ভৌগোলিক অখণ্ডতা, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে কোনো রকম আপস করা হবে না বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ একটি শান্তিপ্রিয় উন্নয়নশীল দেশ। সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়- এটা আমাদের পররাষ্ট্র নীতির ভিত্তি। কিন্তু আমাদের ভৌগোলিক অখণ্ডতা, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে কোনো রকম আপস করা হবে না। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান কাজ হচ্ছে নন ট্রেডিশনাল থ্রেটসহ সকল বাহ্যিক ও আন্তঃরাষ্ট্রীয় হুমকি থেকে দেশের নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা নিশ্চিত করা। তারই অংশ হিসেবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী একের পর এক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব ও প্রকল্প সফলভাবে সম্পন্ন করার মাধ্যমে আজ দেশের একটি বিশ্বস্ত সংস্থায় পরিণত হয়েছে। আমাদের সেনাবাহিনীর প্রকৃতপক্ষে দেশের জাতীয় জরুরি প্রয়োজনে সরকার ও তার অসামরিক সংস্থাগুলোকে সহযোগিতা করতে সাংবিধানিকভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরাও বিশ্বের শান্তিরক্ষা ও মানবিক সহায়তা এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় দায়িত্ব পালনেও সদা প্রস্তুত।
বুধবার (২৮ মে) চট্টগ্রামের ভাটিয়ারীর বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে (বিএমএ) অনুষ্ঠিত রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিমান বাহিনী প্রধান হাসান মাহমুদ খাঁন এসব কথা বলেন।
বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় জন্ম নেওয়া বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী আজ দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, আস্থা ও ও ঐক্যের প্রতীক। দেশের প্রয়োজনে যে কোন ক্লান্তি ক্রান্তিলগ্নে প্রজ্ঞা কর্তব্যবোধ বুদ্ধিমত্তা, দেশপ্রেম ও সাহসের সাথে সব সময় ঝাঁপিয়ে পড়েছে। লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত মাতৃভূমির প্রতিটি ধূলিকণা অটুট রাখতে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিটি সদস্য সদা তৎপর।
স্বাধীনতা-পরবর্তীকালে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের জন্য জীবন উৎসর্গকারী সশস্ত্র বাহিনীর সকল সদস্যদের অবদান গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে তিনি বলেন, তাদের আত্মত্যাগ ও নিষ্ঠা আমাদের জন্য চিরকালীন অনুপ্রেরণা। বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক শান্তি ,নিরাপত্তার আহ্বান পূরণসহ একবিংশ শতাব্দীর সকল ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমরা একটি আধুনিক ও সুশিক্ষিত এবং দক্ষ সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তুলতে চাই।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সহ সশস্ত্র বাহিনী আধুনিকায়নের প্রচেষ্টায় অংশ হিসেবে বিভিন্ন ইনডিজিনেস ক্যাপাসিটি বিল্ডিং এর পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এতে একদিকে যেমন নিজেদের সক্ষমতা বাড়বে অপরদিকে আমাদের পরনির্ভরর্শীলতা ও হ্রাস পাবে। সেই সঙ্গে কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রাও সাশ্রয় হবে।
কমিশন প্রাপ্ত নবীন ক্যাডেটদের উদ্দেশ্যে বিমান বাহিনী প্রধান বলেন, নেতৃত্বের সর্বোচ্চ গুণাবলি সততা সত্যবাদিতা কর্তব্য নিষ্ঠা ও কঠোর পরিশ্রম দ্বারা বাহিনীর উপর অর্পিত সকল দায়িত্ব তোমরা আন্তরিকতার সঙ্গে পালন করবে এটাই তোমাদের প্রতি আমার প্রত্যাশা। এই একাডেমি থেকে তোমরা যে প্রশিক্ষণ তোমরা গ্রহণ করেছ তার যথাযথ অনুশীলন ও প্রয়োগের মাধ্যমে পেশাগত দক্ষতা অর্জনে তোমরা সর্বদা সচেষ্ট থাকবে। তোমাদেরকে যেকোনো ধরনের চ্যালেঞ্জ গ্রহণের জন্য সব সময় প্রস্তুত থাকতে হবে। সামরিক চেতনা ও মূল্যবোধকে সমুন্নত রাখতে