জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের আগে ঢাকায় শুরু হওয়া প্রস্তুতি সভায় শান্তিরক্ষা কার্যক্রমকে আরও নারীবান্ধব করার তাগিদ দিয়েছে বাংলাদেশ। রোববার (২৫ জুন) রাজধানীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত উদ্বোধনী পর্বে এই তাগিদ দেওয়া হয়।
একই সঙ্গে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বৈষম্য ও যৌন হয়রানি প্রতিরোধ, নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি এবং নীতিনির্ধারণী পদে পদায়নের ওপর গুরুত্ব দিয়েছে সরকার। আগামী ৫ ও ৬ ডিসেম্বর ঘানায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক হবে।
এতে শান্তিরক্ষায় অংশগ্রহণ ও অর্থায়নকারী সদস্য দেশগুলোর মন্ত্রীরা যোগ দেবেন। ওই বৈঠকের আগে চারটি বিষয়ভিত্তিক ধারাবাহিক সভার একটি ঢাকার সভায় নারী শান্তিরক্ষীদের সমস্যা সমাধানে অবস্থানপত্র তৈরির বিষয়ে আলোচনা চলছে।
বাংলাদেশ, কানাডা ও উরুগুয়ের যৌথ আয়োজনে ‘জাতিসংঘ শান্তিরক্ষায় নারী’ শীর্ষক এই সভার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা বিভাগের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল জ্যঁ পিয়েরে লাক্রোয়ার এবং ব্যবস্থাপনা কৌশল, নীতি ও কমপ্লায়েন্স বিভাগের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল ক্যাথেরিন পোলার্ড বক্তব্য দেন।
জ্যঁ পিয়ের লাক্রোয়ার দিনে দিনে জটিল হয়ে ওঠা শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের সংকট সমাধানে নারীদের দক্ষতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব দেন। তিনি জেন্ডারবান্ধব সুবিধা বৃদ্ধি, নারীদের কণ্ঠ সোচ্চার ও নেতৃত্ব স্থানে নারীদের আনতে বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে বলেন, নারীরা বর্তমানে সাতটি গুরুত্বপূর্ণ পদের পাঁচটিতে কাজ করছেন। নানা উদ্যোগ সত্ত্বেও শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে জেন্ডার সমতার ক্ষেত্রে কিছু বৈষম্য রয়ে গেছে। প্রতিরোধে নারী কর্মকর্তা নিয়োগে বৈষম্য নিরসন, নারীবান্ধব ইউনিফর্ম, সদস্য দেশের জাতীয় ও প্রতিরক্ষা নীতিতে জেন্ডার সমতা নিশ্চিত করা এবং সংঘাত পরিস্থিতি মোকাবিলায় দক্ষতা বৃদ্ধির পরামর্শ দেন তিনি।
জ্যঁ পিয়েরে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের অবদানের কথা স্বীকার করেন এবং নারীর অংশগ্রহণকে উদাহরণ সৃষ্টির জন্য বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানান।
ক্যাথরিন পোলার্ড বৈষম্য ও যৌন হয়রানি রোধের ওপর গুরুত্ব দিয়ে বলেন, বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠায় বর্তমানে সদস্যদেশগুলোর অংশীদারত্ব যে কোনো সময়ের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তাই শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের সফলতা ও টেকসই শান্তির লক্ষ্যে নারীর অভিজ্ঞতা ও দক্ষতাকে স্বীকৃতি দিতে হবে। যৌন নিপীড়নমূলক ঘটনাগুলো অনুধাবন করে ভুক্তভোগীদের সহায়তা দিতে হবে।
পররাষ্ট্র সচিব (সিনিয়র সচিব) মাসুদ বিন মোমেন কিছু দেশে শান্তিরক্ষায় কাজ করার ক্ষেত্রে নিরাপত্তা শঙ্কার বিষয় বিবেচনায় নেওয়ার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব দেন। তিনি বলেন, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অন্যতম বড় সেনা মোতায়েনকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ জাতিসংঘের শান্তি, নিরাপত্তা ও লিঙ্গ সমতার মূলনীতি প্রসারের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বাংলাদেশের শান্তিরক্ষা মিশনে বৈষম্য ও যৌন হয়রানির কোনো জায়গা নেই। তিনি সবাইকে এই ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে এক সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান।
সভায় পুলিশের মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, বাংলাদেশ থেকে জাতিসংঘের শান্তি রক্ষা কার্যক্রমে অগ্রগামী ভূমিকা রাখছে নারী পুলিশ। তারা কার্যক্রমগুলোতে জেন্ডার সহিংসতার বিরুদ্ধে কাজ করছে এবং অনুসরণীয় ব্যক্তি হিসেবে তারা নিজেদের উপস্থাপন করছেন। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটির কমান্ড্যান্ট মেজর জেনারেল এ এস এম রিদওয়ানুর রহমান জানান, বাংলাদেশ থেকে তিন হাজার নারী শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশ নিয়েছে। এখন সেখানে মোতায়েন রয়েছেন ৫০০-এর বেশি নারী।
উরুগুয়ের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মেজর কারিনা ডে লস সান্তোস বলেন, উন্নতি, চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা ও ইতিবাচক দিক চর্চার জন্য শান্তি রক্ষা কার্যক্রমে নারীর অর্থপূর্ণ অংশগ্রহণ জরুরি।
শান্তি রক্ষা কার্যক্রমে নারীর প্রতি যৌন নিপীড়নসহ সব ধরনের বৈষম্যের বিরুদ্ধে শূন্যসহিষ্ণুতা দেখানোর আহ্বান জানান কানাডার গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স বিভাগের মহাপরিচালক (শান্তি ও স্থিতিশীলতা কর্মসূচি) উলরিক শ্যানন।
উদ্বোধনী পর্বের পর প্রস্তুতি সভার প্রথম দিনে পাঁচটি বিষয়ভিত্তিক অধিবেশনে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে নারীদের সমস্যাগুলো ও সমাধানের উপায় নিয়ে আলোচনা হয়।
মন্তব্য করুন