বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) ভারতের আদানি পাওয়ার লিমিটেডকে ৩৩৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বকেয়া পরিশোধ করেছে। গড্ডা বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বাংলাদেশে সরবরাহকৃত বিদ্যুতের বিপরীতে ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত এই বকেয়া তৈরি হয়েছিল।
মঙ্গলবার (২৪ জুন) বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়, আদানির কাছে বকেয়া অর্থ পরিশোধ করা হয়েছে বিদ্যুৎ বিল আদায়ের পুনরুদ্ধার ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের ভর্তুকির সমন্বয়ের মাধ্যমে।
পাওয়ার ডিভিশনের সচিব ফারজানা মমতাজ বলেন, আদানিকে বকেয়া অর্থ মিটিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে কেন্দ্রটির উৎপাদন চালু রাখতে আর কোনো ঝুঁকি নেই। তবে কয়লার মূল্যের বিষয়ে এখনও আমাদের মতবিরোধ রয়েছে।
অপরদিকে আদানি পাওয়ার লিমিটেড নিশ্চিত করেছে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অর্থ পরিশোধ করায় তারা প্রায় ২০ মিলিয়ন ডলার সারচার্জ মওকুফ করেছে। শর্ত ছিল- ৩০ জুনের মধ্যে পরিশোধ সম্পন্ন করতে হবে।
এর আগে ১৭ জুন আদানি পাওয়ার বাংলাদেশের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বরাবর পাঠানো এক চিঠিতে বকেয়া অর্থ দ্রুত পরিশোধের অনুরোধ জানায়। ওই চিঠিতে আদানির দুই কোম্পানি- আদানি এনার্জি সল্যুশনস লিমিটেড (এইএসএল) ও আদানি পাওয়ার লিমিটেডের (এপিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক অনিল সারদানা বলেন, বকেয়া অর্থ আদায় না হলে ভারতের ঝাড়খন্ডের গড্ডা বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন ব্যাহত হবে, যা বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহে বড় সংকট সৃষ্টি করতে পারে।
বাংলাদেশের অর্থনীতি বর্তমানে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের তীব্র চাপে রয়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে সরকার রেকর্ড প্রায় ৩.৭৮ বিলিয়ন ডলার সুদ ও আসল পরিশোধ করেছে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছে, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।
বিদ্যুৎ খাতের একাধিক মেগা প্রকল্পের চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় এখন বড় অঙ্কের অর্থ পরিশোধের সময় এসেছে। এর প্রভাব পড়ছে রাজস্ব খাতে এবং সুশাসনের আওতায় বিদ্যুৎ উৎপাদন ও আমদানি ব্যয়ের সমন্বয়েও।
বিদ্যুৎ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আদানিকে বকেয়া পরিশোধ একটি সাময়িক সমাধান হলেও এই ধরনের দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি ও ব্যয়বহুল আমদানি নির্ভরতা ভবিষ্যতে আরও বড় অর্থনৈতিক চাপে ফেলতে পারে দেশকে। বিশেষ করে যখন বিশ্ববাজারে কয়লার মূল্য ও ডলার সংকট একসঙ্গে মাথাচাড়া দিচ্ছে।
অন্যদিকে, অন্তর্বর্তী সরকার থাকায় বিদ্যুৎ-সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক চুক্তি নিয়ে নতুন করে সমঝোতায় পৌঁছানোর সুযোগ সীমিত। ফলে সাময়িক অর্থ পরিশোধে স্থিতি এলেও মৌলিক সমাধান এখনও অনিশ্চিত।
মন্তব্য করুন