বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৬ জুন ২০২৩, ০৪:৩৮ পিএম
আপডেট : ০৭ জুন ২০২৩, ০৭:২৬ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

আমাদের লড়াইটা এখন অনেক কঠিন

আমাদের লড়াইটা এখন অনেক কঠিন
আমাদের লড়াইটা এখন অনেক কঠিন

রুমিন ফারহানা রাজনীতিবিদ ও আইনজীবী। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি)সহআন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক। তিনি সংরক্ষিত নারী আসন-৫০ থেকে নির্বাচিত একাদশ জাতীয় সংসদের সদস্য ছিলেন। তিনি ২০১৯ সালের ২৮ মে জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনে নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি ২০২২ সালের ১১ ডিসেম্বর সংসদ সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করেন। হলিক্রস স্কুল থেকে মাধ্যমিক ও ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করার পর লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিভাগে তার স্নাতক সম্পন্ন করেন এবং যুক্তরাজ্যের লিংকনস ইন থেকে ব্যারিস্টার ডিগ্রি অর্জন করেন। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন, বিএনপির আন্দোলন, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতিসহ নানা বিষয় নিয়ে কালবেলার সঙ্গে কথা বলেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন এম এম মুসা।

কালবেলা: অনেক বছর পরে আপনাদের আন্দোলনে সক্রিয় দেখা যাচ্ছে এবং গত কয়েক মাস ধরে গুছিয়ে আন্দোলন করতে দেখা যাচ্ছে বিএনপিকে। এর রহস্যটা কী?

রুমিন ফারহানা: বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ১৭ বছর ধরে আন্দোলনের মধ্যেই আছে। মিথ্যা মামলায় আমাদের চেয়ারপারসন কারাবরণ করেছেন,সরকার পরিকল্পিতভাবে তাকে গত পাঁচ বছর ধরে রাজনীতি থেকে বাইরে রেখেছে। মিথ্যা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলায় ৭৫ বছর বয়সে তাকে কারাগারে নেয়া হয়েছে। অ্যাক্টিং চেয়ারম্যানকে দেশে ফিরতে দেওয়া হচ্ছে না। মহাসচিবের বিরুদ্ধে প্রায় শ’খানেক মামলা। স্ট্যাডিং কমিটি থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত বিএনপির নেতাকর্মীদের গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা, নির্যাতন করা হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে। নানাভাবে আমাদের দমানোর চেষ্টা হয়েছে। আমাদের দল ভাঙার বহু চেষ্টা হয়েছে। সেসব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা এবং নানা বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করেই আমরা ১৭ বছর ধরে প্রধান বিরোধী দলের ভূমিকায় আছি। অত্যন্ত শক্তিশালী বিরোধী দলের ভূমিকায় আছি। যেটা আওয়ামী লীগ চিন্তাও করেনি। এর মধ্যে গত কয়েক মাস ধরে আমাদের আন্দোলন একটা ভিন্ন মাত্রা নিয়েছে। আন্দোলনের শুরু থেকে একটা বিষয়ে মতৈক্য ছিল। আন্দোলন হবে শান্তিপূর্ণ, আন্দোলন হবে ভীষণভাবে গণতান্ত্রিক। আমরা কোনোরকম সহিংসতা বা উস্কানিতে পা দিব না। অতীতে সরকারের নানা ফাঁদ ছিল। ১৩-১৪ সালে তারা সহিংসতা করেছে। তারা বাসে আগুন দিয়ে নাম দিয়েছে বিএনপির। কিন্তু যখন পত্রিকা রিপোর্ট করছে তখন যুবলীগ-ছাত্রলীগের নাম এসেছে। এমনকি আমরা এটাও দেখেছি, এখন পর্যন্ত একটা মামলারও ফায়সালা হয়নি। মামলাগুলো ফয়সালা করলে দেখা যেত সেখানে আওয়ামী লীগের লোকজনের নাম আসছে। তারপরও আমাদের নামে তারা অসংখ্য মিথ্যা মামলা দিয়েছে। গত কয়েক মাসের মধ্যে আপনারা দেখেছেন যে, আমাদের অসংখ্য নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হয়েছে। ১৭ জন কর্মীকে তারা স্রেফ গুলি করে হত্যা করেছে। সুতরাং অত্যন্ত বৈরী একটা পরিবেশে আমাদের আন্দোলন চালাতে হচ্ছে। আমাদের কর্মসূচিগুলো চলছে। আমি আসলে ধন্যবাদ দেব আমাদের শীর্ষ নেতৃত্ব এবং তৃণমূলকে। তারা যদি শক্তভাবে না দাঁড়াত তাহলে সরকার তার রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে যেভাবে ১৫ বছর সহিংসতা চালিয়েছে তাতে বিএনপির পক্ষে টিকে থাকা দায় হতো।

কালবেলা: বিএনপি এখন কিসের জন্য আন্দোলন করছে?

