা হত্যাকাণ্ডের সময় পরিবেশ স্বাভাবিক করতে মৌলবাদী তকমা লাগিয়ে তা বৈধ করেছে। পুরো ব্যবস্থা এমনভাবে গড়েছেন, যেখানেই হাত দেওয়া হয়, সেখানেই গুন্ডাদের পাওয়া যায়।’

উপদেষ্টা আরও বলেন, ফ্যাসিবাদে অবশ্যই দেশের মানুষের বড় অংশের অংশগ্রহণ থাকে। আর এই ফ্যাসিবাদে গুন্ডাদের পাশাপাশি প্রশাসনও ছিল। শেখ হাসিনা তরুণদের বন্দী করে রেখেছিলেন একটি মতাদর্শের মধ্যে। তিনি যাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন, তারাই তার ঘর ভেঙে দিয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘তরুণদের ক্ষোভ-ঘৃণাকে ইতিবাচক দিকে পরিচালিত করতে হবে। অবশিষ্ট ফ্যাসিবাদ দূর করতে হবে। জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানকে সামগ্রিক বিপ্লবে রূপান্তর করতে হবে। শেখ হাসিনা যে মানসিকতা তৈরি করেছেন, সে দূষণে তরুণ সমাজও যুক্ত হয়েছে। সেখান থেকে তরুণ সমাজকে মুক্ত করতে হবে, দেশের ১৮ কোটি মানুষকে মুক্ত করতে হবে।’

ব্যক্তি ও কাঠামো থেকে ফ্যাসিবাদ দূর করতে হবে জানিয়ে মাহফুজ আলম বলেন, ‘শহীদ ও আহতদের প্রত্যাশা থেকে নতুন বন্দোবস্তের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে।’

জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের বিচার ও প্রতিষ্ঠানের সংস্কার প্রয়োজন উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানগুলোর আমূল পরিবর্তন প্রয়োজন। এ জন্য সমাজের মধ্যে বোধের জন্ম দিতে হবে। শহীদ আবু সাঈদের বোধ সব মানুষের মধ্যে জাগ্রত করতে হবে। তার মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে। মানুষের স্মৃতিতে সব সময় তা জাগ্রত রাখতে হবে।’

তিনি বলেন, ডিজিটালি একসেসেবিলিটি থাকায় তরুণরা লাইভ বুলেটের সামনে দাঁড়িয়ে এই শতাব্দীর ফ্যাসিস্টকে তাড়িয়ে দিয়েছে। তরুণদের রাগ, বিক্ষুব্ধ হওয়াকে ইতিবাচকভাবে কাজে লাগিয়ে ফ্যাসিবাদের হাত থেকে দেশকে উদ্ধার করতে হবে। বিশ্বের তরুণদের জন্য আমাদের তরুণরা অনুকরণীয় হয়ে উঠবে। দেশের তরুণরাই গণতান্ত্রিক মানসিকতা এবং সবার জন্য আগামীর রাষ্ট্র গড়ার নেতৃত্ব দেবে বলেও আশা করেন এ উপদেষ্টা।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে আমরা যা পারিনি, তরুণরা তা পেরেছে। বর্তমানে আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে, তরুণদের আরও উজ্জীবিত করা। কারণ তরুণরাই অভ্যূত্থানে নেতৃত্ব দিয়েছে। তারা যেন আবার বাংলাদেশকে উজ্জীবিত করতে পারে। তারুণ্যর উৎসব-২০২৫ এর লক্ষ্যও সেটাই।’

তিনি আরও বলেন, ‘শেখ হাসিনার মতো ভয়ংকর স্বৈরশাসককে আমরা মোকাবিলা করতে পারিনি। আমাদের তরুণরা পেরেছে। তারাই আগামীর বাংলাদেশকে নির্মাণ করবে। আর এতে আমরা সবাই একীভূত থাকব।’

তথ্য সচিব মাহবুবা ফারজানা বলেন, দেশের তরুণরা বুকের তাজা রক্ত ঢেলে ফ্যাসিবাদী সরকারের মোকাবিলা করেছে। আর আমরা পেয়েছি স্বাধীনতা। ফ্যাসিস্ট সরকার দেশ ও দেশের মানুষকে চেপে ধরেছিল।

তিনি বলেন, এখানে আমরা যারা দাঁড়িয়ে আছি, ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন না হলে কেউই দাঁড়িয়ে থাকতে পারতাম না। গুম হয়ে যেতাম।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

রাজধানীতে বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার ৩৭

মাওলানা রইস হত্যা / খুনিরা গ্রেপ্তার না হলে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি

রাজনৈতিক দলগুলোর বক্তব্য অপরিপক্ব : শফিকুল আলম

মানবিক ও সামাজিক দায়বদ্ধতা নিয়ে কাজ করছে পুনাক

গাঁয়ে আগুন লাগিয়ে কলেজছাত্রীর আত্মহত্যা, প্রেমিক গ্রেপ্তার

‘সরকারের হস্তক্ষেপ না থাকায় গণমাধ্যম সূচকে ১৬ ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ’

এবার এসএসসি পরীক্ষার্থীসহ ২ বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ

ভুল ভিডিওর জন্য দুঃখ প্রকাশ

আরএসএফ সূচক / ভারত-পাকিস্তানকে পেছনে ফেলে গণমাধ্যম স্বাধীনতা সূচকে এগিয়ে বাংলাদেশ

নদীর পাড়ে বালুর ব্যবসা, বিপন্ন পরিবেশ-প্রকৃতি

১০

চলনবিলের আয়তন কমেছে এক হাজার বর্গকিলোমিটার!

১১

বিএনপি হিমালয়ের মতো শক্তিশালী দল : প্রিন্স

১২

নারায়ণগঞ্জে লুট হওয়া অস্ত্রে বাড়ছে আতঙ্ক

১৩

দুই দেশের নাগরিকদের ফেরত দিল বিজিবি-বিএসএফ

১৪

শ্রমিকরাই দেশের উন্নয়নের মেরুদণ্ড : শেখ বাবলু

১৫

‘আ.লীগকে নিষিদ্ধ করতে প্রয়োজনে নতুন অভ্যুত্থান হবে’

১৬

এমএ আজিজ স্টেডিয়াম নিয়ে বিশৃঙ্খলা

১৭

‘রাজনৈতিক নেতাদের তোষামোদি না করে মেরুদণ্ড শক্ত করুন’

১৮

ঢাকাসহ ১২ জেলায় ঝড়ের সঙ্গে বজ্রবৃষ্টির পূর্বাভাস

১৯

ফিদের স্বীকৃতি পেলেন ওয়াদিফা

২০
X