সোমবার, ০৯ জুন ২০২৫, ২৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৫ মার্চ ২০২৪, ০৪:৪০ এএম
আপডেট : ২৫ মার্চ ২০২৪, ০৭:৩৮ এএম
অনলাইন সংস্করণ

ভয়াল ২৫ মার্চ আজ

75676
২৫ শে মার্চ, জাতীয় গণহত্যা দিবস। ছবি : সংগৃহীত

আজ ২৫ মার্চ, বাঙালি জাতির ইতিহাসে বেদনাবিধুর একটি রাত। ১৯৭১ সালের এই রাতে বাঙালি জাতি মুখোমুখি হয়েছিল এক বিভীষিকাময় হত্যাকাণ্ডের। মধ্যরাতে বর্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী পূর্বপরিকল্পিত অপারেশন সার্চলাইটের নীলনকশা অনুযায়ী বাঙালির কণ্ঠ চিরতরে স্তব্ধ করে দিতে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে।

৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অনানুষ্ঠানিক স্বাধীনতার ডাকে ভীত হয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী গোপনে নীলনকশা আঁকে। স্বাধীনতার স্বপ্ন মুছে দিতে ২৫ মার্চ রাতে গণহত্যা শুরু করে হানাদার বাহিনী। যদিও তাদের সেই পরিকল্পনায় বাদ সাধেন জাতির পিতা। ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরেই বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। তারপর ৯ মাসের সশস্ত্র যুদ্ধের মধ্য দিয়ে আসে বাংলাদেশের স্বাধীনতা।

সেই রাতের ভয়াবহ গণহত্যার অভিযানের নাম দেওয়া হয় অপারেশন সার্চলাইট। এই অভিযানের নির্দেশনামা তৈরি করেন পাকিস্তানের দুই সামরিক কর্মকর্তা মেজর জেনারেল খাদিম হোসেন রাজা ও মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী। যদিও নির্দেশনামার কোনো লিখিত নথি রাখা হয়নি। গণহত্যার নির্দেশ মুখে মুখে ফরমেশন কমান্ডার বা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জানানো হয়। ২০১২ সালে মেজর জেনারেল খাদিম হোসেন রাজা ‘এ স্ট্রেঞ্জার ইন মাই ওন কান্ট্রি’ নামে একটি আত্মজীবনী প্রকাশ করেন। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস প্রকাশিত সেই আত্মজীবনীতে প্রথমবারের মতো অপারেশন সার্চলাইট সম্পর্কে কিছু তথ্য প্রকাশিত হয়।

অপারেশন সার্চলাইট কীভাবে পরিকল্পিত হয়, ১৯৭১ সালের সেই স্মৃতিচারণ করে রাজা লিখেছেন, ১৭ মার্চ, সকাল প্রায় ১০টা। টিক্কা খান আমাকে ও মেজর জেনারেল ফরমানকে কমান্ড হাউসে তার সঙ্গে দেখা করতে বলেন। খবর পেয়ে আমরা দুজন টিক্কা খানের সঙ্গে দেখা করি। গিয়ে দেখি, সেখানে জেনারেল আবদুল হামিদ খানও রয়েছেন। টিক্কা খান আমাদের বলেন, প্রেসিডেন্টের সঙ্গে শেখ মুজিবের সমঝোতা আলোচনা ইতিবাচক দিকে এগোচ্ছে না। প্রেসিডেন্ট চান আমরা যেন সামরিক অভিযানের প্রস্তুতি গ্রহণ করি এবং সে অনুযায়ী একটা পরিকল্পনা করি। এ ছাড়া আর কোনো মৌখিক বা লিখিত নির্দেশনা আমরা পাইনি। আমাদের বলা হয়, ১৮ মার্চ বিকেলে আমরা দুজন যেন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে ওই পরিকল্পনা চূড়ান্ত করি। এদিন সকালেই খাদিম হোসেন রাজা তার কার্যালয়ে রাও ফরমান আলীকে নিয়ে বসেন। তারাই গণহত্যার এ অভিযানের নাম দেন অপারেশন সার্চলাইট।

যুক্তরাষ্ট্রের সাংবাদিক রবার্ট পেইন ২৫ মার্চ রাত সম্পর্কে লেখেন, সেই রাতে ৭ হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়। গ্রেপ্তার করা হয় আরও ৩ হাজার লোক। ঢাকায় ঘটনার শুরু মাত্র হয়েছিল। এরপর পূর্ব পাকিস্তানজুড়ে সৈন্যরা বাড়াতে থাকল মৃতের সংখ্যা। জ্বালিয়ে দিতে শুরু করে ঘরবাড়ি, দোকানপাট। লুট আর ধ্বংস যেন তাদের নেশায় পরিণত হয়। রাস্তায় পড়ে থাকা মৃতদেহগুলো কাক-শিয়ালের খাবারে পরিণত হয়। পুরো বাংলাদেশ হয়ে ওঠে শকুনতাড়িত শ্মশানভূমি।