রুমিন ফারহানা: আন্দোলনের উদ্দেশ্য যদি আমাকে এক কথায় বলতে হয়, তাহলে বলব বিএনপি মানুষের ভোটের অধিকার মানুষের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার আন্দোলন করছে। দেশের মালিকানা দেশের মানুষের হাতে ফিরিয়ে দেওয়ার আন্দোলন করছে। বিএনপি মানুষের মানবাধিকার রক্ষা, কথা বলার অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার আন্দোলন করছে। আমরা যে সরকারটিকে গত ১০ বছর দেখছি; বিশেষ করে ১৪ সাল থেকে, এই সরকারটি একেবারেই অনির্বাচিত’। অনির্বাচিত সরকার থাকার নানা কুফল এখন আমরা দেখতে পাচ্ছি। একটা কূটনৈতিক অস্থিরতা আছে চারপাশে, একটা রাজনৈতিক অস্থিরতা আছে, একটা অর্থনৈতিক অস্থিরতা আছে। নানামুখী অস্থিরতার গোড়ার কারণ যদি অনুসন্ধান করেন, দেখবেন- ‘অনির্বাচিত সরকার’। আমরা একটা নির্বাচিত সরকার চাই, সেটা যেই আসুক।

কালবেলা: বিএনপি ২০১৪ সালে নির্বাচনে গেল না, কারণ আপনারা আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচন করবেন না। ১৮ সালের নির্বাচনে গেলেন কিন্তু সেখানেও ফল ভালো হলো না। এবার আপনাদের প্রস্তুতি কেমন, আওয়ামী লীগের সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবেন?

রুমিন ফারহানা: আমরা এবার আশাবাদী, ভীষণ রকম আশাবাদী। ২০১৪ সালে নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্তটি সঠিক ছিল। আমরা নির্বাচনে না যাওয়ায় সে নির্বাচন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। বিএনপি নির্বাচনে না যাওয়ায় ভোটার উপস্থিতি ছিল না বললেই চলে। সে সময়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন- ‘এটা একটি নিয়ম রক্ষার নির্বাচন। অচিরেই আমরা সব দলকে নিয়ে আরেকটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করব’। সেটি তারা পাঁচ বছরেও করেনি। আওয়ামী লীগ যা বলে, আওয়ামী লীগ তা করে না। আওয়ামী লীগ যা করে, আওয়ামী লীগ তা বিশ্বাস করে না। আওয়ামী লীগের যে চেহারা আমরা দেখাতে চেয়েছি, সেটা মানুষ ১৪ সালে দেখেছে। ১৮ সালের কথা যদি বলেন, ১৮ সালে আমাদের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। সরকারপ্রধানের কাছ থেকে আমাদের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে- ‘নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড থাকবে। নির্বাচনে প্রার্থীরা সমান সুযোগ পাবে। নির্বাচনে কোনোরকম সহিংসতা হবে না। কোনোরকম কারচুপি হবে না’। সেটা শতভাগ মিথ্যা প্রমাণ হয়েছে এবং ২০১৮ সালে তো আমাদের নানা রকমভাবে বোঝানো হয়েছে, জাতীয়ভাবে একরকম চাপ ছিল, বিদেশিদের একরকম চাপ ছিল; ‘নির্বাচনে গিয়েই দেখো, আওয়ামী লীগের অধীনে কি হয়’। কি হয় এটা এখন বিশ্ববাসী দেখেছে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ২০১৮ সালের নির্বাচনকে নিয়ে প্রচুর রিপোর্ট হয়েছে, তারা বলেছে-‘এটা কোনো ভোট হয়নি’। এতটাই নির্লজ্জ রকমের কারচুপি হয়েছে যে, আওয়ামী লীগ এখন নানা অজুহাত বের করার চেষ্টা করছে। তারা বলছে বিএনপি এক সিটে একাধিক প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়েছে, কখনো তারা বলেছে-‘বিএনপির প্রধানমন্ত্রী কে হবে সেটা তারা দেখাতে পারে নাই’। কখনো বলছে, বিএনপির নেতা ছিল না, তারা নেতা ভাড়া করে নিয়ে এসেছে অন্য দল থেকে। এসব কারণে বিএনপি মাত্র সাতটি সিট পেয়েছে নির্বাচনে। এসবই সরকারের এক ধরনের অসহায়ত্ব প্রমাণ করে। এই নির্বাচন নিয়ে টিআইবি’র রিপোর্ট আমরা দেখেছি। তারা বলেছে দৈবচয়নের ভিত্তিতে নেয়া ৫০টি আসনের মধ্যে ৪৭টি আসনেই তারা অনিয়ম পেয়েছে। এর কোনো সুষ্ঠু জবাব সরকার দিতে পারেনি। সুজনের রিপোর্টের সরকার কোনো সুষ্ঠু জবাব দিতে পারেনি। তাদের সঙ্গে জোটে আছে,এখন বিরোধী দলে আছে জাতীয় পার্টি। জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন, ‘হ্যাঁ; রাতে ভোট হয়, আমরা দেখেছি’। তাদের জোটের সঙ্গী বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেনন বলেছেন, ভোট সুষ্ঠু হয়নি। গত নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে পারেনি। সুতরাং জোটের ভেতর থেকেই কথা আসছে, আওয়ামী লীগ নেতা বলছেন, ‘অতি উৎসাহীরা এটা করেছে’। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক পদে আছে এমন ব্যক্তিকে আমরা দেখেছি, ডয়েচে ভেলের টকশোতে বলতে- ‘আমরা আসলে এতটা চাইনি’। তাহলে তারা কতটা চেয়েছিল তা আমরা জানি না। তবে যতটা চেয়েছিল, প্রশাসন তাদের অনেক বেশি এনে দিয়েছে। কারচুরি ঘটনা মানুষের সামনে স্পষ্ট, আন্তর্জাতিক মহলের সামনে স্পষ্ট, আমাদের ঋণদাতাগোষ্ঠী এবং উন্নয়ন সহযোগী তাদের কাছে স্পষ্ট। এরপর মানুষের এমন অবস্থা হয়েছে, ‘মানুষ বলে আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে’। আমাদের সব সমাবেশে সাধারণ মানুষ যোগদান করছে। সেখানে হাজার হাজার মানুষের ঢল। আমি সম্প্রতি লালমনিরহাটে গিয়েছিলাম, রংপুরে আমাদের অবস্থান খুব একটা শক্তিশালী না। আমরা থার্ড পজিশনে আছি। এক নাম্বারে জাতীয় পার্টিকে ধরা হয়, দ্বিতীয় আওয়ামী লীগকে এবং তিন নাম্বারে বিএনপি। সেই তিন নম্বরে থাকা বিএনপি যখন লালমনিরহাটে জনসভা করেছে সেখানে লাখ লাখ মানুষ এসেছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে কারও কারও সাথে কথা বলেছি। প্রশ্ন করেছি আপনি কি কোনো পদে আছেন? তারা বলেছে, আপা আমি কোনো পদে নাই। আমি আসছি শুধু আপনাদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করতে। এই সরকারকে আমরা আর একদিনও চাই না। এক মুহূর্তও চাই না। এই সরকারের প্রতি মানুষের মধ্যে আমরা এক ধরনের হতাশা, এক ধরনের ক্ষোভ, এক ধরনের রাগ দেখি। সেই সঙ্গে তো নানা সমস্যা রয়েছে। মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের যে দাম, তাতে মানুষের নাভিশ্বাস উঠে গেছে। কিছু ব্যক্তির হাতে হাজার হাজার কোটি টাকা জমা হয়েছে। বৈষম্য প্রকট। এরকম অবস্থায় আসলে মানুষ ভালো নাই। এটাই মানুষ আমাদের বারবার বলে। আমাদের মিটিংয়ে তারা আসে,তাদের অনেক ঝুঁকি নিয়ে আসতে হয়।

