দেশের সড়ক পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ১৮টি প্রস্তাব দিয়েছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন। এসব প্রস্তাব বাস্তবায়নের জন্য স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি রূপরেখা দিয়েছে বেসরকারি এই প্রতিষ্ঠানটি। রূপরেখায় ২০৩১ সালের মধ্যে সব প্রস্তাব বাস্তবায়নের ধারণা দেওয়া হয়েছে।
রোববার (১০ আগস্ট) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে অনুষ্ঠিত ‘সড়ক পরিবহন ব্যবস্থাপনা সংস্কারে রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের রূপরেখা : সরকারের কাছে প্রত্যাশা’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের ভাইস চেয়ারম্যান সৈয়দ মো. জাহাঙ্গীর বলেন, সড়ক ব্যবস্থাপনা সংস্কারে রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তিন ধাপের রূপরেখা তৈরি করেছে সেগুলো হলো, স্বল্পমেয়াদি প্রস্তাব (২০২৫–২০২৭) : জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিল পুনর্গঠন, বিআরটিএ, বিআরটিসি, ডিটিসিএর শীর্ষপদে টেকনিক্যাল বিশেষজ্ঞ নিয়োগ, প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার, ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষায় সড়ক-সম্পর্কিত প্রশ্ন ও রোড টেস্ট, যানবাহনের আয়ুষ্কাল ও ডাম্পিং নীতিমালা, সড়ক নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন, ট্র্যাফিক ও পার্কিং ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন, শিক্ষা-সচেতনতা কার্যক্রমে বাজেট বরাদ্দ, দুর্ঘটনা ক্ষতিগ্রস্তদের ট্রাস্ট ফান্ডে ৭০০ কোটি টাকা বরাদ্দ এবং প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ।
মধ্যমেয়াদি প্রস্তাব (২০২৫–২০২৯) : আধুনিক নিরাপত্তা প্রযুক্তি বাধ্যতামূলক, মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহন দ্রুত প্রত্যাহার, রুট রেশনালাইজেশন ও কোম্পানিভিত্তিক বাস সার্ভিস, স্কুল-কলেজে নিজস্ব বাস সার্ভিস বাধ্যতামূলক এবং মোটরসাইকেলের গতি ও নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ।
দীর্ঘমেয়াদি প্রস্তাব (২০২৫–২০৩১) : রাজধানীতে বহুতল হাইড্রোলিক পার্কিং স্টেশন, ছোট যানবাহনের নিরাপত্তা উন্নয়ন ও নিবন্ধন এবং সড়ক-রেল-নৌপথ একত্রিত করে অভিন্ন যোগাযোগ মন্ত্রণালয় গঠন করতে হবে।
এসব প্রস্তাব সরকার গ্রহণ করবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে দীর্ঘ ৫৪ বছরেও টেকসই পরিবহন কৌশল বাস্তবায়ন না করার কারণে সড়ক পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হয়নি। গড়ে ওঠেনি নিরাপদ জনবান্ধব গণপরিবহন ব্যবস্থা। দেশে জনসংখ্যার উচ্চ ঘনত্ব, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, দুর্বল ও অপ্রতুল সড়ক অবকাঠামো, সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ঘাটতি এবং সড়ক ব্যবহারকারীদের অসচেতনতার কারণে দেশে সড়ক দুর্ঘটনার হার উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এ দিকে সংবাদ সম্মেলনে মধ্যমেয়াদি রূপরেখার মধ্যে বলা হয়েছে, রাজধানীর গণপরিবহনে শৃঙ্খলা আনতে রুট রেশনালাইজেশনের মাধ্যমে কোম্পানিভিত্তিক আধুনিক এসি ও নন-এসি বাস চালুর প্রস্তাব দিয়েছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন। এতে ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার কমে যানজট হ্রাস পাবে এবং বাসের গতি বাড়বে। বর্তমানে ব্যক্তিগত যান সড়কের ৭৫ শতাংশ জায়গা দখল করে মাত্র ১১ শতাংশ যাত্রী বহন করে, যেখানে বাস বহন করে ৫৩ শতাংশ যাত্রী। মাত্র সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকায় চার হাজার নতুন বাস কিনে এ ব্যবস্থা চালু করা গেলে চাঁদাবাজি ও যাত্রী তোলার প্রতিযোগিতা বন্ধ হবে এবং নগরবাসী সাশ্রয়ী ও আরামদায়ক সেবা পাবেন।
এ ছাড়াও দেশে পাঁচ লাখের বেশি মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহনের ৭০ শতাংশ এখনো চলাচল করছে, যা সড়ক দুর্ঘটনার বড় কারণ। রোড সেফটি ফাউন্ডেশন দ্রুত এসব যানবাহন প্রত্যাহার ও নতুন যান কেনায় মালিকদের সহজ ঋণ সুবিধা দেওয়ার প্রস্তাব করেছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২০২০ সাল থেকে ২০২৫ সালের জুলাই পর্যন্ত দেশে ৩৪ হাজার ৮৯৪টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে ৩৭ হাজার ৩৮২ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর আহত হয়েছে অন্তত আরো ৫৯ হাজার ৫৯৭ জন।
মন্তব্য করুন