সম্প্রতি পোশাক শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠার চলমান আন্দোলনের খবর বাতাসে ঘুরছে। এটা একটা নিত্যকার ঘটনা যা আমরা সবসময় শুনে আসছি। তবে এসব নিয়ে কিছু অপ্রকাশিত বিষয় সচরাচর সবার সামনে আসে না।
আমরা সেই গল্পগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। এখানে পোশাকশিল্পের সঙ্গে জড়িত ৩ স্বনামধন্য ব্যক্তিত্বের নাম উঠে এসেছে। তারা হলেন- বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট কল্পনা আক্তার, আওয়াজ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক নাজমা আক্তার ও কল্পনা'র সাধারণ সম্পাদক বাবুল আক্তার।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সভাপতি হিসেবে বেশ প্রভাবশালী ভূমিকা পালন করছেন কল্পনা আক্তার, যিনি জীমু নামেও পরিচিত। তিনি একই সাথে বিসিডব্লিউএসের নির্বাহী পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। গার্মেন্টস শিল্পের একদম কেন্দ্র থেকে জীমুর যাত্রা শুরু। বাংলাদেশে মাত্র ১২ বছর বয়সে শিশু শ্রমিক হিসেবে কাজ শুরু করেছিলেন। তার প্রথম দিকের সংগ্রাম এমন পথ খুলে দিয়েছে যা তাকে শ্রমিকদের অধিকার সমর্থনে অগ্রগামী ভূমিকা পালনে সাহায্য করেছে।
তবে শ্রমিকদের পক্ষে ওকালতির পরও তার বিভিন্ন কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ২০২২-২৩ পর্যন্ত বিভিন্ন দেশ ভ্রমণে তিনি ১১ লাখ ৩৩ হাজার ৯৩৩ টাকা খরচ করেছেন বলে জানা গেছে। একজন সাবেক গার্মেন্টস কর্মী হিসেবে তার এ ধরনের খরচ ভ্রুকুটির সৃষ্টি করেছে এবং বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট মহলে কানাঘুষা শুরু হয়েছে। কারখানার মেঝে থেকে বিশ্বমঞ্চে জীমুর যাত্রা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তৃণমূল থেকে তার উঠে আসার যাত্রার সঙ্গে ব্যাপক অর্থ ব্যয় করে বিদেশ ভ্রমণের বৈপরীত্য নিয়ে মানুষ প্রশ্ন তুলছে।
গত ১২ মাসে কল্পনা আক্তারের বিদেশ ভ্রমণের সময়রেখা এবং আর্থিক ব্যয়ের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। তার ভ্রমণের সময় কখন এবং কত টাকা ব্যয় হয়েছিল তার চিত্রও তুলে ধরা হয়েছে।
সমৃদ্ধির এমন দৃষ্টান্ত তাদের সম্পদের উৎস সম্পর্কে তদন্তের দাবিকে ত্বরান্বিত করে। এ ছাড়া এমন বেমানান অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি পোশাকশিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিশিষ্ট ব্যক্তিদের অনৈতিক অনুশীলনের সন্দেহকে বাড়িয়ে তুলে।
সবার মনে প্রশ্ন উঠছে, একসময় যারা গার্মেন্টস শ্রমিক ছিলেন এবং যাদের বেতন সাধারণত বিশ হাজার টাকা পর্যন্ত ছিল, তারা কীভাবে এত ঘন ঘন আন্তর্জাতিক ভ্রমণ করেন এবং সম্পদের মালিক হতে পারেন। এসব প্রশ্ন তথাকথিত গার্মেন্টস নেতাদের আর্থিক সংগতি নিয়ে তদন্তের বিষয়ে সুশীল সমাজ দাবিকে ত্বরান্বিত করেছে।
যেহেতু গার্মেন্টস খাত বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক স্তম্ভ হিসেবে দাঁড়িয়েছে, কয়েকজনের ক্রিয়াকলাপ এ শিল্পের ওপর কালো ছায়া ফেলছে। এসবের মাধ্যমে রাজনৈতিক দৃশ্যপটকে বিপন্ন করে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে। গার্মেন্টস শিল্পের নেতৃত্বে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে এসব ব্যক্তির সম্পদের উৎস সম্পর্কে ব্যাপক তদন্ত প্রয়োজন।
মন্তব্য করুন