মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে সিনথেটিক মাদক ‘জোম্বি ড্রাগ’। বাংলাদেশে যেন এ ড্রাগ ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেজন্য সতর্কবার্তা দিয়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) অধিদপ্তরের গোয়েন্দা শাখা থেকে এ সতর্কবার্তা জারি করা হয়।
এতে বলা হয়, বিপজ্জনক এ ধরনের মাদক নানারকম মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যার পাশপাশি মৃত্যুও ডেকে আনতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রে এর ব্যবহার ভয়াবহ মাত্রায় বেড়ে গেছে। সে কারণে বাংলাদেশেও সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।
সতর্কবার্তায় আরও বলা হয়, এ মাদকটি মানবদেহে মারাত্মক ইনফেকশন, দৃষ্টিভ্রম এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত ঘটাতে পারে। এটি অল্প পরিমাণে সেবন করলে সেবনকারী বাস্তব ভুলে কল্পনার জগতে বিচরণ করে। সামান্য বেশি সেবনে মৃত্যু নিশ্চিত হয়ে পড়ে।
বিমানবন্দরেও যেন ‘জোম্বি ড্রাগ’ বা ‘ট্রাঙ্ক’-এর বিষয়েও সতর্কতা বাড়ানো হয়, সেজন্যই ওই সতর্কতা জারি করা হয়েছে বলে জানান অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
এ ড্রাগের বিষয়টি প্রথম অধিদপ্তরের নজরে আনেন রাজশাহী অঞ্চলের উপপরিচালক (গোয়েন্দা) মোহা. জিল্লুর রহমান। গত ৩০ আগস্ট এ বিষয়ে ১১ পাতার একটি প্রতিবেদন ঢাকা অধিপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে পাঠান তিনি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘জোম্বি’ ড্রাগ ত্বক, পেশি রক্তনালি এবং শরীরের প্রধান প্রধান অঙ্গগুলোর মারাত্মক ক্ষতি করে। সেবনকারীদের শরীরে নিরাময় অযোগ্য ক্ষত সৃষ্টি হয়, যাতে ব্যাকটেরিয়া ও ফাঙ্গাস সংক্রমিত হয়ে গ্যাংরিন হয়ে যায়। অর্থাৎ আক্ষরিক অর্থেই এ মাদক মাংসে পচন সৃষ্টি করে।
এতে বলা হয়, নিয়মিত সেবনে কারও কারও ক্ষেত্রে মনোবৈকল্য দেখা দেয়, আবার কেউ আগ্রাসী আচরণ করে। এ মাদক মানুষের হৃদস্পন্দন ও শ্বাস প্রশ্বাসকে কমিয়ে দিতে পারে। ফলে সেবনকারীর মৃত্যুও ঘটতে পারে। সম্প্রতি ‘জোম্বি’ ড্রাগের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্যব্যবস্থা মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে।
এ মাদকের ভয়াবহতা এড়াতে যুক্তরাষ্ট্রে কী ধরনের সচেতনতা তৈরির পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, সে বিষয়েও বলা হয়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের বিশেষ প্রতিবেদনে।
ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রে আড়াই লাখের বেশি বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত অভিবাসী রয়েছে। দেশে তাদের যাতায়াত ছাড়াও অর্থনৈতিক যোগাযোগ আছে। তাই এটি সহজেই বাংলাদেশে প্রবেশ করার শঙ্কা রয়েছে।
‘জোম্বি’ ড্রাগ’ কোনো একক মাদকের নাম নয়। ‘জাইলাজিন’ নামের একটি ট্রাঙ্কুইলাইজার গরু বা ঘোড়ার ক্ষেত্রে চেতনানাশক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। মূলত, সেই ওষুধকে নেশাদ্রব্য হিসেবে নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের মাদকসেবীরা। নেশার প্রভাব ও স্থায়িত্ব বাড়ানোর জন্য কখনও কখনও এর সঙ্গে ফেন্টানিল, হেরোইন, কোকেনের মত অন্য মাদকও মেশানো হচ্ছে। ওষুধটি যেহেতু ট্রাঙ্কুইলাইজার, সে জন্য এ মাদককে ট্রাঙ্কও বলা হয়।
এ ছাড়া ডেসোমরফিন এবং আলফা-পাইরোলিডিনোপেনশোফেননের মতো সিনথেটিক মাদককেও যুক্তরাষ্ট্রে ‘জোম্বি’ ড্রাগ’ বলা হয়।
মন্তব্য করুন