কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২১ অক্টোবর ২০২৩, ০৭:০১ পিএম
আপডেট : ২১ অক্টোবর ২০২৩, ০৭:০২ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

‘সুবিধাবাদী গোষ্ঠী সড়ক পরিবহন সেক্টরে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় প্রধান বাধা’

‘সুবিধাবাদী গোষ্ঠী সড়ক পরিবহন সেক্টরে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় প্রধান বাধা’

সড়ক পরিবহন খাতে একটি সুবিধাবাদী গোষ্ঠী রয়েছে। এই গোষ্ঠীই সড়ক পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় প্রধান বাধা। এরা নানা অজুহাতে সড়ক পরিবহন আইন বাস্তবায়ন করতে দিচ্ছে না। কারণ এই খাতে চাঁদাবাজি এবং দুর্নীতির বিরাট সুযোগ রয়েছে। যেখানে যত বেশি অব্যবস্থাপনা ও নৈরাজ্য থাকে, সেখানে ততবেশি দুর্নীতি ও চাঁদাবাজির সুযোগ থাকে। তবে এই অব্যবস্থাপনা নতুন নয় বা হঠাৎ করে তৈরি হয়নি। দীর্ঘদিনের অপরাজনীতির মধ্য দিয়ে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সমস্যাটি রাজনৈতিক। যখন যে দল ক্ষমতাসীন থাকে, তখন সেই দলের লোকজন সড়ক পরিবহন খাত নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে চাঁদাবাজি করে।

শনিবার ধানমন্ডিতে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন কর্তৃক আয়োজিত দেশের গণপরিবহন ও সড়ক নিরাপত্তা পর্যালোচনা শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এসব কথা বলেন। পরিবহন সেক্টরে শৃঙ্খলা ফেরাতে ১০ দফা দাবি তুলে ধরা হয় সংবাদ সম্মেলনে।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এ আই মাহবুন উদ্দিন আহমেদ লিখিত বক্তব্যে বলেন, সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে প্রাতিষ্ঠানিক এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক দুই ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হয়। সরকার প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগের মাধ্যমে দক্ষ চালক তৈরি, চালকদের বেতন-কর্মঘণ্টা নির্দিষ্টকরণ ও বাস্তবায়ন, পরিবহন শ্রমিকদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, মেয়াদোত্তীর্ণ ও ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন বন্ধ, অনুপোযুক্ত সড়ক মেরামত এবং সড়ক পরিবহন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহে সুশাসন নিশ্চিত করবে। বাস্তবতা হলো, প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক কোনো উদ্যোগই যথেষ্ট মাত্রায় বাস্তবায়ন হচ্ছে না। ফলে সড়ক ব্যবহারকারী সাধারণ জনগণ যেমন সচেতন হচ্ছে না, তেমনি সড়ক পরিবহন ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে না।

তিনি বলেন, রাজধানীর যানজট নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে অনেক ফ্লাইওভার, ওভারপাস, ইউলুপ, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। তারপরও রাজধানীর যানজট কমছে না, বরং বাড়ছে। কারণ এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে যথেষ্ট মাত্রায় স্টাডি করা হয়নি।

রাজধানীর সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিজস্ব বাস সার্ভিস বাধ্যতামূলক করার তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, প্রয়োজনে সরকারি লোনের মাধ্যমে বাস কিনতে হবে। এতে প্রাইভেট গাড়ির ব্যবহার কমবে। বাইসাইকেল লেন তৈরি করলে কয়েক লাখ ছাত্র-যুবক বাইসাইকেলে যাতায়াত করবে। কারণ পুরো রাজধানী সাইকেল রেঞ্জের আওতায়। এসব উদ্যোগ গ্রহণ করলে রাজধানীর যানজট একেবারেই নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। যানজট কমলে মোটরসাইকেলও ব্যাপকভাবে হ্রাস পাবে। একইসঙ্গে প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ এবং মফস্বল শহরকেন্দ্রিক কর্মসংস্থান সৃষ্টি করলে রাজধানীমুখী জনস্রোতও কমবে। এসব সমন্বিত ও টেকসই উদ্যোগের ফলে রাজধানীর যানজট ব্যাপক মাত্রায় হ্রাস পাওয়ায় দেশে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি বেগবান হবে।