কালবেলা: আপনারা বলছেন, তত্ত্বাবধায়ক ছাড়া নির্বাচনে যাবেন না। সরকার বলছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারে ফিরে যাওয়ার সুযোগ নেই। সমাধান আসবে কীভাবে?

রুমিন ফারহানা: রাজনীতিতে আসলে শেষ কথা বলে কিছু নাই। পরিস্থিতি যদি আমরা সে রকম তৈরি করতে পারি, তাহলে এই প্রধানমন্ত্রীই আমাদের আবার আলোচনার জন্য ডাকবেন। আমরা বিশ্বাস করি, পরিস্থিতি সেভাবে তৈরি করতে পারব এবং এটা আমাদের জীবন-মরণের একটা লড়াই। আমরা হয় জিতব, না হয় মরতে হবে। সুতরাং এই আন্দোলনে আসলে পেছনে ফেরার কোনো সুযোগ নেই। এখনো নির্বাচনের ছয়-সাত মাস বাকি। এত আগে থেকে অলআউট আন্দোলনে আমরা যাব না, নির্বাচনের আগে আগেই সেটা দেখতে পাবেন। আমরা বর্তমানে বিভাগ ও জেলাগুলোতে ওয়ার্মআপ কর্মসূচি করছি। মানুষ আমাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত হচ্ছে। এটাই আমরা কয়েক মাস ধরে রাখতে চাই। নির্বাচনের আগেই এর ফলটা দেখবেন।

কালবেলা: এবার দেখাচ্ছে যে, বিদেশি রাষ্ট্রদূতগুলো বিশেষ করে ইউরোপ, ইউএসএ-এর রাষ্ট্রদূতেরা তৎপর। তারা চাচ্ছে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। জাপানের রাষ্ট্রদূতও এ বিষয়ে বলেছেন। এ বিষয়টাকে আপনারা কীভাবে দেখছেন?

