দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে আরও বেশি গবেষণামুখী করতে চায় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। সে কারণে ইউজিসির ৪৯তম বার্ষিক প্রতিবেদনে মানসম্মত গবেষণার ওপর সবচেয়ে বেশি জোর দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে গবেষণা কার্যক্রম বৃদ্ধির সুপারিশ করা হয়েছে। পাশাপাশি গবেষণার মানের দিকে নজর দিতে বলা হয়েছে।
গবেষণার ক্ষেত্রে ইউজিসির সুপারিশগুলো হলো- বিভিন্ন জার্নালে গবেষণা প্রকাশের ক্ষেত্রে নীতিমালা প্রণয়ন এবং কিউ-১ এবং কিউ-২ জার্নালে যাতে পাবলিকেশন থাকে, তা নিশ্চিত করা। দেশের মধ্যে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের ক্ষেত্রে যথাযথ গবেষণা পদ্ধতি অনুসরণ করা। শিক্ষক নিয়োগ ও পদোন্নতির জন্য ইনডেক্স জার্নালে যাতে গবেষণা থাকে, তা নিশ্চিত করা। স্ট্র্যাটেজিক্যাল প্ল্যান ফর হায়ার এডুকেশনে (২০১৮-৩০) যেসব টাস্ক আছে, সে অনুযায়ী শিক্ষা ও গবেষণার মান নিশ্চিত করা। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ইন্ডাস্ট্রির আয় শুধু সংস্কৃতি ও ধর্মীয় খাতে ব্যয় না করে শিক্ষা, উদ্ভাবন ও গবেষণায় বিনিয়োগ করা এবং চৌর্যবৃত্তি রোধে জাতীয়ভাবে নীতিমালা প্রণয়ন। বিশেষ করে এআই প্রযুক্তির বিষয়টি মাথায় রেখে যুগোপযোগী নীতিমালা প্রণয়ন করা।
ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন কালবেলাকে বলেন, শিক্ষকদের গবেষণায় আগ্রহী করতে গবেষণার প্রতি বেশি জোর দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে মানসম্মত গবেষণা খুবই জরুরি। আমরা মাতৃভাষাকে অবহেলা করতে পারব না, আবার ইংরেজিকেও অবহেলা করতে পারব না। আমরা ইংরেজি শিখব। একই সঙ্গে নিজেদের মাতৃভাষায় উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করব। এ ছাড়া সুপারিশে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল এবং গণিতের সঙ্গে আর্টসকে যোগ করে স্টিমকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
ইউজিসির সুপারিশে আরও রয়েছে- সব বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক মাস্টারপ্ল্যান করা, এই মাস্টারপ্ল্যানে আগামী ১০-১৫ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কি কি নতুন বিষয় খুলতে চায়, কতসংখ্যক শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে, শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত কত হবে, শিক্ষা, গবেষণা ও উদ্ভাবন বিষয়ে পরিকল্পনা কি, ভবিষ্যতে আর্থিক ও অবকাঠামো কেমন হবে বিস্তারিত থাকতে হবে। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে মাতৃভাষায় পাঠদান এবং গবেষণার ক্ষেত্রেও মাতৃভাষা ব্যবহারের জন্য সরকারের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি অনুসরণ করা, পরবর্তী প্রজন্মকে বিশ্ব নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে সাহিত্য, সংগীত, শিল্পকলাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের জন্য ইউনিভার্সিটি টিচার্স ট্রেনিং একাডেমি (ইউটিটিএ), ন্যাশনাল রিসার্চ কাউন্সিল, সেন্ট্রাল ল্যাব দ্রুত চালু করা এবং এতে সরকারি বরাদ্দ থাকার বিষয়ে বলা হয়েছে।
বলা হয়, শিক্ষা ঋণ দেওয়ার বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ, সরকার এক্ষেত্রে অনুদান দিতে পারে। বাইরের দেশের সূচকগুলোর ভিত্তিতে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে জাতীয় পর্যায়ে র্যাঙ্কিং করা, তবে এক্ষেত্রে দেশীয় প্রেক্ষাপট বিবেচনা করতে হবে। উচ্চ শিক্ষায় ৪৮ লাখ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে, এত বেশি শিক্ষার্থীর বিভিন্ন বিষয়ের কাজ ইউজিসির এত ছোট ভবনে সম্পন্ন হওয়া সম্ভব নয়, সে কারণে পার্শ্ববর্তী প্লটে সুউচ্চ ভবন নির্মাণ করা যেতে পারে, এ জন্য সরকারকে সুনজর দিতে হবে। ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিয়া রিলেশনশিপে ইন্টার্নশিপের সময় তিন মাস থেকে বাড়িয়ে ছয় মাস করা, হাতে-কলমে জানার সুযোগ বৃদ্ধিতে এই সুপারিশ করা হয়েছে।
ইউজিসি বলছে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উপাচার্যদের মাধ্যমে বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ দীর্ঘদিনের। দুর্নীতি রোধকল্পে কমিশনের অংশগ্রহণ থাকা উচিত। এ বিষয়ে সুপারিশে বলা হয়েছে উপাচার্য নিয়োগ দেবেন রাষ্ট্রপতি। তবে, সম্প্রতি উপাচার্য নিয়োগ পাওয়ার পর তাদের দুর্নীতির খবর পাওয়া যাচ্ছে। সে কারণে উপাচার্যের দুর্নীতি রোধকল্পে ইউজিসির অংশগ্রহণ থাকা উচিত।
মন্তব্য করুন