তিনি বলেন, বর্তমানে রাজধানীর গণপরিবহন ৫৩ শতাংশ যাত্রী বহন করে, আর ব্যক্তিগত গাড়ি ১১ শতাংশ যাত্রী বহন করে। অথচ সড়কে ৭০ শতাংশের বেশি জায়গা দখল করে চলে ব্যক্তিগত গাড়ি ও রিকশা। যানজটের কারণে মানুষ বাধ্য হয়ে মোটরসাইকেল ব্যবহার করছে। রাজধানীতে এখন ১৩ লাখের বেশি মোটরসাইকেল। রিকশার হিসাব কেউ জানে না। এই পরিস্থিতিতে রাজধানী ঢাকা এখন পৃথিবীর ধীরগতির শহরের তালিকায় শীর্ষে উঠেছে।

সংবাদ সম্মেলনে রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের ১০ দফা সুপারিশসমূহের মধ্যে রয়েছে, দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ নেওয়া, চালকদের বেতন-কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করা, বিআরটিএ'র সক্ষমতা বৃদ্ধি, পরিবহন মালিক-শ্রমিক, যাত্রী ও পথচারীদের প্রতি ট্রাফিক আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ, মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন বন্ধ করে এগুলোর জন্য সার্ভিস রোড তৈরি, পর্যায়ক্রমে সব মহাসড়কে রোড ডিভাইডার নির্মাণ, গণপরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধ, রেল ও নৌ-পথ সংস্কার করে সড়ক পথের ওপর চাপ কমানো, টেকসই পরিবহন কৌশল প্রণয়ন ও সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ বাধাহীনভাবে বাস্তবায়ন।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের ভাইস চেয়ারম্যান সৈয়দ জাহাঙ্গীর, অধ্যাপক হাসিনা বেগম, মো. রাশেদ খান, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক মো. জিল্লুর রহমান, রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান, জয়েন্ট সেক্রেটারি মো. তৌফিকুজ্জামান, রিসার্চ অ্যান্ড ডিজিটাল ইন্টারভেনশন এক্সপার্ট আমিনুর রহিম প্রমুখ।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

শিশুকে যে ৮ শিক্ষা দেওয়া জরুরি

দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীকে ‘চাঁদাবাজ’ আখ্যা প্রধান শিক্ষকের, তদন্তে কমিটি

চট্টগ্রাম-৩ আসনে ধানের শীষের মনোনয়নপ্রত্যাশী মিল্টন ভুঁইয়া

বাড়ি ভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা নিয়ে ‘সুখবর’ পাচ্ছেন শিক্ষক-কর্মচারীরা

ফেসবুক পেজ জনপ্রিয় করার ৮ কৌশল

বাড়ির আঙিনায় বিষধর পদ্মগোখরা, অতঃপর...

মোবাইল দিয়েই ডিএসএলআর ক্যামেরার মতো ছবি তোলার ৫ কৌশল

বরইতলা নদীর ‘বাঁধ’ এখন মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতর

ইস্পাত খাতে বিশেষ তহবিল চান ব্যবসায়ীরা

বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য বৃদ্ধিতে আগ্রহী পাকিস্তান

১০

উপকূলজুড়ে টানা বৃষ্টিপাত, জনজীবনে দুর্ভোগ

১১

উমামা-সাদীর নেতৃত্বে ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য’ প্যানেল ঘোষণা

১২

ডেঙ্গুতে আরও ৫ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৩১১ জন

১৩

ডাকসু নির্বাচন / ঢাবি শিক্ষার্থীদের প্রতি মির্যা গালিবের আহ্বান

১৪

বাংলাদেশি সন্দেহে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের মারধর

১৫

মৃত ব্যক্তির জন্য বিলাপ করে কান্না করলে কি কবরে আজাব হয়?

১৬

কবিতার ছন্দে সুনেহরা-আরশের মিষ্টি কথোপকথন

১৭

রাগবির ধাঁচে ক্রিকেটারদের এবার নেওয়া হবে ‘ব্রঙ্কো’ টেস্ট!

১৮

‘ডাকসুতে দাঁড়াইছে সবাই, বসে আছে একজনই’

১৯

সাতক্ষীরা-৪ আসনে কালীগঞ্জ ও শ্যামনগর রাখার দাবিতে বিএনপির স্মারকলিপি

২০
X