রুমিন ফারহানা: বিশ্বে যেই দেশগুলোতে গণতন্ত্র আছে, যেই দেশগুলো মানুষের ভোটের অধিকারে বিশ্বাস করে, বাকস্বাধীনতায় বিশ্বাস করে,তারা বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের পক্ষে রয়েছে। বিরোধীদলের রাজনীতি করার স্পেস থাকতে হবে। মানুষকে তার গণতান্ত্রিক অধিকার চর্চা করার সুযোগ দিতে হবে। যেসব দেশে এসব অধিকার রয়েছে তারা আমাদের পাশে দাঁড়াবে, এই আশা তো আমরা রাখতেই পারি। কিন্তু আমাদের ভরসার জায়গা দেশের মানুষ। মানুষকে যেভাবে গত কয়েক বছর নিষ্পেষণ করা হয়েছে তাতে তারা আর এ সরকারের সঙ্গে নেই। করোনার পর থেকে বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে, ‘বাংলাদেশের মানুষ ভালো নাই’। দেশে দারিদ্র্য ও বৈষম্য চরমভাবে বেড়েছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতি, ডলার সংকট। কৃষক, শ্রমিক, ব্যবসায়ী কেউই ভালো নেই। এই সরকার মানুষকে ক্ষেপিয়ে দিচ্ছে। যেহেতু এই সরকারকে মানুষের কাছে ভোট চাইতে হয় না, এই সরকারকে যেহেতু জবাবদিহিতা করতে হয় না, তাই তারা যাচ্ছেতাই করতে পারে। যা অন্য কোনো নির্বাচিত সরকারের পক্ষে সম্ভব না।

কালবেলা: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্যাংশন নিয়ে কথা হচ্ছে। এর আগে দেশের কয়েকটি আইনশৃংখলা বাহিনীর কিছু সদস্যের ওপর স্যাংশন দেওয়া হয়েছে। এবার বলা হয়েছে, সুষ্ঠু নির্বাচন না হলে বা বাধাপ্রদানকারীদের যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা দেওয়া হবে না। এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কী?

রুমিন ফারহানা: আমি আমার ব্যক্তিগত মত বলি, র‌্যাবের ওপর ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর স্যাংশন এসেছে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্যে মূলত এই স্যাংশন দেওয়া হয়েছে। একটি রিপোর্ট বলছে, ২০১৮ সালে যেখানে বিচারবহির্ভূত হত্যা হয়েছে ৪৬৬টি, ২০১৯ সালে হয়েছে ৩৭৭টি, ২০২০ সালে হয়েছে ১৮৮টি। সেটা স্যাংশনের পরে কমে গিয়ে ১৫টিতে দাঁড়িয়েছে। তাহলে স্যাংশন কাজ করে কি করে না, সেটা তো দেখাই যাচ্ছে। নিকারাগুয়া, নাইজেরিয়ায় স্যাংশন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যারা নির্বাচনে কারচুপিতে সম্পৃক্ত তাদের স্যাংশন দেওয়া হয়েছে। আর বাংলাদেশে নির্বাচনে নয়-ছয় কী?- ‘নির্বাচনের তো বারোটাই বেজে গেছে’। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশে অবাধ,সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে একটি নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। নতুন নীতির আওতায় বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত বাংলাদেশিদের ভিসা দেবে না যুক্তরাষ্ট্র। এর মধ্যে আছে সরকারের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তা, সরকার সমর্থক ও বিরোধী দলের কর্মী, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, বিচার বিভাগ, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য। নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে এমন কাজের মধ্যে আছে ভোট কারচুপি, ভোটারকে ভয় দেখানো, মানুষের সংগঠিত হওয়া ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করার যে অধিকার তাতে সহিংসতার মাধ্যমে বাধাদান। এর বাইরে মানুষের মত প্রকাশে বাধাদানও এর মধ্যে পড়বে। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে যে, এই ভিসা নীতির কথা ৩ মে তারিখেই সরকারকে জানিয়েছে তারা। কিন্তু ২৫ তারিখ মার্কিন প্রশাসন এটি না বলা পর্যন্ত চুপ ছিল সরকার। মজার কথা হলো, ৩ তারিখে এ বিষয়ে জানার পর থেকেই সরকারের আচরণ হয়েছে অভূতপূর্ব। কখনো বলছে যুক্তরাষ্ট্র তাদের ক্ষমতায় দেখতে চায় না, কখনো বলছে স্যাংশন দেওয়া দেশ থেকে কিছু কিনবে না বাংলাদেশ, কখনো প্রত্যাহার করছে ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূতের পুলিশি প্রহরা ও পতাকা ব্যবহার। এতে মনে হচ্ছে, সরকার যথেষ্ট ভীত। আসলে সরকার খুব ভালো জানে দেশে মোটামুটি একটা সুষ্ঠু নির্বাচন হলেও তারা ১৫টার বেশি সিট পাবে না। এই ভিসানীতির পরপরই গাজীপুর সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদ আজমত উল্লাহ হেরে গেলেন সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক একজন ব্যক্তি জাহেদা খাতুনের কাছে। উগান্ডা নিয়ে ফেসবুকে আমরা অনেক ট্রোল করি। বলে রাখি এমন ভিসা নীতি এর আগে হয়েছে কেবল উগান্ডা আর নাইজেরিয়ায়।