এই গণহত্যার স্বীকৃতি খোদ পাকিস্তান সরকার প্রকাশিত দলিলেও রয়েছে। পূর্ব পাকিস্তানের সংকট সম্পর্কে যে শ্বেতপত্র পাকিস্তান সরকার মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে প্রকাশ করেছিল, তাতে বলা হয়—১৯৭১ সালের ১ থেকে ২৫ মার্চ রাত পর্যন্ত ১ লাখেরও বেশি মানুষের জীবননাশ হয়েছিল।

পাকিস্তানি হায়েনাদের কাছ থেকে রক্ষা পাননি রোকেয়া হলের ছাত্রীরাও। ড. গোবিন্দ চন্দ্র দেব ও জ্যোতির্ময় গুহ ঠাকুরতা, অধ্যাপক সন্তোষ ভট্টাচার্য, ড. মনিরুজ্জামানসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ৯ জন শিক্ষককে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়। ঢাবির জগন্নাথ হলে চলে নৃশংসতম হত্যার সবচেয়ে বড় ঘটনাটি। এখানে হত্যাযজ্ঞ চলে রাত থেকে সকাল পর্যন্ত।

প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান অপারেশন সার্চলাইট পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সব পদক্ষেপ চূড়ান্ত করে গোপনে ঢাকা থেকে করাচি চলে যান। সেনা অভিযানের শুরুতেই হানাদার বাহিনী বঙ্গবন্ধুকে তার ধানমন্ডির বাসভবন থেকে গ্রেপ্তার করে।

যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি উদযাপনের লক্ষে জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এ উপলক্ষে আজ (সোমবার) রাত ১১টা থেকে ১১টা ১ মিনিট পর্যন্ত সারাদেশে প্রতীকী ‘ব্ল্যাক আউট’ উদযাপন করা হবে। তবে কেপিআই এবং জরুরি স্থাপনা এ কর্মসূচির আওতামুক্ত থাকবে। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণী দিয়েছেন। এদিন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে সকাল সাড়ে ১০টায় গণহত্যা দিবসের ওপর আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।

সারা দেশে গণহত্যা এবং মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গীতিনাট্য ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে। স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসাসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিশিষ্ট ব্যক্তি এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কণ্ঠে ২৫ মার্চ গণহত্যার স্মৃতিচারণা ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। ঢাকাসহ সব সিটি করপোরেশনে গণহত্যার ওপর দুর্লভ আলোকচিত্র ও প্রামাণ্যচিত্র প্রচার করা হবে। এ ছাড়া ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে এদিন বাদ জোহর বা সুবিধাজনক সময় দেশের সব মসজিদে বিশেষ মোনাজাত এবং অন্যান্য উপাসনালয়ে প্রার্থনা করা হবে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে এবং বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসেও দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে একই কর্মসূচি পালন করা হবে।

গণহত্যা দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলো গণহত্যা দিবসের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্য কর্মসূচি পালন করবে। এদিন রাজধানীতে সমাবেশ করবে আওয়ামী লীগ। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আজ দুপুর ২টায় ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগের যৌথ উদ্যোগে সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

রাবার বুলেট আর কাঁদানে গ্যাসে রণক্ষেত্র লস অ্যাঞ্জেলস

সাবেক সংবাদ উপস্থাপকের ‘রহস্যজনক’ মৃত্যু, কী বলছে পুলিশ

এপ্রিলে নির্বাচন প্রসঙ্গে যা বললেন উপদেষ্টা আসিফ

কক্সবাজার সৈকতে বন্ধুকে বাঁচাতে প্রাণ গেল আরেক বন্ধুর

মাস্ক নিষিদ্ধ ঘোষণা করলেন ট্রাম্প

রোনালদোর স্বীকারোক্তি, দেশের জন্য জেতার চেয়ে বড় কিছু নেই

অবৈধ আরও ৪২ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠাল যুক্তরাষ্ট্র

ভারতে প্রকাশ্যে ২ পুলিশ সদস্যকে ছুরিকাঘাত

অ্যাকশন দৃশ্য করতে গিয়ে আঘাত পেয়েছি : ফারিণ

এই ছবিটিই বলে দেবে আপনার মানসিক চরিত্র

১০

তাপপ্রবাহে পুড়ছে দেশের ৬ অঞ্চল

১১

সাড়ে ১৫ বছরে মানুষ স্বাচ্ছন্দ্যে ঈদ করতে পারেনি : শফিকুর রহমান

১২

লাচ্ছির সঙ্গে বিষ মিশিয়ে দুই মেয়েকে হত্যার পর আত্মহত্যার চেষ্টা বাবার

১৩

কানাডায় নৌকাডুবিতে প্রাণ গেল বাংলাদেশি পাইলট ও ব্যবসায়ীর

১৪

কলেজছাত্রের বিছানার নিচে মিলল স্নাইপার

১৫

সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে আত্মবিশ্বাসে টগবগ করছেন হামজা

১৬

ভারত ফেরত যাত্রীদের করোনা পরীক্ষা

১৭

আব্দুল হামিদকে কেন গ্রেপ্তার করা হয়নি, জানালেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

১৮

গলায় মুরগির হাড় আটকে শিশুর মৃত্যু

১৯

জয়ার মেজাজ খারাপ

২০
X