রাজধানীকে বাঁচাতে হলে কেবল নিয়ম তৈরি করলেই হবে না, সে নিয়ম যেন সবাই মেনে চলে সেই ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি রাজধানীকে পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা পালনকারী রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (রাজউক) দুর্নীতিমুক্ত করতে হবে। অন্যথায় এই শহরকে আর বাঁচিয়ে রাখা যাবে না।
বুধবার (২০ আগস্ট) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে সেন্টার ফর গভর্নমেন্ট স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত ‘ড্যাপ নিয়ে জটিলতা : টেকসই নগরায়ণ প্রসঙ্গ’ শীর্ষক নাগরিক সংলাপে বক্তারা এমন অভিমত ব্যক্ত করেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সিজিএসের প্রেসিডেন্ট সাংবাদিক জিল্লুর রহমান। মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক পারভেজ করিম আব্বাসী।
সংলাপে সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী আলমগীর কবির বলেন, ‘রাজধানীসহ পুরো দেশটা বিশৃঙ্খলভাবে বেড়ে উঠেছে। দেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা এখন দুর্নীতি। মানুষ রাজনীতিকদের দোষারোপ করে। আবার রাজনীতিকরা আমলাদের দোষারোপ করে। এভাবে একটা দেশ চলতে পারে না। এখন এনজিও সরকার এলেও দুর্নীতি কমেনি।’
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ বলেন, ‘দেশের মানুষের মনোজগতের পরিবর্তন দরকার, তা না হলে দুর্নীতি কমবে না। আইন যেটা করা হবে, সেটার সঠিক প্রয়োগ থাকতে হবে। ঘন ঘন আইন পরিবর্তন করা যাবে না। আইন কঠিনও করা যাবে না। কঠিন করলে আরও দুর্নীতি বেড়ে যাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এক সময় পরিবেশের দোহাই দিয়ে হাতিরঝিলের ভেতরে গড়ে ওঠা বিজিএমইএ ভবন ভেঙে ফেলা হলো। সেটা যখন তৈরি করা হলো, তখন রাজউক কোথায় ছিল। এখন আবার সেই হাতিরঝিলের ভেতরে বড় বড় খুঁটি বসানো হচ্ছে। এখন পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে না? মাঝখানে ভবনটা তৈরি করতে যে অর্থ ব্যয় হয়েছিল, সেটা নষ্ট হয়ে গেল। রাষ্ট্রের ক্ষতি হলো।’
জাতীয় পার্টির মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, ‘রাজপথে বের হলেই যানজট। বাতাসে সিসার দূষণ। এখন ঢাকাবাসীর হেলিকপ্টার দরকার। ঢাকা শহরের এই অবস্থার জন্য সবাই দায়ী। বেশি দায়ী রাজউক। নতুন করে পুকুর-মাঠ তৈরি করা কঠিন। যেগুলো আছে সেটা যেন আর নষ্ট হয়ে না যায়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।’
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, ‘ঢাকামুখী মানুষের জনস্রোত বন্ধ না হলে ঢাকা বাঁচবে না। এজন্য ঢাকার বাইরে কর্মসংস্থান তৈরি করতে হবে। প্রয়োজনে যারা ঢাকার বাইরে চাকরি করবে, তাদের বেতন বেশি দিতে হবে। তাহলে মানুষ ঢাকায় না থেকে রাজশাহীতে থাকতে চাইবে।’
সাংবাদিক এমএ আজিজ বলেন, ‘ডেভেলপার কোম্পানি, রাজউক, সরকার মিলে একটি নেক্সাস তৈরি করেছে। একজন ঘুষ দেয়, আরেকজন নেয়। হয় ঢাকা শহরকে সরাতে হবে, নইলে সিঙ্গাপুরের মতো পরিকল্পনা করে, তা বাস্তবায়ন করতে হবে।’
সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘রাজউক একেক সময় একেক নিয়ম করে, আর তাদের ঘুষের পরিমাণ বাড়ে। রাজউক ভবনের এক কিলোমিটারের ভেতরের ইট-পাথরও নাকি ঘুষ খায়। এখন বলা হচ্ছে, এক জায়গায় বাড়ি বানালে বেশি উচ্চতা দেওয়া হবে। আরেক জায়গায় বানালে কম উচ্চতা, এটা বৈষম্য। আমরা সমতাভিত্তিক দক্ষ নগরী চাই।’
আলোচনায় আরও অংশ নেন- সাবেক এমপি নিলুফার মনি চৌধুরী, ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন খান, মানবাধিকারকর্মী ফারজানা শারমিন পুতুল, বারভিডার সাবেক সভাপতি আব্দুল হক, ইউনিভার্সাল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের চেয়ারম্যান প্রীতি চক্রবর্তী, লন্ডনের নর্থ হামব্রিয়া ইউনিভার্সিটির শিক্ষক ড. আলিয়ার হোসেন, ঢাকা সিটি ল্যান্ড ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক দেওয়ান এমএ সাজ্জাদ, রিহ্যাবের পরিচালক সেলিম রাজা পিন্টু প্রমুখ।
মন্তব্য করুন