কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ১৭ জুন ২০২৩, ০৪:৪১ পিএম
আপডেট : ১৭ জুন ২০২৩, ০৪:৪৫ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

‘বাংলাদেশ-পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের অস্বাভাবিক আচরণ বোধগম্য নয়’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি : সংগৃহীত
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি : সংগৃহীত

‘যুক্তরাষ্ট্র একই সময়ে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সঙ্গে যে আচরণ করছে, তা বোধগম্য নয়। একদিকে বাংলাদেশে গণতন্ত্র শক্তিশালীকরণের অংশ হিসেবে সুষ্ঠু নির্বাচনে কেউ বাধা হয়ে দাঁড়ালে তার মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞার হুমকি দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে পাকিস্তানে অঘোষিত সামরিক শাসন চললেও সে বিষয়ে একদম চুপ যুক্তরাষ্ট্র। গণতন্ত্রের স্বার্থের কথা বলে এর আগে বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র, সেটিও যে খুব কাজে দিয়েছিল তা বলা যায় না।’ এক নিবন্ধে এসব কথা বলেছেন ভারতের নিউ দিল্লির সেন্টার ফর পলিসি রিসার্চের স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের এমিরেটাস অধ্যাপক ও ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের সাবেক উপদেষ্টা ব্রহ্মা চেলানি।

নিবন্ধটি টোকিওভিত্তিক বাণিজ্য বিষয়ক সংবাদমাধ্যম নিক্কি এশিয়ার ইংরেজি ভার্সনের মতামত পাতায় প্রকাশিত হয়।

ওই নিবন্ধে ব্রহ্মা চেলানি বলেন, ‘ শেখ হাসিনা ২০০৯ সাল থেকে শুরু করে ধর্মনিরপেক্ষ একটি বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি দেশকে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও দ্রুতগতির অর্থনৈতিক উন্নতির পথে নিয়ে গেছেন। যদিও বর্তমানে ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা পরিস্থিতির ফলে বিরূপ অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে দেশটির অর্থ ব্যবস্থা। কিন্তু টানা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাওয়া দেশ পাকিস্তানের তুলনায় বাংলাদেশ ঈর্ষণীয় প্রবৃদ্ধি অর্জন করে যাচ্ছে। পাকিস্তান তো প্রায় দেওলিয়া হওয়ার পথে। অথচ বাংলাদেশকে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের আহ্বানে আয়োজিত ২০২১ এবং এ বছরের শুরুতে ডেমোক্রেসি সম্মেলনের বাইরে রাখা হয়েছে। পাকিস্তানকে দু’বারই আমন্ত্রণ জানানো হলো, যদিও তারা তাতে যায়নি।’

‘এই পরিস্থিতিকে ঠিক কিভাবে ব্যাখ্যা করা যায়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন একদিকে গণতন্ত্র সুসংহতকরণ উদ্যোগ হিসেবে বাংলাদেশের যেসব কর্মকর্তা সুষ্ঠু নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করবে তাদের ওপর মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার কথা বলছে। অপরদিকে পাকিস্তানে অঘোষিত সামরিক আইন জারি হলেও সে বিষয়ে মার্কিন প্রশাসন একদম চুপ থাকে। অথচ পাকিস্তানে প্রতিনিয়ত গণগ্রেপ্তার, গুম ও নির্যাতন রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।’

নিবন্ধে বলা হয়, এই প্রশ্নের সংক্ষেপ উত্তর হলো- যুক্তরাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক অধিকার সুসংহতকরণের দীর্ঘ ইতিহাস বলে এটি বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। ভূরাজনৈতিক অবস্থা-পরিস্থিতি এ ক্ষেত্রে বড় ধরনের নিয়ামক হিসেবে কাজ করে। গণতন্ত্র সুসংহত করার কথা বলে এমন বহু জায়গায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে মার্কিন নীতি নির্ধারকরা।

অধ্যাপক ব্রহ্মা চেলানি বলেন, ‘বাইডেন প্রশাসন এই ভিসানীতির মধ্য দিয়ে মনে হয় দুটি জায়গা গুরুত্বের সঙ্গে নিতে চেয়েছে। একটি হলো দেশটির রাজনীতিবিদদের আত্মীয়স্বজন অনেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে থাকেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলেই আমেরিকান গ্রিন কার্ডধারী। আর তাছাড়া বাংলাদেশের রপ্তানির বিরাট অংশ পশ্চিমা দেশগুলোতে যায়। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশি পণ্যের শীর্ষস্থানীয় একটি গন্তব্য।’

‘ওয়াটার: এশিয়াস নিউ ব্যাটেলগ্রাউন্ড’ গ্রন্থের লেখক ব্রহ্ম চেলানি বলেন, “স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতার মেয়ে হাসিনা অবশ্য গত এপ্রিলে পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে বলেছেন, ‘তারা গণতন্ত্র উৎখাত করতে চায় এবং এমন একটি সরকার বসাতে চায়, যাদের মাঝে গণতন্ত্রের অস্তিত্ব থাকবে না। এটি অগণতান্ত্রিক একটি কাজ হবে।”