এখন বাস্তবতা হলো বাংলাদেশে যারা নির্বাচন নিয়ে কারচুপি করে, তাদের ওপর স্যাংশন আসতেই পারে। হাজার হাজার কোটি টাকা যারা দুর্নীতি করে, তাদের ওপরও স্যাংশন আসতে পারে। এখন আর টাকা লাখে মাপি না, কোটিতেও মাপি না- ‘হাজার কোটি’। কতটা শূন্য বসলে হাজার কোটি টাকা হয়, আমি জানি না আমার কম্পিউটারে বা ক্যালকুলেটরে সেই সংখ্যা আটবে কিনা, তাও আমি জানি না। এরকম টাকা কিছু মানুষের হাতে চলে গেছে। যারা আগে খালি হাতে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরত, তারা আজ কোনো কিছু না করেই হাজার কোটি টাকার মালিক হয়ে গেছে। সুনির্দিষ্টভাবে শিল্প প্রতিমন্ত্রী সিন্ডিকেটের কথা বলেছেন। খোলাখুলিভাবে দায়ী করেছেন খাদ্যমন্ত্রী আর বাণিজ্যমন্ত্রীকে। কিন্তু এই সিন্ডিকেট ভাঙবে কে? তিনি বলেছেন মন্ত্রীদের মধ্যে একটা সিন্ডিকেট আছে, শেয়ার কেলেঙ্কারিতে জড়িতরা এখন মন্ত্রী হয়, দুঃখ হয় সবাই টাকার পিছে ঘুরছে। এসব নিয়ে কথা বলতে গিয়ে আবার বলেছেন সব কথা বলতে গেলে দেখবেন আমার লাশটা রাস্তায় পরে আছে। মন্ত্রী যখন তার লাশ রাস্তায় পরে থাকা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে তখন বোঝা যায় দেশ কোথায় যাচ্ছে। কারো বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। এমন অবস্থায় যদি আন্তর্জাতিক স্যাংশনে দেশের মানুষের উপকার হয়, আমি সেই স্যাংশনের পক্ষে আছি।

কালবেলা: ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নির্বিঘ্নে মানুষের ভোট প্রদান একটি বিষয়। তার সঙ্গে আরও একটি বিষয় সম্প্রতি গুরুত্বপূর্ণ সেটি হলো, সরকারের সঙ্গে যুক্ত নানারকম সুবিধাভোগী গোষ্ঠী। তারা কি চাইবে নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন হোক আর তারা চুরি-দুর্নীতির জন্য বিচারের আওতায় আসুক?

রুমিন ফারহানা: এ জন্য আমাদের যুদ্ধটা অনেক বেশি কঠিন। অনেকেই বলে, ’৯৬ সালে আওয়ামী লীগ আন্দোলন করে ক্ষমতায় আসতে পারছিল, তোমরা পারো না কেন? ’৯৬ সালে একটা গণতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতায় ছিল। ’৯৬ সালে কোনো গোষ্ঠীতন্ত্র তৈরি হয়নি দেশে। বর্তমানে সুবিধাভোগী একটা ব্যবসায়িক গোষ্ঠী, একটা আমলা গোষ্ঠী, একটা প্রশাসন গোষ্ঠী তৈরি হয়েছে। তারা কোনোভাবেই চাইবে না এই সরকার ক্ষমতা থেকে যাক, কারণ তার পিঠের চামড়া বাঁচানোর জন্য। এই সরকার ক্ষমতায় থাকলে সে জবাবদিহিতা ছাড়াই হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করতে পারছে, অনুপার্জিত টাকা ভোগ করতে পারছে। বিদেশে টাকা পাচার করতে পারছে। বিদেশে সেকেন্ড হোম বানাতে পারছে, কোথাও তাকে জবাবদিহি করতে হচ্ছে না। যদি সরকার পরিবর্তন হয়, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়, যদি বাংলাদেশে ন্যায়বিচার ও সুপ্রিম কোর্ট স্বাধীন হয়, তাদের জবাব দিতে হবে। আমি বলছি না সরকারে বিএনপিকে আসতে হবে, সরকারে যেই আসুক; যদি একটা জবাবদিহিতামূলক সরকার ক্ষমতায় আসে, তাহলেই তাদের জবাব দিতে হবে। সেটা তারা কেউ-ই চাইবে না, সুতরাং আমাদের লড়াইটা এখন অনেক কঠিন। আমাদের লড়াই শুধু হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে না, আমাদের লড়াই এই গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধেও। ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত দেশে গণতান্ত্রিক সরকার ছিল। তারা চাইলে কি পারত না, এই সরকার যেভাবে গুলি করে মানুষ মেরে ক্ষমতায় আছে সেভাবে ক্ষমতায় থাকতে? ’৯১ থেকে ’৯৬ সালেও পারত পুলিশকে ব্যবহার করে আওয়ামী লীগকে দমন করতে। করে নাই বা করতে পারে নাই, কারণ সেটা ছিল গণতান্ত্রিক সরকার। এখানেই একটা ফ্যাসিস্ট সরকারের সঙ্গে একটি গণতান্ত্রিক সরকারের পার্থক্য। যে কারণেই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ফ্যাসিস্ট সরকার ৩০ বছর, ৪০ বছর বা জীবদ্দশা পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকে। এটাই হচ্ছে স্বৈরাচারের আরেকটা লক্ষণ।

কালবেলা: বাংলাদেশ স্বাধীনতার ৫১ বছর পার করে ফেলল, আমাদের ভোটাধিকার বা নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে শঙ্কা দূর হলো না। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী হয়নি। ভারতে বা পাকিস্তানেও শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন রয়েছে। আমরা কেন পারিনি?

