কৈশোরবান্ধব স্কুল ও নারীবান্ধব কমিনিটি ক্লিনিক গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। তারা বলেছেন, আমাদের সমাজের প্রচলিত টাবু ও কুসংস্কার প্রথা ভেঙে নারী ও কিশোরীদের এগিয়ে যেতে হবে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা সিলেবাসে যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। সরকার, রাজনীতিবিদ, সিভিল সোসাইটি, শিক্ষকসমাজ এবং পরিবারকে যুক্ত করতে হবে। পাশাপাশি গ্রাম পর্যায়ে কমিনিটি ক্লিনিকসহ সারাদেশের সকল হাসপাতাল নারীবান্ধব হিসেবে গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
আজ সোমবার সকালে রাজধানীর মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর কনফারেন্স হলে বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ (বিএনপিস) আয়োজিত ' জাতীয় এসআরএইচআর কনফারেন্স ও যুব সম্মেলন-২৩' এ আহ্বান জানান বক্তারা।
যুব ও কিশোর কিশোরীদের জন্য নিশ্চিত হোক যৌন প্রজনন স্বাস্থ্য ও অধিকার এই স্লোগানে পালিত সম্মেলনে উদ্বোধক হিসেবে অংশ নেন বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের চেয়ারপার্সন শহীদজায়া শ্যামলী নাসরীন চৌধুরী। সভাপ্রধান হিসেবে অংশ নেন বিএনপিএস নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবীর। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিবিএইসসি ট্রাস্ট ও বিএমআরসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী। বিএনপিএস উপ পরিচালক শাহনাজ সুমীর সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ফাস্ট সেক্রেটারি ও টিম লিডার ইনক্লুসিভ গভানেন্স, এনজিকো লরেনজো, নেদারল্যান্ডস এম্বেসীর পলিসি এডভাইজার, সোস্যাল সেক্টর মুশফিকা জামান সাতিয়ার।
শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন কেএমকেএস এর নির্বাহী পরিচালক শেফালিকা ত্রিপুরা, সিমাভি বাংলাদেশের এমএন্ডই অফিসার তুহীন সরকার।
তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে আওয়ার লাইফ আওয়ার হেলথ প্রকল্পের মাধ্যমে ১২ হাজার ছেলে- মেয়েদের কাছে পৌঁছাতে পেরেছি। তাদের মধ্যে ৩০০ ক্লাব গড়ে তোলা হয়েছে। আগামীতে সরকার ও সহযোগী রাষ্ট্রগুলোর সহযোগিতা পেলে সারাদেশে নারীদের মাঝে যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা বৃহৎ আকারে পৌঁছে দিতে পারব।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সৈয়দ মোছাচ্ছের আলী বলেন, সমাজের মূলধারা থেকে যারা বাইরে রয়েছে বিশেষ করে নারী সমাজকে হাতে হাত রেখে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। কারণ নারী সমাজকে পেছনে রেখে রাষ্ট্রের উন্নয়ন সম্ভব নয়। তাই জনগণের মাঝে সচেতনতা বাড়াতে হবে।
তিনি বলেন, স্কুলে সবচেয়ে বেশি যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ে শিক্ষা দেওয়া দরকার। কিন্তু স্কুলে এসব বিষয়ে পাঠদান করাতে চায় না শিক্ষকরা। আমাদের সমাজ ও পরিবারের মাঝে একটা টাবু আছে তারাও মেয়েদের স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে মোটেও আলোচনা করতে চায় না। এটাও একটা ধরনের চ্যালেঞ্জ। এখন আমাদের দায়িত্ব নারীর যৌন ও স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কে নতুন প্রজন্মকে সচেতন করে গড়ে তুলতে হবে। আগামী দিনে কমিনিটি ক্লিনিক নারীদের স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে কাজ করবো বলেও অঙ্গীকার করেন।
রোকেয়া কবীর বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে আমরা একটি প্রকল্প নিয়ে কাজ করেছি। কিন্তু সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়া লক্ষ্য যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য শিক্ষা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এতে বড় পরিসরে মানুষের মাঝে সচেনতা গড়ে উঠবে। সারা দেশে স্থানীয় পর্যায়ে কমিনিটি ক্লিনিক, জেলা ও উপজেলা হাসপাতালেও নারীবান্ধব কর্ণার ও সচেতনতা বৃদ্ধি করার ওপর গুরুত্ব দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
শেফালী কা ত্রিপুরা বলেন, আমাদের সমাজে নারীদের মাসিক হলে তারা রান্না করতে পারে না। বাকি সব কাজ করতে পারে। এছাড়াও নানা কুসংস্কারে কারণে এখন জরায়ু ও বেস্ট কান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে। চিকিৎসা করাতে প্রতিবছর লাখ লাখ টাকা ব্যয় হচ্ছে।
তিনি বলেন, রাষ্ট্রকে এগিয়ে নিতে নারী পুরুষ সমানভাবে এগিয়ে যেতে হবে। নারীদের পেছনে ফেলে কোনোভাবে রাষ্ট্র এগিয়ে যেতে পারবে না।
মুশফিকা জামান সতিয়ার বলেন, দেশে নারীদের সংখ্যা ৫১ শতাংশ। তাই আমাদের সিভিল সোসাইটি, সরকার ও সুশীল সমাজ ও সহযোগী ডোনাররা সবাই একত্রে কাজ করলে নারীরা আরও রাষ্ট্রের উন্নয়নশীল কাজে সহায়ক ভূমিকা হিসেবে গড়ে উঠবে। ভবিষ্যতে অর্থনীতিতে ভুমিকা রাখবে। কমিনিটি ক্লিনিক ও হাসপাতালে নারীদের স্বাস্থ্যসেবা কর্ণার চালু করার পরামর্শ দেন তিনি।
শ্যামলী নাসরিন বলেন, নারীরা ৩০-৪০ আগে যেসব কথা বলতে পারত না এখন তারা তাদের স্বাস্থ্যসেবার কথা মুখ ফুটে বলতে পারছে। আজকের নারীরা আলোর করে সামনে দিকে এগিয়ে যাক এটাই প্রত্যাশা করি।
মন্তব্য করুন