জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে নারীদের অর্থবহ অংশগ্রহণ নিশ্চিতে বৈষম্য, অসমতা ও যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধের আহ্বানে ঢাকায় শেষ হলো দুদিনের প্রস্তুতি সভা। আলোচনায় সদস্য রাষ্ট্রগুলোতে নারীবান্ধব জাতীয় ও সামরিক নীতি প্রণয়ন নিশ্চিত করা, নারী শান্তিরক্ষীদের আত্মত্যাগের স্বীকৃতি, নিপীড়নের ঘটনায় অভিযুক্তকে জবাবদিহিতার আওতায় আনার জিরো টলারেন্স নীতি এবং নারীর জন্য সম সুযোগের ক্ষেত্র তৈরির সুপারিশ উঠে আসে।
বাংলাদেশ, কানাডা ও উরুগুয়ের যৌথ আয়োজনে সোমবার (২৬ জুন) রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ‘জাতিসংঘ শান্তিরক্ষায় নারী’ শীর্ষক এই সভা শেষ হয়।
আগামী ৫ ও ৬ ডিসেম্বর ঘানায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক হবে। এতে শান্তিরক্ষায় অংশগ্রহণ ও অর্থায়নকারী সদস্য দেশগুলোর মন্ত্রীরা যোগ দেবেন। ওই বৈঠকের আগে চারটি বিষয়ভিত্তিক ধারাবাহিক সভার প্রথমটি ঢাকায় অনুষ্ঠিত হলো। এই সভায় গৃহীত নারী শান্তিরক্ষীদের সমস্যা সমাধানে অবস্থানপত্র ঘানায় পেশ করা হবে।
সমাপনী অনুষ্ঠানে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা বিভাগের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল জ্যঁ পিয়েরে লাক্রোয়ার জাতীয় পর্যায়ে ও শান্তি রক্ষা কার্যক্রমের প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীর অর্থপূর্ণ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার ওপর জোর দিয়ে বলেন, নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে সমতার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতাগুলো শনাক্ত করতে সবাইকে এক হতে হবে। এ লক্ষ্যে শান্তিরক্ষা কার্যক্রম ছাড়াও বিশ্বজুড়ে নারী পরিস্থিতির পরিবর্তন আনতে হবে। এক্ষেত্রে তিনি নারীর ক্ষমতায়নের বাধাগুলো চিহ্নিত করা, প্রশিক্ষণ, নিয়োগ ও পদোন্নতিতে নারীর জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি, জেন্ডারবান্ধব ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত, নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া ও ইতিবাচক অভিজ্ঞতা অনুসরণ করার আহ্বান জানান।
জাতিসংঘের ব্যবস্থাপনা কৌশল, নীতি ও কমপ্লায়েন্স বিভাগের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল ক্যাথেরিন পোলার্ড জাতিসংঘের নীল পতাকার নিচে নারীর জন্য নিরাপদ ও সম্মানজনক কর্মপরিবেশ নিশ্চিতের পাশাপাশি যৌন সহিংসতার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানান।
বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীতে নারীর প্রতি যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি মেনে চলার কথা উল্লেখ করেন সশস্ত্র বাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। তিনি ঘানায় অনুষ্ঠেয় বৈঠকে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে নিরাপত্তা ঝুঁকিগুলো প্রতিরোধে গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানান।
জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মোহাম্মদ আবদুল মুহিত বলেন, বিভিন্ন দেশে শান্তিরক্ষা বাহিনীর সদস্যরা সহিংসতার শিকার হচ্ছেন। এটা প্রতিরোধ করা জরুরি। তিনি জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নারী ও শিশুর ওপর ক্ষতিকর প্রভাব এবং পরিবেশগত বৈষম্য কমানোর বিষয়গুলোও ঘানায় আলোচনায় তোলার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মো. কামরুল আহসান, কানাডার গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স বিভাগের মহাপরিচালক (শান্তি ও স্থিতিশীলতা কর্মসূচি) উলরিক শ্যানন, উরুগুয়ের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (রাজনৈতিক) লুইস বেরমুদেজ এবং জাতিসংঘের পুলিশ উপদেষ্টা ফয়সাল শাহকার।
মন্তব্য করুন