রুমিন ফারহানা: আমরা পারিনি কারণ আমরা চাইনি শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান তৈরি করতে। দুর্ভাগ্য; আমাদের জন্ম শুরু হয়েছে আওয়ামী লীগের হাত দিয়ে। আওয়ামী লীগের শাসন আমল দিয়ে। প্রথম নির্বাচন ’৭৩-এ হয়, সেখানেও কারচুপিপূর্ণ নির্বাচন হয়। আমার বাবা ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে জয়লাভ করার পর বেসরকারিভাবে তাকে জয়ী ঘোষণার পরদিনই তাকে পরাজিত ঘোষণা করা হলো। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন- ‘গাভী মার্কায়’। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে তাকে ফোন করে বলা হলো-‘ কি অলি আহাদ, আমাকে ছাড়া জিততে পারলা না?’ এই হলো আমাদের নির্বাচনের ইতিহাস। তারপর আমরা দেখলাম সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীতে কাটাছেঁড়া করে পুরো কাঠামোটিকেই শেষ করে ফেলা হলো। একদলীয় শাসন কায়েম করে, গণতন্ত্রের কবর রচনা করা হলো। গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করে দেওয়া হলো। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নষ্ট করে, রাষ্ট্রপতির হাতে বিচারক অপসারণের ক্ষমতা দেওয়া হলো। বাংলাদেশের জন্মের পরেই আওয়ামী লীগ সরকার, ’৭২ থেকে ’৭৫, তারা চেয়েছিল আজীবন তাদের হাতে ক্ষমতাটা রেখে দিতে। বাংলাদেশের ভোটের অধিকার বলেন, বাকস্বাধীনতা বলেন, বিচার বিভাগ বলেন সবকিছু ধ্বংস শুরু হয়েছে সেই জন্মের পর থেকে। পরে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন বাংলাদেশকে অন্য একটা পর্যায়ে নিয়ে যেতে এবং তিনি সফলও হয়েছেন। তিনি অল্প সময়ে বাংলাদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র এনেছেন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এনেছেন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এনেছেন। আজকে উন্নয়নের যে মূল ভিত্তি- রেমিট্যান্স এবং গার্মেন্টস দুটোই তার দিয়ে শুরু হয়েছে। কৃষি তার হাত দিয়ে নতুন একটি জাগরণ লাভ করেছে। উন্নয়নের যে অগ্রযাত্রা সেটা শুরু হয়েছিল জিয়াউর রহমানের হাত ধরে। আমাদের দুর্ভাগ্য তাকে মেরে ফেলা হলো। বাংলাদেশের দুর্ভাগ্য যে, তার শাসন আমল খুব অল্প সময় ছিল। তারপর আবার স্বৈরশাসকের কবলে পড়ে বাংলাদেশ, প্রতিষ্ঠানগুলো তখনও শক্তিশালী হতে পারেনি। তবে এটা না বললেই নয় যে, ২০০৫-০৬ সাল পর্যন্ত এসব প্রতিষ্ঠান (নির্বাচন কমিশন, বিচার বিভাগ) যতটুকু শক্তিশালী ছিল, সেইটুকুর জায়গা আর আমরা রাখতে পারিনি। এটা সম্ভব না। যে সরকার জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে ক্ষমতায় আসেনি, তারা এসব প্রতিষ্ঠান রাখবে কি করে? আপনাকে কিছু গোষ্ঠী তৈরি করতে হবে, যারা আপনাকে ক্ষমতায় রাখতে পারে। আওয়ামী লীগ তাই করেছে।

কালবেলা: বিএনপি যদি ক্ষমতায় যায়, তাহলে কি কি সংস্কার করবে?

রুমিন ফারহানা: আমরা অতীতে আমাদের মতো করে চেষ্টা করেছি। আমাদের সময়ে ’৯০-পরবর্তী যে চারটা নির্বাচন হয়েছে, সেগুলো মোটা দাগে সুষ্ঠু হয়েছে। সে সময়কার নির্বাচন কমিশন কিন্তু আজকের মতো নতজানু ছিল না। সরকারও সেভাবে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেনি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার এসে, তারা তাদের মতো করে প্রশাসনে রদবদল করেছে, নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীনতা দিয়েছে। ফলে চারটা সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হয়েছে। এরপর যখন নির্বাচন ছাড়া সরকার ক্ষমতায় থাকা শুরু করল, তখন সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়েছে। আমাদের ২৭ দফাতে পরিষ্কারভাবে বলেছি- আমরা বিভিন্ন কমিশন করে দিব, নির্বাচন কমিশন, সংবিধান সংস্কার কমিশন, মিডিয়া কমিশন, বিচার বিভাগ কমিশনসহ অনেক কমিশন করব। যারা অভিজ্ঞ রয়েছেন, দলমত নির্বিশেষে সবকিছুর ঊর্ধ্বে উঠে যারা কাজ করতে পারবেন, তাদের দিয়ে আমরা কাজ করাব। আমি মনে করি,পুরো কাঠামো ভেঙেচুরে নতুন করে সাজাতে হবে। এটা ফোকলা হয়ে গেছে, ভেতরে আর কিছু নাই। বাংলাদেশ একটা সার্কাসে পরিণত হয়েছে, সুতরাং এই জায়গা থেকে বাংলাদেশকে আবার তার সঠিক পথে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য সব জায়গাতে কাজ করতে হবে। যেই ক্ষমতায় আসুক, তাদের জন্য এটা অত্যন্ত কঠিন কাজ বলে আমি মনে করি।