অধ্যাপক ব্রহ্মা চেলানির ভাষ্যমতে, মার্কিন নিষেধাজ্ঞা মিয়ানমার, ইরান, বেলারুশ ও কিউবায় রাজনৈতিক পরিস্থিতি পরিবর্তনে ব্যর্থ হয়েছে। বৈশ্বিক ক্ষমতা কাঠামোয় যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমহ্রাসমান প্রভাব এসব নিষেধাজ্ঞার কার্যকারিতা দিনকে দিন কমছে। যদিও এখন পর্যন্ত পশ্চিমা দেশগুলোই বৈশ্বিক অর্থ ব্যবস্থার কাঠামো নিয়ন্ত্রণ করছে এবং ডলার এখনও বিশ্বের রিজার্ভের প্রাথমিক মুদ্রা হিসেবে রয়ে গেছে। ফলে নিষেধাজ্ঞা এখনও যুক্তরাষ্ট্রের নীতি নির্ধারকদের কাছে আকর্ষণীয় পন্থা।

‘ঢাকার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ কড়াকড়ির তেমন কোনো অর্থ মিলছে না। এশিয়ার নিরাপত্তা বৃদ্ধিতে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যে যুদ্ধ তাতে শেখ হাসিনার সরকার বরং যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ মিত্র হিসেবে কাজ করতে পারে। অথচ বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে আলোচনা করতে গত মাসে শেখ হাসিনা যখন যুক্তরাষ্ট্র সফরে গেলেন বাইডেন প্রশাসনের একজনও তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন না।’

সিঙ্গাপুরে এ মাসে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন বললেন, যুক্তরাষ্ট্র চীনের ভ্রু কুচকানি বা অঙ্গুলি হেলনের বিপরীতে কিছু করবে না। কিন্তু ঠিকই বাংলাদেশে এমনটি করা হচ্ছে, সে পথেই আগাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।

বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তম জনগোষ্ঠীর দেশ বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্র এখন যা করছে, অবাধ ও ‍সুষ্ঠু নির্বাচনের চেয়ে ইসলামাদের কাছ থেকে স্বাধীনতা অর্জনে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের যে প্রচেষ্টার সময় পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর নৃশংসতা চলাকালে যে অবস্থান নিয়েছিল সেই দু:সহ স্মৃতি ফিরে আসছে বলে মনে হচ্ছে। ওয়াশিংটন এখন আসলে চাইছেটা কী।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

‘শেষবারের মতো আমার ছেলের মুখটা দেখতে চাই’

দুপুরের মধ্যে যেসব জেলায় ঝড়-বৃষ্টির আভাস

০৮ অক্টোবর : আজকের নামাজের সময়সূচি

বুধবার রাজধানীর যেসব এলাকার মার্কেট বন্ধ

১২ দল ও সমমনা জোটের সঙ্গে গণতন্ত্র মঞ্চের বৈঠক

১৭১ রোহিঙ্গাকে আটক করে ক্যাম্পে ফেরত পাঠাল বিজিবি

গ্রুপ ক্যাপ্টেন (অব.) খালেদ হোসাইনের নেতৃত্বে নতুন সদস্যদের গণসংহতি আন্দোলনে যোগদান

গাজীপুরে প্রবাসী বিএনপি নেতা পারভেজের প্রার্থিতা ঘোষণা

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ইমাম প্রশিক্ষণ দেবে তুরস্কের দিয়ানাত ফাউন্ডেশন

স্বপ্নদ্রষ্টার হাত ধরে ল্যাবএইড এআইয়ের উদ্বোধন

১০

মতবিনিময় সভায় যুব নেতারা / জুলাই সনদের ভিত্তিতে জাতীয় নির্বাচন হতে হবে

১১

দুর্গাপূজা নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বক্তব্যে উদ্বেগ ঐক্য পরিষদের 

১২

মিয়ানমারে বৌদ্ধদের উৎসবে জান্তার বিমান হামলায় নিহত ৪০

১৩

আ.লীগের কর্মী-সমর্থকদের জন্য কেঁদে কেঁদে দোয়া করলেন হাদি

১৪

তারেক রহমানের সাক্ষাৎকারে ভুল উদ্ধৃতি সংশোধনের আহ্বান টিআইবির

১৫

‘আবরারের স্মৃতিস্তম্ভ নিয়ে অনেকের গাত্রদাহ দেখেছি’

১৬

সৌন্দর্যবর্ধনে সাভার উপজেলা প্রশাসনের নানা উদ্যোগ

১৭

ছেলের দায়ের করা মামলায় বাবাসহ তিনজনের মৃত্যুদণ্ড

১৮

ভুয়া ফেসবুক আইডি থেকে কোরআন অবমাননা, সিএমপির জরুরি সতর্কবার্তা

১৯

জাতীয়করণ নিয়ে বেসরকারি শিক্ষকদের প্রতি তারেক রহমানের বার্তা

২০
X