অগ্নিদগ্ধদের চিকিৎসায় দিকপাল ডা. সামন্ত লাল সেন। মন্ত্রীর চেয়ারও তাকে মোহাচ্ছন্ন করেনি। বেইলি রোডে অগ্নিকাণ্ডের পর থেকে প্রতিদিন তিনি রোগী ও স্বজনদের কাছে ছুটে গেছেন।
আজ শনিবার (২ মার্চ) ছুটির দিনের সকালে আবারও ছুটে যান চানখারপুলের শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ ও ইনস্টিটিউটের চিকিৎসকদের সঙ্গে নিয়ে অগ্নিদগ্ধ রোগীর সার্বিক খোঁজ খবর নেন।
সেখান থেকে ফিরে দগ্ধ রোগীর চিকিৎসায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন তার নেতৃত্বে ১৭ সদস্যের মেডিকেল বোর্ডের সভা করেন। মন্ত্রীর নেতৃত্বে এমন কমিটি অনেকটা নজিরবিহীন। কিন্তু মন্ত্রী যখন ডা. সামন্ত লাল সেন তখন এমন ঘটনা স্বাভাবিক। সেখান থেকে বেরিয়ে মুখোমুখি হন সাংবাদিকদের। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি ১১ জনের মধ্যে ছয়জনের অবস্থা ভালো। তাই তাদের ছাড়পত্র দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ১৭ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড। তবে পাঁচজনের অবস্থা এখনো শঙ্কটাপন্ন। তাদের পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
তিনি বলেন, বেইলি রোডের ভবনে অগ্নিদগ্ধ সবার চিকিৎসা সরকারি অর্থায়নে করা হবে। প্রধানমন্ত্রী তাকে এ বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন।
এদিকে বেইলি রোডে আগুনের ঘটনায় এখন পর্যন্ত নিহত ৪৩ জনের মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে। শনিবার একই পরিবারের ৩ জনের মরদেহ তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। জেলা প্রশাসন বলছে, শনাক্ত না হওয়া বাকি ৩ জনের মরদেহ ময়নাতদন্তের পর ডিএনএ নমুনা মিললে তাদের স্বজনদের কাছে হন্তান্তর করা হবে।
অগ্নিকাণ্ডের এ ঘটনায় আশঙ্কাজনক ৫ জন এখনো শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন। এ ছাড়া ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি রয়েছেন আরও ২ জন।
এর আগে, গত ২৯ ফেব্রুয়ারি রাতে গ্রিন কজি কটেজ নামের সাততলা ওই ভবনে আগুনের সূত্রপাত। আগুন লাগার কিছু সময় পরই একটি গ্যাস সিলেন্ডার বিস্ফোরিত হওয়ায় আগুন ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। ২ ঘণ্টার চেষ্টা চালিয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।
ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, রাত পৌনে ১০টার দিকে বেইলি রোডে অবস্থিত কাচ্চিভাই রেস্টুরেন্টের নিচতলায় আগুন লাগে। গ্যাস সিলিন্ডারের লিকেজজনিত ত্রুটির কারণে আগুন লেগে থাকতে পারে বলে রেস্টুরেন্টে কর্মরত কর্মচারীদের মাধ্যমে তথ্য পায় তারা। রাত ৯টা ৫৬ মিনিটের দিকে সর্বপ্রথম ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে। পরে একে একে যোগ দেয় আরও ১২টি ইউনিট। কিন্তু এর আগেই ভবনজুড়ে আগুনের ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ে। তখন জীবন বাঁচাতে সবাই দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করতে থাকেন। ভবনে আটকে থাকা লোকজনদের অনেকে ছাদে আশ্রয় নেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দ্বিতীয় তলায় আগুন লাগার পর তা ওপরের তলাগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। আতঙ্কিত লোকজন ওপরের দিকে উঠে যায়। এ সময় ভবন থেকে তাড়াহুড়ো করে নামতে গিয়ে কয়েকজন আহত হন।
অগ্নিকাণ্ডের এ ঘটনায় মোট ৪৬ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
মন্তব্য করুন