কালবেলা: সামনের নির্বাচনে আপনাদের প্রস্তুতি কেমন?

রুমিন ফারহানা: বিএনপি বড় একটি দল এবং নির্বাচনমুখী একটি দল; আমাদের সব সময়ে প্রস্তুতি আছে। যে কোনো আসনে খবর নেন, চার-পাঁচজন যোগ্য প্রার্থী পাবেন। যারা যোগ্য, যারা কাজ করছে, যাদের মানুষ ভোট দিবে। ওয়ার্ড লেভেল পর্যন্ত আমাদের কমিটি গোছনো রয়েছে। সুতরাং কালকে ভোট হলেও আমাদের সমস্যা নেই। কিন্তু ভোটের পরিবেশটা ঠিক থাকতে হবে। হাত-পা বেঁধে সাঁতার কাটতে দিলে তো আর সাঁতার কাটা যায় না।

কালবেলা: আপনারা সিটি করপোরেশন নির্বাচনগুলোয় অংশ নিলেন না কেন?

রুমিন ফারহানা: আমরা পরিষ্কারভাবে বলেছি, এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন করব না। এই নির্বাচন একটা প্রহসন। ২০১৪ সালে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির পাঁচটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জয় লাভ করে। তখনো আমাদের কাজ করতে দেয়নি। তারা প্যানেল মেয়র দিয়ে পাঁচ বছর পার করেছে। কয়েকটাতে সুষ্ঠু নির্বাচন দিয়ে তারা ফাঁদ পেতেছিল, যাতে ১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করে। কিন্তু বিএনপি তাদের পাতা ফাঁদে পা দেয়নি। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনগুলোয় আপনারা দেখেছেন, তারা কি করেছে। তারা বলেছে, আওয়ামী লীগকে ভোট না দিলে এলাকায় থাকতে দিবে না। একে৪৭ নিয়ে ভোটের মাঠে থাকবে তারা। ভোট না দিলে কবরস্থানে জায়গা দিবে না, কবর দিতে দিবে না। হত্যার হুমকি থেকে শুরু করে কবরের হুমকি সব দিয়েছে তারা। সুতরাং এই সরকার কি কোনো সরকার নাকি? একটি অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় বসে আছে।

পত্রিকায় এসেছে, ‘নির্বাচন ছাড়া বর্তমান জাতীয় সংসদের সদস্যদের মেয়াদ বাড়ানোর দাবি করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক’। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে একসময় প্রাচ্যের অক্সফোর্ড বলে দাবি করা হতো, যদিও বর্তমানে এটা ১৪শ র‌্যাংকের তালিকায়ও আসে না। কিন্তু এক সময় এটা ছিল দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে একটি ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ওবায়দুল কাদেরের চেয়ে খারাপ ভাষায় কথা বলেন। মূর্খের মতো কথা বলেন। করোনা গেছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলছে, সেটা দেখিয়ে আপনি আরও পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকেন- এমন পরামর্শ কেউ দিতে পারে যদি রাষ্ট্র পরিচালনা,গণতন্ত্র, জনপ্রতিনিধিত্ব নিয়ে তার ন্যূনতম ধারণা থাকে? চারপাশে এই নগ্ন চাটুকারিতার ছড়াছড়ি কিন্তু আগে ছিল না, একটা লজ্জা ছিল। কথার আব্রু ছিল। এখন টকশো দেখবেন- একজন আওয়ামী লীগ বসে, একজন বিএনপি বসে আর একজন দালাল বসে। সেই দালালটার এতটুকু লজ্জা নাই, আওয়ামী লীগের যিনি আসেন, তার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে তিনি কথা বলেন। আওয়ামী লীগের নেতা যা বলে, তার চেয়ে তিনগুণ বেশি দালালি তিনি করেন। দালালটা হয় সাংবাদিক হয়, নয়তো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়। দালালটার ন্যূনতম লজ্জাও নাই। তারা যদি নগ্ন হতে পারে, তাহলে আমার জবাবটাও নগ্ন ভাষায় দিতে হবে।

সমাজটা আসলে পচে গেছে। সমাজ বলতে কিছু নাই। যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, তার হয়তো স্বপ্ন সে ডিন হবে। ছাত্রলীগকে তোয়াজ করে ভিসি হতে চান। এই জাতের লোক যখন ভিসি হবেন, তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের কি আর মান থাকবে? ১৪শ কেন, ১৪ হাজারের মধ্যেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আসবে না।

কালবেলা: এ পরিস্থিতিতে আপনার পরামর্শ কি থাকবে?