এবং যেকোনো ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার ক্ষেত্রে দেশপ্রেমকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। দেশের স্বার্থ স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সব সময় সর্বাগ্রে এরপর প্রতিষ্ঠান, অধীনস্থদের সম্মান, কল্যাণ ও সুখ স্বাচ্ছন্দ্য এবং সবশেষে আসবে তোমার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও স্বাচ্ছন্দ্য। সামরিক বাহিনীতে সৌহার্দ্য সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্ববোধের প্রঘার মিশ্রণে সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে সফল হতে হবে।
তিনি বলেন, আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, দেশ ও সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে এবং ফিউচার ব্যাটেল ফিল্ডের জন্য নিজেদের প্রস্তুত রাখতে তোমাদের পথচলা হবে সাহসী ও বলিষ্ঠ।
তিনি বলেন, ‘তোমাদের আজকের এই কমিশন প্রাপ্তি জীবনের এক গৌরবময় অধ্যায়। আজ থেকে তোমাদের কাঁধে অর্পিত হলো মাতৃভূমির স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার পবিত্র দায়িত্ব। সততা, একাগ্রতা, কর্তব্যনিষ্ঠা ও পেশাদারিত্বের মাধ্যমে তোমরা দেশ ও জাতির জন্য সেবা করবে—এটাই আমাদের প্রত্যাশা। হাসান মাহমুদ আরও বলেন, বর্তমান বিশ্ব দ্রুত পরিবর্তনশীল, চতুর্থ শিল্পবিপ্লব, সাইবার যুদ্ধ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও প্রযুক্তিনির্ভর সামরিক কৌশলের যুগে সেনাবাহিনীকে হতে হবে আরও সুশৃঙ্খল, দক্ষ ও প্রযুক্তিসম্পন্ন। ভবিষ্যতের যুদ্ধ হবে সম্মিলিত ও যৌথ প্রশিক্ষণনির্ভর। তিন বাহিনীর মধ্যে সমন্বয় বা ‘জয়েন্টনেস’ সাফল্যের পূর্বশর্ত। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানিয়েছে, দীর্ঘ তিন বছরের কঠোর সামরিক প্রশিক্ষণ শেষে এই মনোজ্ঞ কুচকাওয়াজের মাধ্যমে ৮৮তম বিএমএ দীর্ঘমেয়াদি কোর্সের সর্বমোট ১৫৫ জন অফিসার ক্যাডেট কমিশন লাভ করেছেন।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কমিশনপ্রাপ্ত অফিসারদের মধ্যে ১২৮ জন পুরুষ ও ২৩ জন মহিলা অফিসার রয়েছেন। এছাড়াও কমিশনপ্রাপ্ত অফিসারদের মধ্যে রয়েছেন চারজন ফিলিস্তিনি অফিসার যারা নিজ দেশের সেনাবাহিনীতে যোগদান করবেন।
ব্যাটালিয়ন সিনিয়র আন্ডার অফিসার সম্রাট জাবির, ৮৮তম বিএমএ দীর্ঘমেয়াদি কোর্সের সেরা চৌকস ক্যাডেট হিসেবে অসামান্য গৌরবমণ্ডিত 'সোর্ড অব অনার' এবং সামরিক বিষয়ে শ্রেষ্ঠত্বের জন্য কোম্পানি সিনিয়র অফিসার মো. আব্দুল ওয়াদুদ মাসুম ‘সেনাবাহিনী প্রধান স্বর্ণপদক’ অর্জন করেন।
বিদেশি ক্যাডেটদের মধ্যে ফিলিস্তিনের অফিসার ক্যাডেট সার্জেন্ট মোহাম্মদ ইসবে ‘বিএমএ ট্রফি অফ এক্সিলেন্স’ লাভ করেন।
পরে প্রশিক্ষণ সমাপনকারী ক্যাডেটগণ দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার আনুষ্ঠানিক শপথ গ্রহণ করেন। এরপর অনুষ্ঠানে আগত অতিথিবৃন্দ এবং প্রশিক্ষণ সমাপনকারী ক্যাডেটদের পিতা-মাতা ও অভিভাবকগণ নবীন অফিসারদের র্যাঙ্ক-ব্যাজ পরিয়ে দেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রধান অতিথি বিএমএ প্যারেড গ্রাউন্ডে এসে পৌঁছালে ভারপ্রাপ্ত জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি) আর্মি ট্রেনিং এন্ড ডকট্রিন কমান্ড, জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি) ২৪ পদাতিক ডিভিশন ও এরিয়া কমান্ডার চট্টগ্রাম এরিয়া এবং বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমির কমান্ড্যান্ট তাকে অভ্যর্থনা জানান। অনুষ্ঠানে দেশি-বিদেশি উচ্চপদস্থ সামরিক ও অসামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ, সদ্য কমিশনপ্রাপ্ত অফিসারগণের বাবা-মা ও অভিভাবকগণ এবং গণমাধ্যম ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত থেকে এ বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ প্রত্যক্ষ করেন।
মন্তব্য করুন