রুমিন ফারহানা: এটা কোনো সরকার না, এই সরকারের প্রতি পরামর্শ দেওয়ার কিছু নাই। এই সরকারে কিছু ব্যবসায়ী আর আমলা মিলে ক্ষমতা দখল করে রেখেছে। এদের কাছে পরামর্শ বলে কিছু নাই। তবে, মানুষকে আমার বলবার আছে- আশাহত হওয়ার কিছু নেই, আমাদের রক্তে লড়াই, আমরা লড়াই করে সব অধিকার ফিরিয়ে এনেছি। ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে গণতন্ত্রের জন্যে যে লড়াই, দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে আমাদের সেই লড়াই জিততে হয়েছে। ’৮৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টির সঙ্গে নির্বাচনে গিয়েছিল। বৈধতা দিয়েছিল স্বৈরশাসককে। ওয়ান ইলেভেনের সময়ও আওয়ামী লীগ বলেছিল- আমাদের আন্দোলনের ফসল। এখনো পর্যন্ত ওয়ান ইলেভেনের কারও বিচার হয়নি। এখনো পর্যন্ত তাদের কোনো জবাবদিহিতার আওতায় আনা হয়নি। কেন আনবে? কারণ ওয়ান ইলেভেন তো তাদের আন্দোলনের ফসল। সেই ফসল তারা এখনো ভোগ করছে। ওয়ান ইলেভেনের সেই ষড়যন্ত্রের ফলে তারা এখনো ক্ষমতায় টিকে আছে। সুতরাং লড়াইয়ের মধ্যে আমরা আছি, এই লড়াইয়ের মধ্য দিয়েই আমরা জিতব। আমি বলি না, আগামীতে আমরা ক্ষমতায় আসব। আমি বলি, আগামীতে একটি জাবাবদিহিতামূলক সরকার ক্ষমতায় আসবে। আগামীতে মানুষের ভোটে নির্বাচিত সরকার আসবে। তবে, এটা করা খুবই কঠিন হবে। নির্বাচিত হয়ে যেই ক্ষমতায় আসবে, তাকে সব জায়গায় হাত দিতে হবে। ঢাবি শিক্ষকের মতো লোক থেকে শুরু করে একদম পিএসসি পর্যন্ত। সব জায়গাতেই তাকে হাত দিতে হবে। বিচার বিভাগ থেকে শুরু করে একদম জাতীয় সংসদ পর্যন্ত হাত দিতে হবে। সংবিধান সংস্কার করতে হবে। অতএব সহজ কাজ এটা নয়, খুবই কঠিন কাজ। যে ক্ষমতায় আসবে যদি না করতে পারে তাহলে, আন্দোলনের মাধ্যমে আবারও তার পরিবর্তন আসবে। লড়াই চালিয়ে যেতে হবে, লড়াইয়ের কোনো বিকল্প নাই।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

‘তারেক রহমান আওয়ামী ফ্যসিবাদ বিরোধী গণঅভ্যুত্থানের সফল রূপকার’

বাঙলা কলেজ সাংবাদিক সমিতির নতুন কমিটি ঘোষণা 

চীন সফর শেষে দেশে ফিরেছে বিএনপির প্রতিনিধি দল

গুলি করে ত্রাণকেন্দ্রের ভিড় নিয়ন্ত্রণ করে ইসরায়েলি সেনারা

কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কঠোর বার্তা এনবিআরের 

ভাঙা হয়েছে বিজয় সরণির ‘মৃত্যুঞ্জয়ী প্রাঙ্গণ’, হবে জুলাই স্মরণে ‘গণমিনার’

মধ্যরাতে ছাত্রীর প্রবেশপত্র পৌঁছে দিয়ে প্রসংশায় ভাসছেন শিক্ষক

আন্দোলনে অচল এনবিআর, বন্ধ হচ্ছে আমদানি-রপ্তানি

‘নতুন বাংলাদেশ দিবস’ নিয়ে আপত্তি, পুনর্বিবেচনা করছে সরকার

ইরানে হামলায় ইসরায়েলকে রুখল না সিরিয়া, কেন এই নীরবতা

১০

হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে বিমান

১১

জন্মদিনে বার্সার ১০ নম্বর জার্সি পাবেন ইয়ামাল

১২

দেড়শ বছরের পুরোনো পিতলের রথযাত্রা উদযাপিত

১৩

ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধে জিতল কে?

১৪

রথযাত্রায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে আহত ৮

১৫

বাংলাদেশ থেকে ৩ পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ করল ভারত

১৬

‘ঢাবি আমার সনদ বাতিল করেছে অথচ আমি কোনো পরীক্ষাই দেইনি’

১৭

তাইজুলের স্বপ্ন সাকিবকে ছাড়িয়ে যাওয়ার

১৮

হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের কর্মসূচি ঘোষণা

১৯

গাজায় ইসরায়েল সমর্থিত ত্রাণকেন্দ্রে ময়দার বস্তায় মিলল মাদক

২০
X